মুনিরুল তারেক, বাংলাদেশঃ
‘প্রথমে বাংলাদেশি ছেলের সঙ্গে মেয়ে সেজে কিংবা মেয়ের সঙ্গে ছেলে সেজে বিদেশী নাগরিক পরিচয়ে ফেসবুকে যুক্ত বন্ধুত্ব গড়ে তোলা। একপর্যায়ে পার্সেল করে মূল্যবান গিফট পাঠানোর প্রস্তাব। পরে এয়ারপোর্ট কাস্টমস্ অফিসার পরিচয় দিয়ে ফোন করে সেই গিফট্ নিতে চাওয়া হয় টাকা। সরল বিশ্বাসে কোটি টাকা মূল্যের উপহার হাতে পেতে লাখ লাখ টাকা পাঠিয়ে শেষে দেখা যায় সবই ভুয়া’।
বাংলাদেশে এভাবেই ফেসবুকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে ছয় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বিদেশি প্রতারক চক্র। এর সঙ্গে জড়িত এক বাংলাদেশি নারী এবং ১১ নাইজেরিয়ান নাগরিককে গ্রেফতার করেছেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গত দুই মাসে এই চক্রের সদস্যরা ফেসবুকের প্রতারণা করে আসছে।
আজ ২২ জুলাই সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সিআইডি’র ঢাকা মেট্রোর অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ মো. রেজাউল হায়দার। তিনি জানান, এক ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে গভীর তদন্ত করে এই চক্রকে ধরা হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ ব্যর্থতা-দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে বাংলাদেশে স্বাস্থ্যের ডিজি’র পদত্যাগ
গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন নাইজেরিয়ান নান্দিকাক্ল্যামেন্ট চাকেনগুয়ে (৩২), ক্লিটাস আচুনা (৩১), ওনইয়ানক্লুভ টাইমটি চিনোংড়ে (৩০),একিনি উইজডম (৩০), চিগোজি (৩০), এভেন্ডে গ্রাব্রিয়েল ওবুনা (৩০), সেলাস্তিন পেট্রিকওবিয়াজুলু (৩০), মোরডি নানদি কোলিন্স (৩০), ওরডু চুকেয়দু সামি (৩০), এন্দুবুয়েকোনসমেয়ানা (৩০), এনজেরেম প্রিসিয়াস ইকেমে (৩০), এনওক উইজডম চিকওয়াদো (৩০) এবং বাংলাদেশি রাহাত আরা খানম ওরফে ফারজানা মহিউদ্দিন (ভুয়া কাস্টমস কর্মকর্তা)।
গতকাল ২১ জুলাই রাজধানীর পল্লবী এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে পাঁচটি ল্যাপটপ, ১৪টি মোবাইল ফোন ও বিপুল পরিমাণ সিম কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে।
ডিআইজি রেজাউল হায়দার জানান, ভুক্তভোগীর সঙ্গে প্রথমে বিদেশী নাগরিক পরিচয়ে ফেসবুকে যুক্ত বন্ধুত্ব গড়ে তোলা হয়। একপর্যায়ে পার্সেল করে মূল্যবান গিফট পাঠানোর প্রস্তাব দেয়। এরপর বলা হয় এসব গিফট বক্সে কয়েক মিলিয়ন ডলারের মূল্যবান সামগ্রী রয়েছে। গিফট বক্স চট্টগ্রাম এয়ারপোর্ট কাস্টমস থেকে নিতে হবে বলে জানানো হয়। এ সব কথা সন্দেহ তৈরি হলে তিনি সিআইডিকে জানান। তখন অভিযানে নামে সিআইডি।
আরও পড়ুনঃ ডোনাল্ড ট্রাম্প বিক্রি হলো ১ লাখ ৬৯ হাজার টাকায়!
প্রথমে রাহাত আরা খানম ওরফে ফারজানা মহিউদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়। সে নিজেকে নিজেকে কাস্টমস কমিশনার পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন লোকের মূল্যবান গিফট গ্রহণসহ শুল্ক বাবদ ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা কয়েকটি ব্যাংক একাউন্টে পরিশোধের জন্য বলে। কেউ দিতে বিলম্ব করলে তাকে গ্রেফতার করা হুমকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এমন নানা প্রতারনার ফাঁদে ফেলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, ভুয়া কাস্টমস অফিসার পরিচয়ে ভয়ভীতি দেখায়। একজন ভুক্তভোগী ভুয়া কাস্টমস অফিসারের বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৩ লাখ ৭৩ হাজার টাকা পাঠায়। একইভাবে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে শতাধিক মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে ৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
আরও পড়ুনঃ ঢাকায় পশুর হাটে ৭০ লাখ জাল টাকা, টার্গেট ছিল আরও ১ কোটি ছড়ানোর
সিআইডি’র ঢাকা মেট্রোর অর্গানাইজড ক্রাইমের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার জিসানুল হক বলেন, ফেসবুক প্রতারককে ধরতে পুলিশ তৎপর রয়েছে। কেউ এ ধরনের প্রতারণা করে পার পাবে না। তাকে ধরা পড়তেই হবে। কেউ যদি তথ্য গোপন করে বিদেশিদের কাছে বাড়ি ভাড়া দেয়। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিআইডির ঢাকা মেট্রো পশ্চিমের বিশেষ পুলিশ সুপার কানিজ ফাতেমা বলেন, বাড়ির মালিকরা বিদেশি নাগরিককে ভাড়া দেওয়ার আগে তাদের বৈধ কাগজপত্র ও পাসপোর্ট যাচাই করে নেবেন। ফেসবুক বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়া থেকে বিরত থাকুন। এলাকায় কোনো বিদেশি ব্যক্তি বাসা-ভাড়া নিলে পুলিশে খবর দিন।
কেউ যদি টেলিফোনে বা ফেসবুকে এ ধরনের উপহার পাঠানোর প্রস্তাব দেয় তাহলে পুলিশকে জানান। কিন্তু আমরা তদন্ত করে দেখেছি বাড়ির মালিকরা অতিরিক্ত ভাড়া পাবার জন্য সব কিছু গোপন করে বিদেশীদের কাছে ভাড়া দেন। এই ধরনের বাড়ির মালিককে খুঁজে বের করতে কাজ করছে পুলিশ।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584