জিয়াগঞ্জের ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড ঘিরে বিজেপি নেতাদের ভিত্তিহীন মতামতে ক্ষুব্ধ পরিবার

0
1980

নিজস্ব সংবাদদাতা, মুর্শিদাবাদঃ

গত মঙ্গলবার দশমীর দিন জিয়াগঞ্জে নিজের বাড়িতে নৃংশসভাবে খুন হন প্রাথমিক শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পাল, তাঁর স্ত্রী বিউটি পাল এবং আট বছরের নাবালক পুত্র বন্ধুঅঙ্গন পাল।

মৃতের সম্পর্কিত ভাই সুজয় ঘোষ। ফাইল চিত্র

এই মৃত্যু ঘিরে জেলা সহ সারা রাজ্য জুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। খুনের নৃশংসতায় শিউড়ে ওঠে জেলা বাসী। খুনের দিন মৃতের সম্পর্কিত ভাই সুজয় ঘোষ নিউজফ্রন্ট প্রতিনিধিকে জানায়, কি কারনে খুন তা নিয়ে ধোঁয়াশায় তারাও।

killed family | newsfront.co
নিহত পরিবার। সংবাদ চিত্র

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ খুনের মোটিভ হিসাবে তিনটি বিষয়কে চিহ্নিত করে। জানা যায়, বন্ধুপ্রকাশ পালের আদি বাড়ি সাগরদিঘি থানা এলাকায় বছর দুয়েক পূর্বে তিনি জিয়াগঞ্জ থানার অন্তর্গত জিয়াগঞ্জ আজিমগঞ্জ পুরসভার ১৬নং ওয়ার্ডের কানাইগঞ্জ লেবুবাগানে বাড়ি করে স্থায়ী বসবাস শুরু করেন।

dilip ghosh | newsfront.co
বেলডাঙ্গায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি দিলীপ ঘোষ। নিজস্ব চিত্র

রাজ্য জুড়ে যখন আপরাধীদের গ্রেফতারের দাবি উঠছে। রাজ্য প্রশাসন জেলা প্রশাসন মূল অপরাধীদের গ্রেফতারের জন্য তৎপর তখন মুর্শিদাবাদ জেলার বেলডাঙ্গায় এসে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দাবি করেন যে, মৃত বন্ধুপ্রকাশ পাল আরএসএস কর্মী এবং বিজেপি সমর্থক পরিবার ছিল।

মৃতের পরিবারের পাশে তাঁরা আছেন বলেও জানান দিলীপ ঘোষ। বিজেপি নেতার এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে উপস্থিত সাংবাদিক মৃতের পরিবারের দাবির কথা তুলে ধরে বিজেপি রাজ্য সভাপতিকে জানতে চান যে, পরিবার দাবি করছে মৃতের সাথে রাজনীতির কোন যোগ ছিল না। প্রত্যুত্তরে দিলীপ ঘোষ জানায় যে, উনি তো পরিবারের সাথেই থাকত না পরিবারের লোক জানবে কি করে।

আরও পড়ুনঃ সন্তান সম্ভবা স্ত্রী, সন্তান-সহ প্রাথমিক শিক্ষকের দেহ উদ্ধার জিয়াগঞ্জে

অপরদিকে রাজ্য বিজেপির সাধারন সম্পাদক সায়ন্তন বসু দাবি করেন যে, এই হত্যাকান্ডের পিছনে জেহাদিদের হাত থাকতে পারে। অথচ সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায় আরএসএসের দক্ষিনবঙ্গ প্রান্তের মুখপাত্র বিপ্লব রায় জানান যে, ৬-৭ মাস আগে বন্ধুপ্রকাশ পাল স্বয়ং সেবক হয়েছিলেন কিন্তু তার সঙ্গে এই হত্যাকান্ডের কোনও যোগ রয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। এই হত্যাকাণ্ড ঘিরে বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র সম্বিত পাত্রও মুখ খুলেছিলেন।

এই হতাকান্ডের প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ নিশ্চিত করেছে যে, এই খুনের পশ্চ্যাতে কোন রাজনৈতিক বিষয় নেই। একই সাথে তিনটি বিষয়কে চিহ্নিত করেছে সাংবাদিকদের পুলিশ জানিয়েছে যে, প্রথমত মৃত বন্ধুপ্রকাশ পাল পূর্বতন সাগরদিঘী এলাকায় কিছু মানুষের কাছে টাকা নেয়, টাকা পয়সা সংক্রান্ত কোন সমস্যা হয় বলেই জিয়াগঞ্জে এসে বসবাস শুরু করে।

শিক্ষকতার পাশাপাশি বন্ধুপ্রকাশ কিছু ব্যবসার সাথেও যুক্ত ছিলেন। দ্বিতীয়ত, পুলিশের অনুমান মৃতদের প্রথমে কোন মাদকদ্রব্য খাইয়ে অচেতন করে হত্যা করা হয়েছে যার থেকে অনুমান এই হত্যা কান্ডের সাথে যুক্ত আক্রান্ত পরিবারের পরিচিত কেউ। তৃতীয়ত, ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি নোট উদ্ধার করে যা থেকে ধারনা করা যায় প্রকাশ বিউটির দাম্পত্য সমস্যা ছিল। নোটেটি মৃত বিউটির লেখা বলে প্রাথমিক ধারনা পুলিশ।

পুলিশ প্রশাসন যখন মূল অপরাধীকে ধরতে হন্যে হয়ে ঘুরছে তখন নৃশংস এই হত্যা কান্ড ঘিরে বিজেপি নেতাদের আলটপকা ভিত্তিহীন মতামত তদন্ত প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্থ করবে বলেই অভিমত সংশ্লিষ্ট মহলের। হত্যাকান্ডের ভয়াবহতায় শোকগ্রস্থ পরিবারও বিজেপি নেতাদের এই মতামতের বিরোধিতা করেছেন।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here