ঈপ্সিতা নায়ক
হাতের পাঁচ আঙুলের মত সব মানুষ, তাদের ধরণ-ধারণ, পছন্দ-অপছন্দ সমান হয় না। কিন্তু অনেকক্ষেত্রেই তা আমাদের চিরাচরিত শহুরে আদব কায়দার থেকে ভিন্ন হলেই তা আমরা ‘অদ্ভুত’এর আওতায় ফেলে দিই। পরিবার-পরিজন-বন্ধুবান্ধব-সহকর্মী আমাদের আশেপাশে থাকা মানুষটাকে বোঝার চেষ্টা না করেই তাকে নিয়ে বিচার করতে আরম্ভ করি।
ঠিক যেমন কোনো ইন্ট্রোভার্ট মানুষ যাঁরা নিজেদের সোশ্যালাইজ করতে ততটা পছন্দ করেন না তাদের প্রথমেই অসামাজিক বা সমাজবিরোধী ইত্যাদি খেতাবে ভূষিত করে দেয় সমাজের বাকিরা, কোনোরকম বিবেচনার আগেই। তাই আমাদের সকলেরই দায়িত্ব ইন্ট্রোভার্ট-এর লক্ষণ সম্পর্কে অবগত হওয়া, তাদেরকেও বোঝা।
১. অন্যদের সাথে বা কর্মক্ষত্রে বহুক্ষণ সময় অতিবাহিত করার পর তারা ক্লান্ত হয়ে পড়ে, তারপর বিশ্রাম নেওয়ার মধ্যেই তাঁরা পছন্দ করেন। এভাবেই তাঁরা তাঁদের ফিজিক্যাল এনার্জি বজায় রাখতে ও রিগেইন করতে চান।
২. নিজেদের সাথে সময় কাটাতে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন তাঁরা। বন্ধুর সংখ্যা নিতান্তই সীমিত। রি-ইউনিয়ন বা গেট টুগেদারে এঁদের তেমন একটা দেখতে পাওয়া যায় না। অকারণ আড্ডা এঁদের পোষায় না। তবে পছন্দের বিষয়ে কথা বলতে দিলে এঁরা ঘন্টার পর ঘন্টা বক্তৃতা দিয়ে যেতে পারেন।
৩. নিজের আবেগ-অনুভূতি প্রকাশের ক্ষেত্রে এঁদের বিস্তর সংকোচ। শুধু তাই নয়, নিজের মনের ভিতর এঁদের প্রতিনিয়ত কিছু না কিছু চলতে থাকে যা তাঁরা চট করে কাউকে বলেন না এবং বলার আগে বহুবার ভাবেন। অনেকসময় এমনও হয় কাউকে কিছু বলার আগে সেই পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তর চিন্তাভাবনা করেন, কি বলবেন সেটা সাজিয়ে রাখেন। এদের অনেক সময়ই নিজের সাথে কথা বলতে দেখা যায় ।
৪.কথা বলার চেয়ে শুনতে বেশি পছন্দ করেন। এঁরা বেশ ভালো মানের শ্রোতা। ভালো পর্যবেক্ষক হয়ে থাকেন।
৫. এঁদের পছন্দের মানুষের সংখ্যা অনেক সময় তুলনামূলকভাবে কম হয়। অন্তর্মুখী স্বভাবের জন্য অনেকেই অহংকারী ভেবে বসতে পারে। আর এই বিষয়টি তাদেরকে আরো সমস্যার মধ্যে ফেলে দেয়।
৬. চেনা পরিচিতদের মাঝে থেকেও এঁনারা একা অনুভব করেন। স্যোশাল ইভেন্ট বা গ্রুপ অ্যাক্টিভিটি এসবের মাঝে থাকতে তাঁরা খুব একটা পছন্দ করেন না, ভিড়ের মধ্যে থেকেও তাঁরা একা।
৭.মানুষের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে অস্বস্তি বোধ করেন।
৮.ঋণ নিতে কুন্ঠিত বোধ করেন। একান্ত বাধ্য হয়ে নিলেও যতটা দ্রুত সম্ভব পরিশোধের ব্যবস্থা করেন। উদ্দেশ্য – মানুষের সাথে যোগাযোগ কম রাখা।
৯.কারো দৃষ্টি আকর্ষণ করতে আগ্রহী নন। স্পটলাইট থেকে সর্বোচ্চ দূরত্ব বজায় রাখেন।
১০.এঁদের রাগের তুলনায় অভিমানের মাত্রাটা একটু বেশি-ই হয়ে থাকে।
১১.খুব কাছের মানুষ বাদে এঁদের বিশেষ দক্ষতা বা দুর্বলতাগুলো সম্পর্কেও তেমন কেউ জানে না।
১২.মানুষের অঙ্গভঙ্গি বা বডি ল্যাংগুয়েজ সাধারণত এক্সট্রোভার্টদের তুলনায় বেশি বিশ্লেষণের ক্ষমতা রাখেন।
১৩.অন্যের ব্যক্তিগত বিষয়ে কৌতূহল কম থাকে, বা থাকলেও সেভাবে প্রকাশ করেন না।
আরও পড়ুনঃ দশ মিনিটে ডিটক্সিফিকেশন- প্রাচীন এই আয়ুর্বেদিক পদ্ধতি আপনাকে করবে রোগমুক্ত
১৪.এঁদের নিজস্ব কল্পনার জগৎ থাকে। আর তা আপনার ধারণার চেয়েও বহুদূর বিস্তৃত।
১৫.অতিথিরা বেশিরভাগ সময় বাড়িতে এঁদের উপস্থিতি টের পান না। এঁরা মূলত শান্ত স্বভাবের এবং চুপচাপ হয়, কিন্তু তার মানে এটা কখনোই নয় যে তাঁরা লাজুক বা কথা বলতে ভয় পান, হয়তো চান না।
১৬.খুব পরিচিত কিছু মানুষ ব্যতিত কারো মেসেজের রিপ্লাই দিতে তুলনামূলকভাবে বেশি সময় নেন। এঁদের অনেকেই আবার বেশ গুছিয়ে কথা বলতে বা লিখতে সক্ষম।
১৭. ফোনের রিং শুনে আসতে আসতে লাইন কেটে গেলে এঁরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। অর্থাৎ যত কম ইন্টার্যা কশন তত তাদের জন্য ভালো।
আমাদের মনে রাখা উচিত চুপচাপ, শান্ত থাকার অর্থ লাজুক নয়। আর একা থাকা মানেই নিঃসঙ্গ নয়। এগুলি ইন্ট্রোভার্টদের ব্যক্তিগত পছন্দ। তাঁরা এতেই কম্ফোর্টেবল। তাই তাঁদের বাকিদের মত হতে বলার উপদেশ দেওয়াও অর্থহীন। তাঁদেরকে তাঁদের মত করেই অ্যাক্সেপ্ট করাই বেস্ট।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584