শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
রাজ্যের ৫৭ টি ল্যাবে করোনা পরীক্ষা করা হলেও কোথায় কোথায় কোন কোন ল্যাবে পরীক্ষা করা হয় তা জানেন না অনেকেই। আর সেই সুযোগে বিভিন্ন ভুয়ো সংস্থা ফাঁদ পেতে প্রতারণা করছে মানুষকে, যার সঙ্গে যুক্ত থাকছেন স্বাস্থ্যকর্মীরাও। আর এমনই প্রতারণার ফাঁদে পড়ে করোনা পজিটিভ হয়েও নেগেটিভ রিপোর্ট পেয়ে চিকিৎসা না করানোয় মৃত্যু হল নেতাজিনগরের বিমল সিনহার।
ঘটনার তদন্তে নেমে এসএসকেএম হাসপাতালের ল্যাবরেটরির চুক্তিভিত্তিক কর্মী বিশ্বজিৎ সিকদার, আরজি কর হাসপাতালের ল্যাবের চুক্তিভিত্তিক কর্মী ইন্দ্রজিৎ সিকদার এবং অনীক পায়রা নামে তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
নেতাজিনগর থানা সূত্রে খবর, গত ৩০ জুলাই নেতাজিনগর ২৩ বাই ২১ নাকতলা রোডের বাসিন্দা সলমা সিনহা ও তাঁর মেয়ে সীমা একটি অভিযোগ দায়ের করেন। সলমা পুলিশকে জানান, তাঁর স্বামী বিমল সিনহা কিছুদিন আগে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর শরীরে করোনার উপসর্গ দেখা দিতে থাকে। গত ২৪ জুলাই অনলাইন সার্চ করে একটি ওয়েবসাইটের খোঁজ পেয়েছিলেন তিনি। সেই সংস্থার সঙ্গে তারা ফোনে যোগাযোগ করেন।
তারা জানান, অনলাইন ট্রানজাকশন করে ৮ হাজার টাকা দেন ওই সংস্থাকে। সংস্থার তরফে জানানো হয়, বাড়িতে গিয়ে লালারসের নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যাওয়া হবে। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে লগ ইন করলে রিপোর্ট পাওয়া যাবে। সেইমত আট হাজার টাকা অগ্রিম অনলাইন ট্রান্সফার করা হয়।
আরও পড়ুনঃ রাতভর ৮ হাসপাতালে ঘুরে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু বাঘা যতীনের যুবতীর
২৫ জুলাই বাড়িতে লোক যায়। লালারস ও রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে। জানিয়ে দেওয়া হয়, ২৭ জুলাই রিপোর্ট পাওয়া যাবে। তারা সকলেই নির্দিষ্ট দিনে অনলাইনে দেখেছিলেন বিমলবাবুর রিপোর্ট! সেখানে পরিষ্কার লেখা ছিল করোনা নেগেটিভ। কিন্তু পুরোটাই যে ভুয়ো, তা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি বিমলবাবুর পরিবার।
এদিকে দিনে দিনে বিমল বাবুর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। শরীর আরও খারাপের সঙ্গে শুরু হয় তীব্র শ্বাসকষ্ট, ধুম জ্বর। তড়িঘড়ি তাঁকে এম আর বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষা করে দেখা যায় তিনি পজিটিভ এবং আশঙ্কাজনক । তাঁকে দ্রুত ভর্তি করা হয়।৩০ জুলাই অর্থাৎ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় করোনায় তাঁর মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুনঃ প্রথম সংক্রমণের ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডেই সংক্রামিত ৩৬৪, মৃত্যু ৫! চূড়ান্ত উদ্বেগে পুরসভা
এরপর সেই সংস্থার ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেন বিমলবাবুর স্ত্রী সলমা ও মেয়ে সীমা। হাজরার একটি নামকরা ল্যাবে বিমলবাবুর কোভিড টেস্ট করানো হয়েছে বলে এই সংস্থার দাবি ছিল । হাজরার সেই ল্যাবে গিয়ে তারা জানতে চাইলে ল্যাব জানায়, তাঁরা এই নামের কোনোও ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষা করেনি। এরপরই তারা নেতাজিনগর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তারপরেই ধরা পড়ে তিন অভিযুক্ত।
জেরায় ধৃতরা স্বীকার করেছেন, একটি ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল যিনি যে এলাকার বাসিন্দা তাঁর নিকটবর্তী কোনও বড় বেসরকারি ল্যাব থেকে টেস্ট করিয়ে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অনলাইনে রিপোর্ট দেওয়া হবে। ওয়েবসাইটেই ক্লিক করলে এই রিপোর্ট দেখা যাবে।
অভিযুক্তদের মধ্যে একজন আইসিএমআরের স্ট্যাম্প দেওয়া একটি ফর্ম চুরি করে সেই ফর্মই জেরক্স করে রমরমিয়ে প্রতারণা চক্র চালিয়ে যাচ্ছিল। হাসপাতালে যুক্ত থাকার কারণে এই ফর্ম পেতে অসুবিধা হয়নি তাদের। বিভিন্ন হাসপাতালে ঘোরাফেরা করে রোগী এবং তাঁদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তারা কম খরচে কোভিড টেস্ট করিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিত।
কোনও কোনও রোগী এবং রোগীর পরিবার তাদের কথায় রাজি হয়ে যেত। আর তারপরই অনলাইনে টাকা নিয়ে ইচ্ছামতো কাউকে নেগেটিভ, আবার কাউকে পজিটিভ রিপোর্ট দিত ওই ধৃতরা। এভাবে তারা কতজন অসহায় রোগী এবং তাঁদের পরিজনদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে , এই প্রতারণা চক্রের সঙ্গে আরও কেউ জড়িত রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584