শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
একটা সময়ে দুর্গাপুজোর মণ্ডপে বিপুল জনসংখ্যার প্রবেশকেই সেই পুজোর জনপ্রিয়তার মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করা হত। কিন্ত করোনা আবহে সমস্ত হিসেবটাই যেন পালটে গিয়েছে। মণ্ডপে ২৫ মিটার দূরে বেঁধে দেওয়া হয়েছে দর্শকদের। আর এই পরিস্থিতিতে প্রত্যেক সাধারণ মানুষের কাছে যাতে মা দুর্গাকে পৌঁছে দেওয়া যায়, তার জন্য ভার্চুয়াল মাধ্যম ও ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে দুর্গাদর্শনের জন্য বিশেষ আলাদা পরিকল্পনা করছে শহরের প্রত্যেক দুর্গাপুজো কমিটি।
ভিড়ই কলকাতার পুজোয় বরাবরের ট্রেন্ড। থিমের চমকে ভিড় টেনেই বড়ো হয়েছে শহরের একাধিক পুজো। কোভিডের দাপটে সবই উল্টো-পুরাণ। এবার ভিড় টেনে নয়, বরং ভিড় কমিয়ে সেরার শিরোপা পেতে চাইছেন পুজো উদ্যোক্তারা। আর সেই প্রতিযোগিতায় নামতে গিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া, ভার্চুয়াল মাধ্যম, এলইডি টিভি লাগানো ভ্রাম্যমাণ গাড়ি ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছেন।
আরও পড়ুনঃ নিম্নচাপের জেরে সপ্তমী থেকে রাজ্যে তুমুল বৃষ্টির পূর্বাভাস
প্রত্যেক বার মণ্ডপে ভিড় সামলাতে বিপুল পরিমাণ স্বেচ্ছাসেবীর প্রয়োজন হয়। কিন্তু চলতি বছরে যেহেতু মণ্ডপে ভিড় সামলানোর সমস্যা নেই, তাই এই দলকেই নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়া, ফেসবুক পেজ থেকে হোয়্যাটসঅ্যাপে নিজেদের পুজোর প্রত্যেক মূহুর্তের আপডেট পোস্ট করার কাজে লাগানোর জন্য ব্যবহার করা হবে। শুধু তাই নয়, বিশাল বিশাল এলইডি স্ত্রিন সহ শহরের পথে নামছে বেশ কিছু গাড়িও। যাতায়াতে যাদের সমস্যা রয়েছে বা বিভিন্ন সমস্যার কারণে যারা মণ্ডপে আসতে পারছেন না, তাদের জন্য ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে ভার্চুয়াল প্রতিমা দর্শনের ব্যবস্থা করেছেন উদ্যোক্তারা।
যোধপুর পার্ক ৯৫ পল্লির শহরের প্রথম সারির পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম। সশরীরে মণ্ডপ, প্রতিমা দর্শনে তেমন কোনও বাধা থাকছে না এখানে। তবে থাকছে স্বাস্থ্যবিধির কড়া শাসন। ভিড় কমাতে পাড়ায় পাড়ায় ভ্রাম্যমাণ গড়িতে ভার্চুয়াল প্রতিমা দর্শনের ব্যবস্থা করেছেন উদ্যোক্তারা।
আরও পড়ুনঃ পুজো গাইড ম্যাপের উদ্বোধন ফালাকাটায়
পুজো কমিটির কর্মকর্তা তথা কলকাতা পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের সদস্য রতন দে’র কথায়, ‘প্রতিমা দর্শনে কেউ আসতে চাইলে তো বাধা দিতে পারি না। তবে, যতটা সম্ভব ভিড় এড়ানোই আমাদের লক্ষ্য। এর জন্য বেশ কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ এলইডি টিভি লাগানো গাড়ি কেনা হচ্ছে। সেই টিভিতে দেখানো হবে পুজোর খুঁটিনাটি। সকাল থেকে বিকেল শহরজুড়ে ঘুরবে গাড়ি। ফলে মণ্ডপে না আসলেও চিন্তা নেই। বাড়িতে বসেই দেখা যাবে পুজো।’
আরও পড়ুনঃ গড়বেতায় বন্ধ পুজো মেলা, সরকারি অনুদানের মুখাপেক্ষী ব্যবসায়ীরা
ভিড় নিয়ন্ত্রণে অগ্রাধিকার দিচ্ছে উত্তর কলকাতার কাশী বোস লেন পুজো কমিটিও। মণ্ডপে প্রবেশ-প্রস্থানে থাকছে একটিই পথ। নির্দিষ্ট দূরত্ব মেনে মণ্ডপে ঢুকবেন দর্শকরা। ছবি তোলার সুযোগ নাও মিলতে পারে। থাকবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার। ঘরে বসে প্যান্ডেল, প্রতিমা দর্শনেরও ব্যবস্থা থাকছে। ক্লাবের ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজে লাইভ পুজো দেখতে পারবেন দর্শকরা। কলাবউ স্নান, সন্ধিপুজো, সন্ধ্যা আরতি অথবা দশমীর বরণ—সবই দেখা যাবে। পুজো কমিটির তরফে সোমেন দত্ত বলেন, ‘আগে থেকেই বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতে দিয়ে দেওয়া হবে প্রত্যেকটি লিংক।
সেই লিংকের মাধ্যমে মণ্ডপ থেকে প্রতিমা দর্শন করা যাবে এক ক্লিকেই। থাকছে ইউটিউব চ্যানেলে।’ ঠিক যে পদ্ধতিতে ঠাকুর দেখা যাবে এবার সুরুচি সঙ্ঘেও। বেলেঘাটা ৩৩ পল্লিও এবার আর ভিড় টানার প্রতিযোগিতায় নেই। জোর দেওয়া হচ্ছে ভার্চুয়াল মাধ্যমে । তা সত্ত্বেও যাঁরা আসবেন তাঁদের মন্ডপে ঢোকা এবং বেরোনোর সময় স্যানিটাইজার গেট পেরিয়ে তবেই ঢুকতে হবে।
আরও পড়ুনঃ ফের শারীরিক অবস্থার অবনতি বর্ষীয়ান অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের
পুজো কমিটির তরফে সুশান্ত সাহা বলেন, ‘মণ্ডপে দর্শনার্থীদের আসা বন্ধ করা সম্ভব নয়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে দূরবর্তী অঞ্চল থেকে দর্শনার্থীরা আসতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তাই অনলাইনে পুজো দেখানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আগে জীবন, পরে উৎসব-যাপন।’
মোদ্দা কথা হল, ভিড় কমিয়ে কে কত বেশি প্যাণ্ডেল, প্রতিমাকে ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে পারে, সেটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। অন্তত দুগ্গা…দুগ্গা…বলে তো পেরিয়ে যাক ‘অভিশপ্ত’ ২০২০। তারপর আগামী বছরে ভাবা যাবে ফের নতুন পরিকল্পনা।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584