নবনীতা দত্তগুপ্ত, বিনোদন ডেস্কঃ
কেমন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছি আমরা। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত সবাই এক সারিতে বিরাজ করছি আজ। বাইরে পা বাড়ানোর আগে সকলেই ভাবছি হাজার বার। তা সে অফিসের বড় বাবু হই বা চায়ের দোকানের মালিক, করোনা ভয় চেপে ধরে রেখেছে আমাদের সকলকে। প্রতিমুহূর্তে পাচ্ছি মৃত্যুভয়।
আজ আর নতুন কোনও খবর নয় এটা।
তবে, আজ ৫ এপ্রিল এক কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি আজ রাত ৯ টায় দেশবাসীকে ৯ মিনিট বাড়ির বৈদ্যুতিক আলো নিভিয়ে মোমবাতি, প্রদীপ, লণ্ঠন, টর্চ কিংবা মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন। হ্যাঁ অনুরোধ। আদেশ কিংবা নির্দেশ দেননি তিনি। তাই যার ইচ্ছা তিনি জ্বালাবেন, যার ইচ্ছা নেই তিনি না-ই জ্বালাতে পারেন।
কিন্তু নানা মহলে নানা কথা উঠছে এই নিয়ে৷ প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত সেই কর্মসূচিতে বিভক্ত দেশ। কেউ এর পক্ষে কেউ বা বিপক্ষে৷ টলিমহলেও চলছে এই কর্মসূচির ঘোর বিরোধিতা। কর্মসূচির পক্ষেও রয়েছেন অনেকে।
অভিনেতা জয়জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কারোকে তো আদেশ দেননি প্রধানমন্ত্রী। ইলেকক্ট্রিক আলো নেভানো কিংবা মোমবাতি, টর্চ জ্বালানো বা না জ্বালানো পুরোটাই নিজের ইচ্ছা অনিচ্ছার ব্যাপার। আমি আজ বৈদ্যুতিক আলোও নেভাব না, মোমবাতিও জ্বালাব না৷ আমার মতে, এই জ্বালানো, নেভানোর কর্মযজ্ঞে না মেতে সঠিক পথে যাতে তাড়াতাড়ি সমস্যার সমাধান করা যায় তার ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”
অভিনেত্রী রূপা ভট্টাচার্য জানান, “আমরা তো দীপাবলির দিনেও ঘরের আলো বন্ধ করে মোমবাতি, প্রদীপ জ্বালাই। সেদিন ডাক্তারদের উদ্দেশ্যেও তো আমরা হাততালি, শঙখ বাজিয়েছি। এতেও করোনা বিদায় নেয়নি। আজও মোমবাতি জ্বালালে করোনা বিদায় নেবে এমন কথা বলেননি প্রধানমন্ত্রী। কেন এই কর্মসূচি তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি। এবার যাঁরা এর অপব্যাখ্যা বা অপপ্রচার করছেন তা তাঁদের রুচির পরিচয় দিচ্ছে। আমার মনে হয়, রাজ্য সরকার বা কেন্দ্রীয় সরকার আমাদের উদ্দেশ্যে যদি কোনও অনুরোধ রাখেন তা হলে নাগরিক হিসেবে আমাদের কর্তব্য তা মেনে চলা।”
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত এক ভিডিওর মাধ্যমে সকলকে প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে সাড়া দিয়ে মোমবাতি, প্রদীপ, টর্চ জ্বালাতে বলেছেন। বৈদ্যুতিক আলো বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন।
অভিনেতা-পরিচালক অনিন্দ্য পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “অনেকেই ব্যাপারটার বিরোধিতা করছেন। যাঁরা করছেন তাঁরা সব ক্ষেত্রেই বিরোধিতা করে থাকেন৷ তাঁরা বড় অধৈর্য। নিজেদের ভূখণ্ডকেই ঠিকমতো চেনেন না তাঁরা আসলে৷ আমি আজ রাত ৯ টায় মোম জ্বালানোর পক্ষে।”
আবার অভিনেত্রী চান্দ্রেয়ী ঘোষ জানান, “জনতা কার্ফুটা সত্যিই দরকার ছিল। প্রধানমন্ত্রী যেদিন স্বাস্থ্য কর্মীদের উদ্দেশ্যে করতালি দিতে বলেছিলেন সেদিনও বেশ ভাল লেগেছিল। আজ মোমবাতি প্রজ্জ্বলন, বৈদ্যুতিক আলো সবাই একসঙ্গে নিভিয়ে দেওয়ার কারণও তিনি ব্যাখ্যা করেছেন। একতার জয়গানের কথা বলেছেন তিনি। তবে, আরও একটু জোরদার ব্যাখ্যা আশা করেছিলাম আজ।”
অভিনেত্রী অনসূয়া মজুমদার জানান, “কেউ জ্বালাবে, কেউ জ্বালাবে না৷ দেখি কী করি। তবে, চাই সবাই ভাল থাকুক। সব মিটে গিয়ে আমরা সবাই একত্রিত হয়ে আগের মতো হেসে খেলে বাঁচি খুব তাড়াতাড়ি।”
অন্যদিকে অভিনেত্রী অমৃতা চ্যাটার্জি জানান, “মোদি’জির ডাকে সাড়া দিয়ে অনেকেই আজ মোমবাতি, দিয়া কিনে ফেলেছেন জানি। আমাদের দেশে এখনও ধর্মান্ধ মানুষের অভাব নেই। আমি আজকের এই মোমবাতি জ্বালিয়ে, বৈদ্যুতিক আলো নেভানোর ব্যাপারটাকে সমর্থন করতে পারছি না। যুক্তি নেই আমার কাছে কোনও। এই সবে না মেতে যা করলে তাড়াতাড়ি সমস্যা, রোগ আর অচলাবস্থা থেকে মুক্তি মিলবে তার পথ জানা থাকলে সেদিকে নজর দেওয়া হলে ভাল হয়। মোমবাতি জ্বালিয়ে, বৈদ্যুতিক আলো নিভিয়ে আমরা এক এটা বোঝানোর প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না।”
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584