বাঁকা নদী বাঁচানো জরুরি বলছে বর্ধমান

0
582

সুদীপ পাল,বর্ধমানঃ

বর্ধমান শহরকে কার্যত আড়াআড়ি ভাবে দুটি ভাগ করেছে বর্ধমান শহরের সঙ্গে নাড়ির যোগ থাকা একটি নদী। নদীটির নাম বাঁকা নদী। ১৭৭৯ সালে রেনেলের মানচিত্রে দেখা যায়, বর্ধমান শহরের দক্ষিন-পশ্চিমের দামোদর নদ থেকে বাঁকা নদী নির্গত হয়েছে।

banka river | newsfront.co
বাঁকা নদীর বর্তমান অবস্থা।ছবিঃ প্রতিবেদক

কিন্তু পরবর্তীতে জানা যায়, নদীটির উৎপত্তিস্থল হল পূর্ব বর্ধমানের গলসি থানার রামগোপালপুর গ্রামের নিকটবর্তী একটি জলাশয়। অনেকে মনে করেন, ওই জায়গায় প্রস্রবণের জল বইতে থাকায় বাঁকা নদীর জন্ম হয়েছে। গলসি থেকে প্রবাহিত হয়ে বর্ধমান শহরের রথতলার কাছে দামোদরের সাথে বাঁকা নদীকে যুক্ত করা হয়েছে। দামোদরের জল প্রবাহ সুবিধে করার জন্য এখানে একটি লকগেট বসানো হয়েছে।

বর্ধমানবাসীর অভিযোগ, উপনদীগুলি এর জেরেই শুকিয়ে যাচ্ছে। নদীটির মোট দৈর্ঘ্য ১২৫ কিমি, যার মধ্যে বর্ধমান শহরেই রয়েছে ৩৫ কিমি। বর্ধমান থেকে বেরিয়ে মেমারি, মন্তেশ্বর, কালনা, পূর্বস্থলী হয়ে সমুদ্রগড়ের উত্তরে জালুইডাঙায় খড়ি নদীতে পড়েছে। খড়ি-বাঁকার মিলিত ধারা নন্দাই এর কাছে ভাগীরথীর সাথে মিশেছে। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের ছাত্র তরুণ আড়ি বলেন, বাঁকা নদীর উল্লেখ প্রাচীন সাহিত্যে পাওয়া যায়।

কেতকা দাস ক্ষেমানন্দ মৃত লখিন্দরকে নিয়ে ভেলায় বেহুলার যাত্রার বর্ণনা দিতে গিয়ে লিখেছেন, “ভাসিয়া ভাসিয়া পাইলো বাঁকা দামোদর”। কথিত আছে, এই নদীর নাম ছিল বঙ্কেশ্বরী। অতীতে বঙ্কা নামে এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসী এই নদীর তীরে সাধনা করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে নাম অপভ্রংশ হয়ে হয় বাঁকা নদী। অনেকের মতে, এই নদীতে রয়েছে অসংখ্য বাঁক। যার কারনে যেকোনো স্থান থেকে ১০০ মিটারের বেশি দেখা যায় না, তাই এর নাম বাঁকা নদী।

বাঁকাই শহর বর্ধমানের নিকাশের প্রধান মাধ্যম হলেও আবর্জনা কচুরিপানা আর দখলদারিতে তার অবস্থা খুবই খারাপ। রথতলা থেকেই দেখা যায় নানা এলাকার নালা এই নদীতে এসে মিশছে। শুধু তাই নয় নদীতে মরা কুকুর বিড়ালের দেহ, পলিথিন বস্তুত আবর্জনা এবং কচুরিপানায় বাঁকার জল পরিবহন ক্ষমতা অত্যন্ত কমে গিয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে বিরহাটা সেতুর নিচে বাঁকা নদীতে সৌন্দর্যায়নের কাজ করছে বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদ। কিন্তু বর্ধমান উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারম্যান তথা বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বাঁকারা দখলের জন্য প্রকল্পের কাজ আটকে গিয়েছে বলে জানান।

আরও পড়ুনঃ বর্ষা এলেই পদ্মাপাড়ে ব্যস্ততা বাড়ে নৌকা কারিগরদের

এই দখলমুক্তি কিভাবে? তাঁর বক্তব্য, পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ভারী বৃষ্টির অভাবে শহরে জল কমার আশঙ্কা দিয়েছে অন্যদিকে দূষণের জেরে নদীর দুপাশে বাসিন্দারা পড়ছেন সমস্যায়। এই দুই মিলে নদীকে বাঁচানো অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এবং জরুরী হয়ে পড়ছে।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here