দলের ভাঙন নিয়ে পিকে’কে সরাসরি জিজ্ঞাসা মুখ্যমন্ত্রীর, প্রশ্নের মুখে আইপ্যাক টিম

0
357

শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ

যে রাজনৈতিক গুরু প্রশান্ত কিশোরকে এনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভেবেছিলেন, তার দলে আরও সুশৃঙ্খলতা আসবে, ক্রমশ তার উল্টো ফল ভুগতে হচ্ছে তৃণমূলকে। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে নীচুতলা কর্মীদের সকলেরই দাবি, তারা তৃণমূলের সঙ্গে আবেগের কারণে যুক্ত হয়েছিলেন। সেখানে দলের সমস্ত সিদ্ধান্তের কর্পোরেট মানসিকতা পছন্দ হচ্ছে না অনেকেরই।

mamata banerjee | newsfront.co
কোলাজ চিত্র

তাই লোকসভার পর এবার বিধানসভা নির্বাচনের আগে ও দলের অবস্থান নিয়ে সরাসরি রাজনৈতিক গুরু প্রশান্ত কিশোরের বিরুদ্ধেই প্রশ্ন তুললেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

প্রসঙ্গত, যেহেতু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একা লড়াই করে তৃণমূল দল তৈরি করেছিলেন, সেই কারণে প্রশাসনের দায়িত্বের পর দলীয় কাজকর্ম সব দিক দেখা সম্ভব হচ্ছিল না। সেই কারণেই দলের সমস্ত কিছু ম্যানেজ করার জন্য ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরামর্শে প্রশান্ত কিশোরকে নিয়ে আসা হয়। তার জন্য খরচ হয়েছে ৪০০ কোটি টাকারও বেশি।

আরও পড়ুনঃ সুবিচারের আশায় হাথরাসের নির্যাতিতার পরিবার

কিন্তু আবেগের রাজনৈতিক দলে কর্পোরেট মানসিকতার পছন্দ হয়নি অনেক নেতারই। একইসঙ্গে মুকুল রায় থেকে শুভেন্দু অধিকারীর মত অনেক দলত্যাগী নেতার অভিযোগ, তৃণমূলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সহ আরো দুই-একজন ক্যাবিনেট মন্ত্রী যতটা গুরত্ব পান, তারা জান-প্রাণ লাগিয়ে সাংগঠনিক কাজ করলেও সেই সম্মান পান না। সেই কারণেই সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন অনেকেই। আর চলতি মাসে দলে দলে বিজেপিতে বিধায়কদের যোগদান সেই ঘটনারই ফলাফল।

বেসুরো হয়ে যাওয়া বিধায়কদের বাড়িতে গিয়েও তাদের বোঝাতে সমর্থ হচ্ছেন না প্রশান্ত কিশোর এবং তার আই প্যাক টিম। নেতাদের দাবি, তাদের প্রচারের রণকৌশল কে গুরুত্ব না দিয়ে গুরুত্ব পাচ্ছে প্রশান্ত কিশোরের প্রযুক্তিগত প্রচার কৌশল, যা পছন্দ হচ্ছেনা অনেকেরই। আর এর ফলে নিজেদের জনসমর্থন খোয়াতে গররাজি ওই সমস্ত নেতারা। শুক্রবার কালীঘাটের বাড়িতে কোর কমিটির বৈঠকে এবার সরাসরি ভোটকুশলী পিকে‌র সঙ্গেও কথাবার্তা হয় তৃণমূল সুপ্রিমোর৷

আরও পড়ুনঃ ‘১০ বছরে কোনও উন্নয়ন হয়নি, প্রাধান্য পেয়েছে ব্যক্তিস্বার্থ’, দল ছাড়ার সময় তৃণমূল কর্মীদের চিঠি শুভেন্দুর!

এই ঘরের ভাঙন নিয়ে সরাসরি তৃণমূল নেত্রীর প্রশ্নের মুখে পড়েন প্রশান্ত কিশোর৷ সূত্রের খবর, এদিন কালীঘাটের কোর কমিটির বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পিকে‌র কাছে জানতে চান এই পরিস্থিতির কারণ কী?‌ সমস্যাটা ঠিক কোথায়?‌ তিনি জিজ্ঞাসা করেন, ‘কেন এইসব হচ্ছে?‌ আপনার কী মনে হয়!’ উত্তরে প্রশান্ত কিশোর নাকি বলেছেন, ‘বিজেপি বিভিন্নভাবে এজেন্সির ভয় দেখাচ্ছে। নিজেদের বাঁচাতে অনেকে বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন‌‌‌‌‌। অনেককে নানাবিধ প্রলোভন দেওয়া হচ্ছে।’ দলনেত্রী বলেন ‘দেখুন, বাকিরা যাঁরা আছেন, তাঁদের বোঝান৷ যেটা হচ্ছে ঠিক হচ্ছে না।’

দলত্যাগী বিক্ষুব্ধ বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত বলেন, ‘একটা কর্পোরেট সংস্থা বলে দিচ্ছে কী করব৷ এভাবে কাজ করা যায় না৷ আইপ্যাকের ছেলেরা এসে বলছে, এটা করুন, এটা করবেন না। ভোটের কথা আপনাকে চিন্তা করতে হবে না৷ ওটা আমাদের কাজ৷ জিতিয়ে আনার জন্য তো আমরা টাকা পেয়েছি৷ এভাবে রাজনীতি করা যায় না।’

আরও পড়ুনঃ মৃত সন্তানের অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত বাবা-মায়ের, নবজীবন পাঁচ নাবালকের

যদিও দলের কর্মীরা সম্পদ বলে উন্নয়নকে হাতিয়ার করে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে কর্মীদের ঝাঁপিয়ে পড়তে বলেছেন মমতা। কিন্তু সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে বিজেপির রাজনৈতিক আক্রমণের মুখে স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক গুরু প্রশান্ত কিশোরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেল। এখন পর্যন্ত তাকে সম্পূর্ণ বিশ্বাস না করলেও ভাঙনের তালিকা লম্বা হলে কিছু একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন তৃণমূল সুপ্রিমো, এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here