শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে একদিকে হাসপাতালে লড়াই করছেন চিকিৎসকরা। তার পরেও সমাজে তাদের লড়তে হচ্ছে এক অদৃশ্য সামাজিক অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে। এমনই অভিজ্ঞতা হল কাঁকুড়গাছির বাসিন্দা এক চিকিৎসকের। নিজে চিকিৎসক হয়েও করোনা আক্রান্ত নিজের দিদাকে প্রথমে হাসপাতালে ভর্তি করাতে নাকাল তো হলেনই, এমনকি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে ফের তিনি ফিরে এলে তাকে আবাসনে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। কেন করোনা আক্রান্তদের প্রতি এরকম আচরণ করা হচ্ছে, সেই বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এই চিকিৎসক।

জানা গিয়েছে, ৭০ বছর বয়সী চিকিৎসকের দিদা বেশ কয়েক বছর ধরে মধুমেহর সমস্যায় ভুগছেন। বৃদ্ধার এক নাতি এবং নাতজামাই সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক হওয়ায় তাঁরাই এতদিন বৃদ্ধার দেখভাল করতেন। তবে গত ৩১ জুলাই তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে কোনও সরকারি কিংবা বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সেই অনুযায়ী তাঁকে সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাঁর করোনা পরীক্ষা করা হয়। রিপোর্ট আসার পর জানা যায়, ওই বৃদ্ধা করোনা আক্রান্ত। ২ আগস্ট ওই বৃদ্ধাকে বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। মেডিক্যাল সার্টিফিকেটে হোম আইসোলেশনে থাকার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
আরও পড়ুনঃ ফের করোনা আক্রান্তের ঘটনায় সি-টি ভ্যালু প্রয়োগ করতে চাইছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ
কিন্তু এত দ্রুত হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে যাওয়ায় কাঁকুড়গাছির আবাসনে বৃদ্ধাকে নিয়ে যাওয়ার পরই রুখে দাঁড়ান প্রতিবেশীরা। বেসরকারি হাসপাতালের থেকে দেওয়া সার্টিফিকেট দেখালেও তারা তা মানতে চাননি। উল্টে করণে আক্রান্ত বৃদ্ধাকে নিয়ে এলে তারা সকলে করণ আক্রান্ত হয়ে পড়বে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেন বাধ্য হয়ে মানিকতলা থানায় খবর দেওয়া হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে। তবে তাতেও রাজি হননি প্রতিবেশীরা। বাধ্য হয়ে না চাইলেও ওই বৃদ্ধাকে কোনও সরকারি কিংবা বেসরকারি হাসপাতালে রাখার ফের সিদ্ধান্ত নিতে হয় চিকিৎসককে।
আরও পড়ুনঃ এবার ১০০ ফুট দূর থেকেও জল ছুঁড়ে আগুন নেভাবে দমকলের ৪ রোবট
কিন্তু খোঁজ খবর করেও কোনও বেসরকারি হাসপাতালে বৃদ্ধাকে ভর্তি করতে পারেননি। এমনকি সরকারি ওয়েবসাইটে ফর্মপূরণ করেও তবে ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ। বাধ্য হয়ে দিদাকে বরাহনগরের এক নার্সিংহোমে ভর্তি করিয়ে দেন চিকিৎসকের পরিবার। কিন্তু সেখানে মাত্র ১৮ ঘণ্টার জন্য ৫২ হাজার টাকা দাবি করা হয়।
অবশেষে এক পরিচিতের মাধ্যমে ওই বৃদ্ধাকে সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করাতে পারে পরিবার। নিজে চিকিৎসক হয়েও যেভাবে করোনা আবহে তিনি এবং তার পরিবার সামাজিক হেনস্থার শিকার হলেন, তা অনভিপ্রেত দাবি করে চিকিৎসক বলেন, ‘করোনা আতঙ্কে যেন মানবিকতাই হারিয়ে ফেলছি আমরা।’
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584