শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
লকডাউন বিভিন্ন মানুষকেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে সমস্যায় জর্জরিত হতে হচ্ছে। কিন্তু কিছু মানুষ পড়ে গিয়েছেন একেবারে জীবন-মরণ সমস্যায়। পরিস্থিতি এতটাই শোচনীয় যে, করোনা সংক্রমণে মৃত্যু না হলেও স্রেফ জীবনদায়ী ওষুধের অভাবে তাদের মৃত্যুর সম্ভাবনা প্রত্যেকদিন বাড়ছে।

এদের মধ্যে যেমন রয়েছেন ডায়াবেটিস রোগী, তেমনই আছেন প্রেশার, হাঁপানি, হৃদরোগী, অনিদ্রার রোগীরাও। লকডাউনের গেরোয় সবচেয়ে বেশি মরণ-বাঁচন পরিস্থিতির মুখে দাঁড়িয়ে রাজ্যের লক্ষ লক্ষ ডায়াবেটিস রোগী। রাজ্যে এই ধরনের রোগীর সংখ্যাই বেশি।
আরও পড়ুনঃ সাংবাদিক সম্মেলন শেষে রেশন দোকানে সারপ্রাইজ ভিজিটে মুখ্যমন্ত্রী
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, এ রাজ্যের ৫-৮ শতাংশ মানুষই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ৷ কলকাতা ও হাওড়ায় ডায়াবেটিস আক্রান্ত প্রায় ১২-১৫ শতাংশ। মাসে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার ইনসুলিন বিক্রি হয় এ রাজ্যে৷ অনেকেই কন্টেনার পাম্পের মাধ্যমে ইনসুলিন নেন ৷ ৩ দিন অন্তর এই পাম্প পাল্টাতে হয়। ডায়াবেটিস রোগীদের সুগার গ্লকোমিটারও প্রয়োজন।
বাজার থেকে আচমকাই সম্পূর্ণ উধাও হয়ে গিয়েছে ইনসুলিন। মিলছে না কন্টেনার পাম্প থেকে সুগার গ্লুকোমিটারও। চিকিৎসকরা বলছেন, টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসে ইনসুলিন না নেওয়ার অর্থ মৃত্যু। ওষুধ না পাওয়ায় জীবন সংশয় হবে না তো? আপাতত আশঙ্কাতেই দিন কাটাচ্ছেন লক্ষ লক্ষ ডায়াবেটিক রোগী ও তাঁদের পরিবার। দিনে ৩ বার ইনসুলিন নিতে হয় খোদ খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককেও। কিন্তু বাজারে এখন তা অমিল হওয়ায় চিন্তা বেড়েছে তাঁরও। তার কথায়, “আমি যে ধরণের ইনসুলিন ব্যবহার করি তা সাধারণত রাজস্থান, মহারাষ্ট্র থেকে আসে। কিন্তু এখন বোধহয় পরিবহণের সমস্যার জন্যে আসতে পারছে না ইনসুলিন।” তবে তিনি আশা রাখছেন, সমস্যার সমাধান হবেই।
একই পরিস্থিতি উচ্চ বা নিম্ন রক্তচাপ, হাঁপানি, হৃদরোগী, অনিদ্রার রোগীদের। কাঁচামালের আকালে ৬০ থেকে ১৯০ শতাংশ দাম বেড়েছে হাঁপানির ওষুধ অ্যাজিথ্রোমাইসিন সহ একাধিক অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি, প্যারাসিটামল-সহ বহু ওষুধের। কিন্তু বহু ওষুধ চেয়েও মিলছে না। ওষুধের মূল মার্কেট বড়বাজার, বালিগঞ্জ বা নিউটাউন এলাকাতেও যোগান কম, পরিবহণের সমস্যার কারণে ওষুধের উৎপাদন এবং সরবরাহ দুই-ই তলানিতে ঠেকেছে।
ফলে নিয়মিত ওষুধ শেষ হয়ে যাওয়ার ভয়ে অনিয়মিত খেতেও বাধ্য হচ্ছেন অনেকে। আর ফুরিয়ে গেলে ওষুধের অভাবে শারীরিক যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। সকলেরই আবেদন, রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোল সংস্থা বা মুখ্যমন্ত্রী অবিলম্বে এই ব্যবস্থা গ্রহণ করে রেশন ব্যবস্থার মত জীবনদায়ী ওষুধের জোগানও স্বাভাবিক করুন। না হলে করোনা ভাইরাসের প্রকোপে করোনায় সংক্রামিত না হয়েও স্রেফ জীবনদায়ী নিয়মিত ওষুধের অভাবেই মৃত্যুমুখে পড়তে হবে রাজ্যের এক বড় শ্রেণির মানুষকে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584