এক আয়োজনে দুই প্রেমিকার সাথে গাঁটছড়া বাঁধলেন ছত্তিশগড়ের যুবক

0
83

নিজস্ব সংবাদদাতা, ওয়েব ডেস্কঃ

স্ত্রীকে প্রতারণা এমন ঘটনা নতুন নয়। কিন্তু দুই নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ককে মর্যাদা দিয়ে সহমতের ভিত্তিতে স্বেচ্ছায় ঘর বাঁধার বিরল দৃষ্টান্ত তৈরি করলেন ছত্তিশগড়ের আদিবাসী সম্প্রদায়ের যুবক।

Chattisgarh marriage | newsfront.co
দুই স্ত্রীর সাথে চন্দু মৌরিয়া। ছবিঃ বিবিসি বাংলা

মাওবাদী প্রভাবিত বস্তারে, চন্দু মৌরিয়া তার দুই প্রেমিকা সুন্দরী কাশ্যপ এবং হাসিনা বাঘেল – দুজনকে একই দিনে, একই মন্ডপে বিয়ে করেছেন যাবতীয় সামাজিক রীতি মেনে। গত রবিবারে এমন বিয়ের সাক্ষী হলেন তাঁদের আত্মীয় পরিজনেরা। বিয়ের পরে চারদিন ধরে চলেছে আনন্দ উৎসব। চন্দু এবং হাসিনার পরিবার বিয়েতে উপস্থিত থাকলেও সুন্দরীর পরিবারের কেউ বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন না।

Wedding ceremony | newsfront.co
বিবাহ

মুরিয়া জনজাতির যুবক চন্দুর বয়স ২৪। তার থেকে বছর তিনেকের ছোট বড় স্ত্রী সুন্দরী, আর ছোট স্ত্রী হাসিনা চার বছরের ছোট। পেশায় চন্দু একজন কৃষক। বছর তিনেক আগে সুন্দরীদের গ্রামে কোন কাজে গিয়েছিলেন চন্দু। সেখানেই সুন্দরীর সঙ্গে আলাপ হয়। তারপরে ফোনালাপে গড়ে ওঠে প্রেম।

Invitation card | newsfront.co
আমন্ত্রণপত্র

এর বছর খানেক পরে হাসিনা চন্দুদের গ্রামে একটি বিয়ে বাড়িতে যায়। সেখানে হাসিনাই চন্দুকে তার ফোন নম্বর দিয়ে ফোন করতে বলে। চন্দু ভেবেছিলেন বন্ধুত্ব পাতাতে চাইছে। কিন্তু না! বেশ কিছুদিন কথা হওয়ার পর হাসিনা জানান তিনি প্রেমে পড়েছেন চন্দুর।

আরও পড়ুনঃ উদ্ধব ঠাকরের মন্তব্যে ঔরঙ্গাবাদের নাম বদলের জল্পনা, শুরু বিতর্ক

প্রথমে সমস্যায় পড়লেও চন্দু পরে সবটা খুলে বলেন পুরোনো প্রেমিকা সুন্দরীকে। সুন্দরীরও যে প্রথমে একটুও খারাপ লাগেনি এমন নয়, কিন্তু তিনি হাসিনার সঙ্গে কথা বলতে চান। সুন্দরী সংবাদ মাধ্যমকে জানায় যে, “মোবাইলে কথা বলে আমার বেশ ভাল লেগেছিল। আমরা দুজনে দুজনকে বোন বলে ডাকতে শুরু করেছিলাম। আমাদের দুজনের দেখাও করিয়ে দিয়েছিল চন্দুই।”

Chandu Mouria | newsfront.co
চন্দু মৌরিয়া

ইতিমধ্যে হাসিনা তার গ্রাম ছেড়ে চন্দুর গ্রামে চলে আসেন একসঙ্গে থাকবেন বলে। মুরিয়া জনজাতির মধ্যে বিয়ের আগেই যুবক-যুবতীর এক সঙ্গে থাকার প্রচলন রয়েছে। এদিকে হাসিনা চন্দুর সঙ্গে থাকতে চলে এসেছে জানতে পেরে সুন্দরীও এসে হাজির হন চন্দুর বাড়িতে।

আরও পড়ুনঃ একা গাড়ি চালালে মাস্ক বাধ্যতামূলক নয়, দিল্লি হাইকোর্টে জানাল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক

এই পরিস্থিতিতে চন্দুর মা পরামর্শ দেন, দু’জনকেই একসাথে বিয়ে করার। সেটা সুন্দরীর পরিবার মানতে পারে নি, তারা সুন্দরীকে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। চন্দু জানান, “একদিন সুন্দরী বাড়ি থেকে পালিয়ে আমাদের বাড়িতে চলে আসে। সেই থেকে আমরা তিনজনেই একসঙ্গে থাকছিলাম আমাদের বাড়িতে। বাবা-মা আর পরিবারের অন্যান্যরাও আছেন।

চান্দু আরও বলেন, “আমার মা-ই একদিন বলেন বিয়ে করে নিতে। সমাজ থেকেও বলা হয়। কিন্তু আমি কিছুটা দ্বিধায় ছিলাম। ” সুন্দরী এবং হাসিনা অবশ্য এক কথায় রাজি হয়ে গিয়েছিলেন স্বামীকে ভাগাভাগি করে নিতে। কিন্তু কিছুটা দ্বিধা ছিল চন্দুর।

দুজনকে বিয়ে করলে বন্ধুরা হাসাহাসি করবে!, একসঙ্গে যখন গ্রামে বেরোলে লোকে কি বলবে, এসব ভাবনা কাজ করছিল তার মধ্যে। কিন্তু সুন্দরী ও হাসিনা দুজন রাজি হয়ে যাওয়ায় চন্দুর এই দ্বিধা আর বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। তিন জনেই জানিয়েছেন, ‘কোনও সমস্যা হয় না আমাদের মধ্যে’।

এই বিয়ের অভিনব জিনিস হচ্ছে বিয়ের নিমন্ত্রণপত্রটি, সেখানে মাঝখানে রয়েছে পাত্রের নাম চন্দু মৌরিয়া, আর দু’দিকে দুই পাত্রীর নাম। চন্দুর বড় স্ত্রী সুন্দরী বলেন, “আমরা তিনজন তো বছরখানেক হয়ে গেল একসঙ্গেই আছি। কোনও সমস্যা হয় না আমাদের মধ্যে। সব কাজ মিলে মিশেই করি। আর হাসিনা তো আমার বোনের মতো। ওকে আমি ডাকিও বোন বলেই।”

এখন প্রশ্ন আদিবাসী সমাজ এবং তিনটি পরিবার এই বিয়ে মেনে নিলেও আইন কী মানবে এই বহুবিবাহ? আদিবাসী সমাজের এক নেতা প্রকাশ ঠাকুর জানিয়েছেন, “এরা তিনজনেই সাবালক এবং মুরিয়া সমাজের মানুষ। ওই সমাজে বহুবিবাহে কোনও বাধা নেই।” আইনজীবীরা বলছেন হিন্দু বিবাহ আইন এক্ষেত্রে কার্যকর হবে না কারণ তপশীলি জাতির নাগরিকদের ওপরে হিন্দু আইন বলবৎ করা যায় না।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here