শরীয়তুল্লাহ সোহন ওয়েব ডেস্কঃ
বড়দিনের সকালে পূর্ব মায়ানমারের কারেন্নি (কায়াহ) প্রদেশের একটি গ্রাম থেকে ৩৫টি পোড়া লাশের অবশিষ্টাংশ উদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা, স্থানীয় গণমাধ্যম এবং ওই এলাকায় সক্রিয় জান্তাবিরোধী সশস্ত্র গ্রুপ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
শনিবার সকালে মোসো গ্রামের কাছের একটি স্থানে আটটি পোড়া গাড়ি ও পাঁচটি মোটরবাইক উদ্ধার করা হয়। দ্য কেরান্নি ন্যাশনালিস্ট ডিফেন্স ফোর্স (কেএনডিএফ) এ ঘটনায় মায়ানমার সেনাবাহিনীকে দায়ী করে। তাদের ভাষ্য, শুক্রবার সেনাবাহিনীর সদস্যরা ওই এলাকায় অবস্থান করছিল এবং এমন অপরাধ তারাই ঘটাতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেএনডিএফের চতুর্থ ব্রিগেডের কমান্ডার বলেন, ‘গতকাল শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে আমাদের লোকজন দেখতে পায় ওই এলাকায় বেশ কিছু পার্ক করা গাড়ি থেকে ধোঁয়া উঠছে। কিন্তু তখন তারা কী কারণে ওখানে ধোঁয়া উঠছে তা দেখতে যেতে পারেনি, কারণ ওখানে তখনো সামরিক বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করছিল। আজ সকাল পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করি এবং সেখানে গিয়ে এই ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ প্রত্যক্ষ করি।’
পোড়া মরদেহগুলোর মধ্যে কজন নারী, কজন পুরুষ আর কটিই বা শিশু তা বলতে পারেননি ব্রিগেড কমান্ডার। কিছু মরদেহ একেবারে ছাই হয়ে গেছে, বাকিগুলো পুড়ে কয়লা। লাশগুলো শনাক্ত করার অবস্থায় ছিল না, বলেন তিনি। যানবাহনে সেসব জিনিসপত্র পাওয়া গেছে তা থেকে কেএনডিএফ সদস্যরা বুঝতে পারছেন- ক্ষতিগ্রস্তরা সংঘর্ষ থেকে পালিয়ে আসা স্থানীয় জনগণ।
কমান্ডার অনুমান করে বলেন, মায়ানমার সেনারা ইচ্ছাকৃতভাবে পেট্রোল ব্যবহার করে ট্রাকে আগুন লাগিয়েছে। যানবাহনগুলো একটির পর একটি, পাশাপাশি সাজিয়ে রাখা হয়েছিল। তারা (সেনা সদস্যরা) মানুষ না। তাদের অপরাধ ফ্যাসিস্টদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধের চেয়েও খারাপ।
কেএনডিএফ জানিয়েছে, শুক্রবার মায়ানমার সেনাবাহিনীর লাইট ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশন ৬৬ থেকে প্রায় ১০০ সেনা ডেমোসো টাউনশিপ থেকে প্রুসোর দিকে অগ্রসর হয়। সেনারা তখন মোসো গ্রামের কাছে কেএনডিএফ এবং কারেন্নি আর্মির সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
কেএনডিএফ শনিবার এক বিবৃতিতে বলে, সামরিক অভিযানের সময় সেনারা গ্রামবাসীকে মারধর ও গ্রেপ্তার করে এবং তাদের সম্পদ লুট করে। সেনারার কারেন্নি বর্ডার গার্ড ফোর্স (বিজিএফ)-এর চার সদস্যকেও হত্যা করে, যা বিজিএফ ব্যাটালিয়ন ১০০৪ নামে পরিচিত।
কেএনডিএফ জানিয়েছে, সেনারা বিজিএফ ব্যাটালিয়ন ১০০৪-এর চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করে ও বেঁধে রাখে। পরে তাদের মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়। কেএনডিএফ মোসো থেকে রিপোর্ট পেয়েছে, শুক্রবার গ্রামের কিছু বাসিন্দা নিখোঁজ হয়েছে এবং তারা ক্ষতিগ্রস্তদের পরিচয় নিশ্চিত করার চেষ্টা করবে।
কেএনডিএফের একজন মুখপাত্র জানান, ‘এটি একটি অমানবিক কাজ। আমরা এ ঘটনায় নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। এবং ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় আমরা সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেব।’
আরও পড়ুনঃ কেন্দ্র সরকারের সুশাসনের তালিকায় শীর্ষে গুজরাট, সবার শেষে বাংলা
শনিবার জান্তার পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, শুক্রবার মায়ানমারের সেনাবাহিনীর সেনারা কোয়াং এনগান গ্রাম থেকে মোসোর দিকে আসার সময় তাদের বহনকারী সাতটি গাড়িকে লক্ষ্য করে ট্রাক থেকে গুলি চালানো হয়। পাল্টা গুলি চালালে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরে হামলাকারীরা ‘মৃত অবস্থায় ধরা পড়ে’। বিবৃতিতে বন্দুকযুদ্ধে কজন নিহত হয়েছে বা মোসো গ্রামের কাছে পাওয়া পোড়া লাশের বিষয়ে কোনো কথা বলা হয়নি।
আরও পড়ুনঃ ফিরল সেই স্তম্ভিত স্মৃতি! গোলকিপারের সঙ্গে ধাক্কায় পর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাঠেই মৃত্যু ফুটবলারের
কেএনডিএফ জান্তার দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। জোর দিয়ে বলেছে, নিহতরা গ্রামবাসী। তাদের মধ্যে নারী ও শিশু ছিল। তাদের কাছে অস্ত্র থাকবে কিভাবে? তারা সংঘর্ষের মধ্যে ভয়ে দৌড়ে পালায় এবং জান্তা সেনারা তাদের ধরে গাড়িতে বন্দি করে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারে। তবে নিশ্চিত করতে পারেনি, নিহতদের হত্যার পরে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে, নাকি জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে।
কারেন্নি দেশের প্রথম এলাকাগুলোর মধ্যে একটি যেখানে ১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পর সশস্ত্র প্রতিরোধ শুরু হয়েছিল। কারেন্নি সিভিল সোসাইটি নেটওয়ার্ক গত সপ্তাহে রিপোর্ট করে, সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে কায়াহ রাজ্যের কারেন্নি এলাকায় এবং দক্ষিণ শান রাজ্যের পেখোন টাউনশিপে দেড় লাখেরও বেশি বেসামরিক লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584