শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
লকডাউনে একটানা ৪০ দিন মদ না পেয়ে রীতিমত কাহিল অবস্থা হয়েছিল সুরাপ্রেমীদের। সোমবার কনটেনমেন্ট জোনের বাইরে মদের দোকান খোলা হতেই বিভিন্ন দোকানের সামনে বাজি ফাটিয়ে আনন্দোৎসব করতে দেখা যায় অনেককে। হাজার হাজার মানুষের ভিড় সামলাতে লাঠিচার্জ করতে হয় পুলিশকে। আর দিনের শেষে হিসেব মেলাতে গিয়ে রীতিমত খুশি আবগারি দফতরের কর্তারা। কারণ, ৪০ দিন পর প্রথম দিনেই রাজ্যের কোষাগারে জমা হয়েছে ৪০ কোটি টাকা।
সূত্রের খবর, মদ বিক্রিতে দেশের সব রাজ্যকে টেক্কা দিয়েছে উত্তরপ্রদেশ। ১০০ কোটি টাকারও বেশি মদ বিক্রি হয়েছে সেখানে। তার ঠিক পিছনেই রয়েছে দিল্লি, কর্ণাটক এবং কেরল। তবে এ রাজ্যে মদ বিক্রির হারও হাসি ফুটিয়েছে রাজ্যের আবগারি দফতরের কর্তাদের মুখে। কিছুটা বেশি বিক্রি আশা করলেও এতটা অনেকেই করেননি।
প্রসঙ্গত, প্রায় ৪০ দিন মদের দোকান বন্ধ থাকার ফলে বিপুল রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছিল রাজ্য সরকারের। অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ছাড়া আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রীতিমত চিন্তিত হয়ে পড়েছিল রাজ্য অর্থ দফতর। এদিকে করোনা অতিমারী সংক্রমণ প্রতিরোধে হাসপাতাল এবং কোয়ারেন্টাইন সেন্টারের পিছনে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছিল সরকারের। আবগারি দফতরের একটি সূত্র বলছে, দেশের মধ্যে এ রাজ্যের ৪৩.৫ শতাংশ মানুষ মদ্যপায়ী। এই পরিস্থিতিতে এর আগেও মদের দোকান খোলার চেষ্টা করা হলে তাতে পরিকাঠামোগত সমস্যার কারণে আপত্তি জানায় পুলিশ প্রশাসন। তাই ঘোষণা করেও পিছিয়ে আসতে হয় রাজ্যকে।
কিন্তু কিছুদিন আগে গ্রিন জোনে এবং অরেঞ্জ জোনে কনটেনমেন্ট এলাকার বাইরে দোকান খোলার অনুমতি দেয় সরকার। একই সঙ্গে রীতিমত প্রস্তুতি রেখে অনুমতি দেওয়া হয় মদ বিক্রির জন্যেও। আর তাতেই উৎসাহিত হন সুরাপ্রেমীরা। তবে মদ বিক্রির আগে একগুচ্ছ নির্দেশিকাও ঘোষণা করা হয়।
সোমবার থেকে রাজ্য ছাড়াও কলকাতার ২২ টি জায়গায় খোলা হয়েছে মদের দোকান। দোকান খোলার আগেই লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা প্রত্যেক ব্যক্তিকে কুপন বন্টন করা হয়। দোকানের বাইরে নির্দেশিকা ঝোলানো হয়েছিল। মাস্ক পড়ে আসুন না হলে মদ বিক্রি হবে না। সোমবার দুপুর তিনটে থেকে সন্ধে ৬ টা পর্যন্ত খোলা ছিল মদের দোকান। দীর্ঘ দিন পর খুলেছে মদের দোকান৷ এক দিনে সুরাপ্রেমীদের উন্মাদনায়, তাতেই রাজ্যের লাভ ৪০ কোটি টাকা।
কিন্তু এর বিপরীত ফলও দেখছেন অনেকে। মনোবিদদের কথায়, দীর্ঘদিন ধরে লকডাউনে বাড়ি বসে থাকতে থাকতে আর চারদিকে করোনা সংক্রমণ আর মৃত্যুর হিসেব শুনতে শুনতে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন মানুষ। তার জেরেই সোমবার থেকে মদ্যপানের মাধ্যমে সব ভুলে থাকার চাবিকাঠি হাতে পাওয়ায় এই বিপুল উন্মাদনা। মনোবিদ শাশ্বতী গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, ‘ লকডাউনে অবসাদগ্রস্ত মানুষ মানসিক ভাবে মুক্তির পথ খুঁজছেন। গোটা দেশে এটা তারই প্রতিফলন। তবে এর জেরে গার্হস্থ্য হিংসা বৃদ্ধি পেতে পারে।’ তবে যাই হোক, আপাতত রাজ্যের আয়ের উৎস চালু করতে পেয়ে কোষাগার পূরণে খুশি প্রশাসনিক আধিকারিকরা।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584