নিউজডেস্ক: এ রাজ্যে যখন চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে রোগীর পরিবার খড়্গহস্ত আবার চিকিৎসকরাও রোগীর পরিবারের লোকজনকে শত্রুপক্ষ ভাবছে তখন পাশের রাজ্য ওড়িশার 31বছর বয়সী তরুণ ডাক্তার ওমকার হোতা সারা দেশের কাছে সৃষ্টি করলেন এক বিরল নৈতিক দৃষ্টান্ত।
ঘটনার প্রকাশ এই যে, 31 অক্টোবর ওড়িশার জঙ্গলাকীর্ণ মালকানগিরি এলাকার শুভমা মার্সে নামের এক আদিবাসী নারীর প্রসব বেদনা ওঠায় কল পেয়ে স্থানীয় জনস্বাস্থ্য সেন্টারের ডাক্তার ওমকার হোতা দুর্গম পথ পেরিয়ে যখন রোগীর কাছে পৌঁছান ততক্ষনে অনেক রক্তক্ষরণ হয়ে গেছে,বাধ্য হয়ে সেখানেই সন্তান প্রসব কারন তিনি। কিন্তু প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় মায়ের জীবন বিপন্ন হয়ে ওঠে। হাসাপাতাল নিয়ে যাওয়া ব্যতীত অন্য বিকল্প ছিল না। কিন্তু এই দুর্গম এলাকা থেকে হাসপাতাল নিয়ে যাওয়ার অন্য কোনো ব্যবস্থা না পেয়ে রুগিকে একটি খাটিয়ায় তুলে তার স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালের পথ ধরেন চিকিৎসক ওমকার।
খাটিয়া কাঁধে নিয়ে প্রায় তিন ঘন্টার দুর্গম বন জঙ্গল নদী পথ পেরিয়ে হাসপাতালে পৌঁছান তিনি।ওমকার বাবুর এই প্রচেষ্টা সফল বর্তমানে মা ও শিশু দুইজনের অবস্থায় স্থিতিশীল।
এর পূর্বে এই এলাকায় যে সব চিকিৎসকরা এসেছিলেন একদিনের বেশি থাকেন নি। একদিকে এলাকার দুর্গমতা অপর দিকে মাওবাদী উপদ্রুত এলাকা হওয়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোন চিকিৎসকই সেখানে যেতে চান না। কিন্তু বছর খানেক আগে এই এলাকায় চিকিৎসক হিসাবে এসে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন ওমকার বাবু। মাওবাদী উপদ্রুত হওয়ার কারনে জরুরী চিকিৎসা ব্যবস্থা বাধাপ্রাপ্ত হয় একটি নির্দিষ্ট পথের পর অ্যাম্বুলেন্স যাওয়া ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ কিন্তু ওমকার সেখানে পেরিয়ে গেছেন সব বাধা। এই প্রথম নয় এর আগেও মুরারিগুদা, কাপাতুতি,সিন্তাগুনাল এলাকা থেকেও রোগী বহন করে হাসপাতালে এনেছেন তিনি।
কৈশরে শেষ করে ওমকার বাবু যখন সদ্য যুবক তখন জন্ডিস আক্রান্ত মা কে নিয়ে স্থানীয় হাসপাতালে গিয়ে অনুভব করেছিলেন চিকিৎসকদের অবহেলা, সেদিন মায়ের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন তিনি যে, ভবিষ্যতে চিকিৎসক হয়ে আর্তের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করবেন। সেই শপথকে তিনি সার্থক করে তুলছেন প্রতি মুহূর্তে। 2017’র 15 আগষ্ট জেলা শাসকের ‘সেরা ডাক্তার ‘পুরস্কার ওড়িশা সরকার ‘ডেডিকেটেড সার্ভিস ইন হেলথ কেয়ার’ সম্মানে ভূষিত করেছেন। তাঁর কৃতিত্ব নিয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান যে, “আমি ডাক্তার হয়েছি শুধু আমার মায়ের জন্য,তাই মা কে দেওয়া কথা রাখছি। এই সব অঞ্চলে চব্বিশ ঘন্টায় কাজ করতে হয় আর এভাবে কাউকে না কাউকে তো শুরু করতেই হবে। “
তথ্য সহায়তা: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস,আউটলুক
ছবি :ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস থেকে সংগৃহীত
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584