শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
রাজ্যের রাজাকে আক্রমণ করলে কোনওভাবেই চুপ থাকতে পারেন না সেনাপতিরা। একইভাবে তৃণমূলের শীর্ষে থাকা জননেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীকে রাজ্যপালের আক্রমণের পর রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর তো জবাব দিলই, এমনকি ‘বিজেপি ম্যালাইনস বেঙ্গল’ হ্যাশট্যাগে রাজ্যপালকে বিঁধে একের পর এক ট্যুইট বাণ ছাড়লেন তৃণমূলের সেনাপতি পার্থ, ফিরহাদ, দীনেশরা।
The WB govt. Is constantly working for the people of Bengal and all we expect from the honorable governor is to help us by Not spreading Fake News and misinformation#BJPMalignsBengal pic.twitter.com/GCM5Da2SU7
— Partha Chatterjee (@itspcofficial) June 13, 2020
কারও অভিযোগ, ভুয়ো খবর রটাচ্ছেন রাজ্যপাল। কেউ বললেন, ‘চেয়ারটার মর্যাদা রাখুন।’ রাজ্যপালকে নিশানা করে একের পর এক তৃণমূল-টুইট বাণের পরেও রাজ্যপালের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুনঃ গড়িয়া শ্মশান কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রীকে ক্ষমা চাইতে বললেন রাজ্যপাল, খোঁচা দিলেন মহুয়াকেও
গড়িয়া শ্মশানের একটি ভিডিও সম্প্রতি সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। একটি ভিডিওয় দেখা গিয়েছে, একের পর এক মৃতদেহ টেনে, হিঁচড়ে আঁকশি দিয়ে তোলা হচ্ছে গাড়িতে। এই ভিডিও প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজ্যজুড়ে। বিজেপির একাংশের অভিযোগ, করোনা আক্রান্তদের দেহ লুকিয়ে পোড়ানোর ছক কষেছিল প্রশাসন।
The WB government is constantly working for their people while others are just interested in spreading fake news#BJPMalignsBengalhttps://t.co/rTGYcz7tOX pic.twitter.com/7etUOHIijz
— FIRHAD HAKIM (@FirhadHakim) June 13, 2020
যদিও মৃতদেহগুলি করোনা রোগীদের নয় বলে রীতিমত বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছে দিয়েছে রাজ্য সরকার। এমনকী যে হাসপাতাল থেকে মৃতদেহগুলি কলকাতা পুরসভার হাতে তুলে দেওয়া হয়, সেই এনআরএস কর্তৃপক্ষও এই ব্যাপারে প্রেস বিবৃতি জারি করেছে।
Governor of Bengal @jdhankhar1 caught red-handed spreading Fake news & misinformation! For a dignified post as yours, you should be ashamed of yourself!#BJPMalignsBengal pic.twitter.com/EkrlQSB30z
— Dinesh Trivedi (@DinTri) June 13, 2020
কিন্তু তারপরেও এই নিয়ে বিতর্ক ধামাচাপা পড়েনি বরং যেভাবে হুক দিয়ে টেনে মৃতদেহ সৎকার করার চেষ্টা করা হচ্ছিল, তা নিয়ে একের পর এক টুইট করে গিয়েছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর। টুইটে তিনি লেখেন, ‘ভিডিয়োতে মৃতদেহ টেনে নিয়ে যাওয়ার নির্মম দৃশ্য দেখে জনমানসে ক্ষোভ বেড়েছে। আমি গভীর ভাবে উদ্বিগ্ন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের কাজে স্তম্ভিত। অবিলম্বে মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমা চাওয়া উচিত।’
আরও পড়ুনঃ ‘বাংলার সরকারকে কলুষিত করছেন’, রাজ্যপালকে ট্যুইটেই পালটা জবাব স্বরাষ্ট্র দফতরের
গড়িয়া শ্মশানের ওই ঘটনা নিয়ে রাজ্যপালের পদক্ষেপে চটেছে শাসকদল তৃণমূল। টুইটে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় লেখেন, ‘রাজ্য সরকার বাংলার জনগণের জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। মাননীয় রাজ্যপালের কাছ থেকে আমাদের দাবি, ফেক নিউজ এবং ভুল তথ্য ছড়িয়ে না দিয়ে আমাদের সাহায্য করুন।’
একইভাবে জগদীপ ধনকরকে বিঁধে তৃণমূল নেতা তথা কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম টুইটে লেখেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ সরকার জনগণের জন্য নিয়মিত কাজ করে চলেছে। অন্যরা কেবল ভুয়া খবর ছড়াতে আগ্রহী।’ তারা দু’জনেই হ্যাশট্যাগ বিজেপি ম্যালাইনস বেঙ্গল ব্যবহার করেছেন।
রাজ্যপাল জগদীপ ধনকরকে কটাক্ষ করে তৃণমূল নেতা দীনেশ ত্রিবেদী টুইটে লেখেন, ‘ভুয়ো খবর ছড়াতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েছেন।
সম্মানজনক একটি পদে রয়েছেন আপনি। আপনার কৃতকর্মের জন্য লজ্জা হওয়া উচিত!’ শনিবার দুপুরে প্রাক্তন রেলমন্ত্রী টুইটে সরাসরি জগদীপ ধনকরকে উদ্দেশ্য করে লেখেন, বাংলার রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় ফেক নিউজ এবং ভুল তথ্য ছড়াতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ে গিয়েছেন। তারপর তিনি লিখেছেন, আপনি যে দায়িত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন, তাতে এই কাজ করার পর আপনার নিজের উপরই লজ্জা হওয়া উচিত। তাৎপর্যপূর্ণভাবে দীনেশ ত্রিবেদীও এই ট্যুইটে ব্যবহার করেছেন হ্যাশট্যাগ বিজেপি ম্যালাইনস বেঙ্গল।
আরও পড়ুনঃ শ্মশান ভিডিও ঘিরে টুইট তোপ অব্যাহত রাজ্যপালের
রাজ্যের হেভিওয়েট মন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চ্যাটার্জি রাজ্যপালের উদ্দেশে ট্যুইট করে ২৯ মে কলকাতা পুর সংস্থার জারি করা একটি নির্দেশনামা এবং এনআরএস হাসপাতালের প্রিন্সিপালের চিঠি শেয়ার করেন। ট্যুইটে পার্থ চ্যাটার্জি লেখেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রতিনিয়ত বাংলার মানুষের স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে মহামান্য রাজ্যপাল যেন ফেক নিউজ শেয়ার না করেন।
অনেকেই রাজভবনের এমন অভূতপূর্ব কর্মকাণ্ডে বিশেষ রাজনৈতিক প্রভাব আছে বলে অভিযোগ করেছেন। বিভিন্ন সময় জগদীপ ধনকরকে নিয়ে সমালোচনার সুর শোনা গিয়েছে কংগ্রেস-সিপিএমের গলাতেও। একমাত্র বিজেপি বরাবর রাজ্যপালের পাশে দাঁড়িয়েছে। এই প্রেক্ষিতে ফেক নিউজ ছড়ানোর অভিযোগও উঠে গেল রাজ্যপালের বিরুদ্ধে। এখন রাজভবন থেকে কী জবাব আসে, এখন সেটাই দেখার।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584