নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতাঃ
করোনা অতিমারির মধ্যেই শারদপ্রাতে মায়ের আগমন ঘটবে এবছর। শহরজুড়ে সাজ সাজ রব। বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবের কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে। বাঙালিও ধীরে ধীরে ঢুকে পড়ছে পুজোর মুডে। এমন সময়ে আবারও একবার কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হল ‘ধর্ম’কে।
অদৃশ্য হলেও মানুষের মন থেকে ধর্ম বিভেদের বিষয়টাকে এখনও মুছে ফেলা যায়নি। নিউ নর্মাল পর্বে প্রত্যেক বাঙালি যেমন পুজোর আনন্দে মেতে উঠেছেন তেমনই সঞ্চালক মীরও পুজোর মুডে প্রবেশ করেছেন ইতিমধ্যেই। আর তাতেই সমস্যা নেটাগরিকদের একাংশের।
পুজোর আগে একটি চ্যানেলের জন্য বিজ্ঞাপনী শুটিংয়ে অংশ নিয়েছিলেন মীর। তার সাজ পাজামা-পাঞ্জাবি, জহর কোট। নিজের ছবির ক্যাপশনে এই জনপ্রিয় রেডিও জকি, সঞ্চালক লিখেছিলেন, ‘ধীরে ধীরে পুজো মুডে ঢুকছে দেখো কে… !’ কিন্তু একজন মুসলমান হয়ে হিন্দু উৎসবের উদযাপনের শরিক হওয়ার বিষয়টিকে মেনে নিতে পারেননি মৌলবাদী নেটাগরিকদের একটা বড় অংশ।
তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি আপলোড করার কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হয়ে যায় ট্রোলিং, প্রকাশের অযোগ্য শব্দের ব্যবহার। এমনকি রেহাই দেওয়া হয়নি অভিনেতার মা বাবাকেও। একজন মুসলিম কেন হিন্দুদের পরব উদযাপন করবেন? এটাই ছিল আক্রমণের মূল সুর। একই সঙ্গে মন্তব্য ভেসে আসে, ‘ইদের সময় আপনার তো এত আদিখ্যেতা দেখি না!’
আরও পড়ুনঃ পাকিস্তানের গৌরব সন্ত্রাসবাদ, রাষ্ট্রসংঘে জানাল ভারত
নেটাগরিকদের এই প্রশ্নের পাল্টা জবাব দিলেন সানডে সাসপেন্সের অন্যতম কণ্ঠশিল্পী। অপর একটি ফেসবুক পোস্টে মাথায় ফেজ টুপি পরে এবং হাতে অমৃতির থালা নিয়ে মিষ্টি মুখে প্রতিবাদ জানালেন মীর। সোশ্যাল মিডিয়ায় আবারও ছবি আপলোড করে ক্যাপশন দেন তিনি।
সেই ক্যাপশনে তিনি লেখেন কিছু গুরুত্বপূর্ণ লাইন, “যে কয় মোরে বেশ্যার পোলা/ তারে বুকেই জড়িয়ে ধরি/ বেশ্যাও যে মায়ের জাত / তারে সমান সজদা করি / ধর্ম বিভেদ ভরাবে কি পেট / শুধায় আপনজনে/ যাহা মসজিদ, তাহাই মন্দির/ ভক্তি রবে মনে/ আজানের ডাকে নামাবলী পরি/ আবেগ মানবরূপী/ যে শিরে বরিষে গঙ্গার জল/ সেই মাথাই ঢাকে টুপি।”
আরও পড়ুনঃ হলকর্মীদের তহবিল দিতে উদ্যোগী ‘ইম্পা’
আগেও একাধিকবার এই শিল্পীর ধর্ম নিয়ে অনেক কাঁটাছেঁড়া হয়েছে। তবে এ জন্য কোনো বিশেষ তারে বাঁধা রাজনৈতিক মতাদর্শকে একমাত্র দায়ী করতে রাজি নন তিনি হ। মানুষের মানসিকতার উন্নতি সকলের আগে প্রয়োজন বলেই তাঁর অভিমত। একুশ শতকের আধুনিক ভারতেও মনের গভীরে মানুষের আগে একজন হিন্দু বা একজন ইসলাম ধর্মাবলম্বীর পরিচয় বেশি প্রাধান্য পায়।
সংবিধানের পাতায়, মুখে ধর্মনিরপেক্ষতার বার্তা কপচালেও অন্তরে ধর্মনিরপেক্ষতার বিষয়টি মেনে নিতে সমস্যা হয় যখন একজন হিন্দু ঈদে আর একজন মুসলমান মেতে ওঠেন শারদীয়ায়, কিছুটা আক্ষেপই ঝরে পরে তাঁর কণ্ঠে।
“সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই”। বাংলার মধ্যযুগের এক কবি বড়ু চণ্ডীদাস উচ্চারণ করেছিলেন মানব-ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ এই মানবিক বাণী। এই বাণীকে যথার্থভাবেই গ্রহণ করেছেন মীর। তিনি মনে করেন মানুষকে সবার আগে মানবিক হতে হবে। তাই মানবতার ধর্মকেই আপন করে নিয়েছেন মীর।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584