শুভদীপ ভট্টাচার্য, বহরমপুরঃ
যানজট নিয়ে নিত্য ভোগান্তির শিকার বহরমপুরবাসী। দীর্ঘ যানজটের ফলে সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছনো দুর অস্ত বাড়ি থেকে বেরিয়েই যানজটের কথায় প্রায় ভুত দেখার মত আঁতকে ওঠেন নিত্যযাত্রীরা। প্রকাশ করেন ঘৃণা-ক্ষোভ। দায় চাপান প্রশাসনের উপর। এ চিত্র ভীষণ চেনা সকলেরই। যানজট বন্ধে কড়া বন্দোবস্ত গ্রহণে টুকটুক চালকদের দৌরাত্মকেই মূল ঠাউরে, টুকটুক দৌরাত্ম্য বন্ধে টোটোচালকদের ট্র্যাফিক রুট ঠিক করে দেয় প্রশাসন এবং যানজট বন্ধে প্রশাসনের তরফে শহরবাসীর কাছে জুলাইয়ের এক তারিখ থেকে এটাই নতুন প্রাপ্তি। একইসঙ্গে বৈধ কাগজ যাদের আছে একমাত্র তারাই পেয়েছেন শহরজুড়ে টোটো চালানোর অনুমোদন এবং পঞ্চায়েতের সমস্ত টোটোকেই শহরে নিষিদ্ধ করেছেন তারা। ‘ওয়ান ওয়ে সিস্টেম’ এর মধ্য দিয়ে এভাবেই যানজট নিয়ন্ত্রণে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে প্রশাসন। এতে নিঃসন্দেহে খুশি আপামর বহরমপুরবাসী। প্রশাসনের এই পদক্ষেপে রীতিমত আপ্লুত আপামর জনগণ। যানজট নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনিক সিদ্ধান্তকেই স্বাগত জানিয়েছেন তারা।
কিন্তু পাশাপাশি অবস্থান করছে আরেকটি করুণ চিত্রও। সলুয়াডাঙ্গার হাসিম রাহমান, স্ত্রীর যাবতীয় গয়না বিক্রি করে কিনেছিলেন টোটো, সংসারের আর্থিক ব্যায়ভার প্রচুর, সামাল দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছিল প্রতি মাসেই, টোটোচালনাই একমাত্র সম্বল তার। আবার নতুনগ্রামের রবিউল ইসলাম, টোটো চালান, আগে ভাগচাষের কাজ করতেন, গমচাষে সরকারী নিষেধাজ্ঞার পর দীর্ঘ সাংসারিক অনটনে হাঁপিয়ে উঠেছিলেন তিনি, টোটো কিনেছিলেন বসত বাড়ির একাংশ বেচে, হঠাৎ এ হেন সিদ্ধান্তের ফলে রীতিমত আতঙ্কিত তারা। আরেকজন মহম্মদ মাহবুব আলম, ছাত্র, সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে,পড়াশুনোর ব্যায়ভার ও সাংসারিক অনটনকে সামাল দিতে কিনেছিলেন টোটো। নতুনগ্রামের সেই বাড়িতে প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের ফলে নেমে এসেছে অন্ধকার। এরকম অসংখ্য মাহবুব, রবিউল কিংবা হাসিম’রা গ্রাম থেকে আসত শহরে, রোজগারের উদ্দেশ্যে। আজও শহরে এসেছিল তারা মিছিল করতে, দাবী জানাতে প্রশাসনের কাছে।তাদের প্রতি বঞ্চনার প্রতিবাদে ‘টুকটুক একতা মঞ্চে’র নেতৃত্বে প্রায় এক হাজার টোটোচালক মিছিল করে শহরে, ডেপুটেশনও দেয় ডি এম দপ্তরে। তবুও লাইসেন্স দেবার কোনো সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়নি প্রশাসনের তরফে।
জানানো হয়নি দূর্দশা মোচনে সরকারী দায়ভারের কথাও। প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়েই দেদার বিকিয়েছে টোটো। যাত্রীবাহী গাড়ির চাকা ছুটেছে শহরের নানা প্রান্তে।কিন্তু এখন স্তব্ধতাই নিয়তি। প্রশাসনিক এ নির্দেশিকাতে দিশাহারা অবস্থার মধ্যে গ্রামাঞ্চলের টোটোচালকদের দিশাহারা অবস্থার মধ্যে ঠেলে দেওয়ার বিরুদ্ধে ব্যার্থ অনুযোগে তারা দুষছেন প্রশাসনকেই।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584