ছেলে ডাস্টবিনে কবেই ছুঁড়ে দিয়েছে, লকডাউন বাঁচার দরজাটাতে তালা মেরেছে

0
68

নিজস্ব সংবাদদাতা, পূর্ব মেদিনীপুরঃ

ছেলের সমন জারি বাড়িতে খেতে রোজ বাবাকে দিতে হবে ৩০ টাকা! না দিতে পারলে সেদিন উপোস। করোনার করাল গ্রাসে অসহায় বৃদ্ধ আজ কর্মহীন। বিধাতার অমোঘ লেখনিতে সত্তর বছরের পঙ্গু পিতার ঠাঁই এখন ভাঙাচোরা দালানে। পাপী পেটকে সচল রাখার উপায় পথচলিত লোকের দেওয়া খাবার। পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলের গঙ্গাধর সামন্তর করুন কাহিনী সমাজের নগ্ন রুপটা আরও প্রকট করেছে।

aged Man | newsfront.co
নিজস্ব চিত্র

সে অনেক দিন আগের কথা, ভাঙা ঘর আলো করল তিন সন্তান। একটি ছেলে, আর দুই মেয়ে। দাম্পত্যর পূর্ণতার খুশি চোখে মুখে। জীবনের সমস্ত স্বাদ আল্লাদ কে বিসর্জন দিয়ে রাস্তায় রাস্তায় হকারি করে ছেলে মেয়েদের মানুষ করল। জীবনের চক্রব্যূহে মেয়েরা পাড়ি দিয়েছে স্বামীর বাড়ি, ছেলেও ব্যস্ত নিজের সংসার নিয়ে। বৃদ্ধ ভেবেছিল ছেলের কাছে নাতি নাতনি দের নিয়ে বাকি জীবনটা আনন্দে কাটিয়ে দেবে। কিন্তু ছেলে তো বৃদ্ধ পিতাকে আরও বড় উপহার দিল, ছেলে বিধান দিল তার কাছে থাকতে, খেতে গেলে রোজ দিতে হবে তিরিশ টাকা। সেটাও এক বেলার জন্য। বৃদ্ধর কথায় – পরে তিরিশ টাকা থেকে সেটা বেড়ে চল্লিশ টাকা হয়, কারণ জিনিস পত্রের দাম যে বেড়েছে।

Gangadhar Samanta | newsfront.co
গঙ্গাধর সামন্ত। নিজস্ব চিত্র

দিশেহারা বৃদ্ধ মাথায় আইসক্রিমের বাক্স আর হাতে চকলেট এর ব্যাগ নিয়ে বিভিন্ন স্কুলের সামনে রাস্তার মোড়ে হাঁক পাড়ত – আাইসক্রিম নাও, চকলেট নাও। দুপুরের খাবার বলতে কোন কোন স্কুলের কিছু শিক্ষক শিক্ষীকাদের দেওয়া মিড ডে মিলের রান্না। কিংবা রাস্তার পাশে কোন অনুষ্ঠান বাড়ির খাবার। রোদ বৃষ্টিও তখন তার কাছে ফিকে। তাকে যে রোজগার করতেই হবে। নাহলে যে ছেলের কাছে রাতের খাবার জুটবেনা।

old man | newsfront.co
থমকে যাওয়া জীবন ফের সচলের আশায়। নিজস্ব চিত্র

আরও পড়ুনঃ সোশ্যাল মিডিয়ায় সাড়া, অসুস্থ ছাত্রীর পাশে শিক্ষক

করোনা আর আমপানের প্রভাবে রাস্তা ঘাট জন মানব শূন্য। স্কুল, কলেজে তালা। আইসক্রিম নাও চকলেট নাও ঐ ডাক ও বন্ধ। লকডাউন কেড়ে নিল বাঁচার শেষ রসদটাও। না, ঐ বৃদ্ধ আর পারেনি ছেলের হাতে তিরিশ টাকা তুলে দিতে। খাবার বন্ধের সাথে বাড়ির দরজাটাও বন্ধ হয়ে যায়। তাই মূমুর্ষ বৃদ্ধ মাথা গোঁজার জায়গা করে নিয়েছে মহিষাদল রাজ বাড়ির ভাঙা দালানে। রাস্তার লোকজন কিছু খাবার কিনে দেয় তা দিয়ে কোন রকম চলে যায়। কোনো সহৃদয় ব্যক্তির দেওয়া ছেঁড়া পাতনিতে কোন রকমে পড়ে আছে। এই ভাবেই কেটে গেছে প্রায় দুমাস। না ছেলে কোনো খোঁজ নেয়নি। “পিতা স্বর্গ পিতা ধর্ম” এটার মানেও হয়ত জানে না।

বৃদ্ধ মানুষটির চোখের জল যেন জানান দিয়ে যায়, “ছেলে তো ডাস্টবিনে কবেই ছুঁড়ে দিয়েছে। আর লকডাউন তার বাঁচার শেষ দরজাটাতেও তালা মেরে দিয়েছে”। তবে লকডাউন কিছুটা লঘু হলেও স্কুল কলেজ বন্ধ। থমকে যাওয়া জীবনের প্রদীপ আবার জ্বলার অপেক্ষায় দিন গুনছে বৃদ্ধ।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here