উজ্জ্বল দত্ত, কলকাতাঃ

প্রকাশ্য জনসভায় বিজেপি নেতা ও রাজ্য বিজেপির কোর কমিটির সদস্য শুভেন্দু অধিকারীর ‘মুখ বন্ধ’ করতে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মামলাটি আজ শুক্রবার খারিজ করে দিল কলকাতা আদালত। এছাড়াও মানহানির মামলা করার হুমকি দিয়ে আইনি নোটিস পাঠিয়েছেন অভিষেক আগেই। শুক্রবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবীর পাঠানো চিঠির উত্তর দিলেন শুভেন্দু অধিকারী। জবাবি চিঠিতে আগের বিভিন্ন ঘটনার কথা উল্লেখ করে বোঝানোর চেষ্টা করলেন শুভেন্দু।
চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘ভাইপো’ চিরকালই ‘অসহিষ্ণু’ ও ‘দুর্মুখ’ হিসেবে পরিচিত। স্রেফ টাকার জন্যই ভাইপো পার্টিতে এসেছেন। রাজ্যের সব জেলায় তোলাবাজির ডিলারশিপ চালু করেছে ‘ভাইপো’ ।
আসন্ন বিধানসভা ভোটের প্রচারে দু’জনের বাকযুদ্ধ তুঙ্গে। জনসভায় কেউ কাউকে এক ইঞ্চিও জমি ছাড়তে রাজি নন। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ‘তোলাবাজ ভাইপো’ স্লোগান তুলেছেন শুভেন্দু অধিকারী। তৃণমূল সাংসদকে ‘গরুচোর’, ‘কয়লাচোর’ বলেও কটাক্ষ করছেন তিনি। নারদকাণ্ডে টাকা নেওয়ার ভিডিও-কে হাতিয়ার করে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে পাল্টা সুর চড়িয়েছেন অভিষেকও। বিভিন্ন জনসভায় তিনি বলেছেন, ‘তাঁর বিরুদ্ধে যদি দুর্নীতি বা তোলাবাজির অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে প্রকাশ্যেই ফাঁসির মঞ্চে মৃত্যুবরণ করবেন’।
পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরিতে এক জনসভায় অভিষেককে সরাসরি ‘তোলাবাজ ভাইপো’ বলে নিশানা করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। ওই মন্তব্যের জন্য শিশির পুত্রকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন ডায়মন্ডহারবারের তৃণমূল সাংসদের আইনজীবী। বলা হয়েছিল, চিঠি পাওয়ার ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে নিঃশর্তে ক্ষমা না চাইলে আইনি পদক্ষেপ করা হবে। সেই চিঠির এবার পাল্টা জবাব দিলেন শুভেন্দু। জবাবি চিঠিতে তিনি লিখেছেন, “লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর মতো মণীষীদের অপমান করেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কারণটা সম্ভবত শিক্ষার অভাব ও ভুয়ো ডিগ্রি। নিজেকে নেতা ভাবলেও অহিষ্ণুতার কারণে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে একজন মানুষকে পিটিয়ে মেরা ফেলাকেও সমর্থন করেছিলেন তিনি।”
আরও পড়ুনঃ এটা বাজেট বক্তৃতা নয়, নির্বাচনী ইস্তাহারঃ রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়
শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, অভিষেক নিজেকে বাচ্চা ছেলে ও অপরিণত ভাবছেন। যদিও আগের নোটিসে কোথাও তাঁকে বাচ্চা বলা হয়নি। নিজের চিঠিতে অভিষেক নিজেকে বড় শিক্ষিত বিদুষক বলে দাবি করেছিলেন। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের দলত্যাগের কথা উল্লেখ করে শুভেন্দুর জবাব, “অভিষেক কতটা ‘শিক্ষিত বিদুষক’ তা বাংলার মানুষই বিবেচনা করবেন।’ চিঠির একবারে শেষে সাংসদ হিসেবে ‘ভাইপো’-কে তাঁর দায়িত্বের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি। উল্লেখ করেছেন, সংসদের স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য হওয়া সত্ত্বেও ৩৪ মিটিং-এ যোগ দেননি অভিষেক। তাঁর আইনজীবীর পাঠানো চিঠি যে ভ্রান্ত ও ত্রুটিপূর্ণ, সেকথাও নিজের চিঠিতে লিখেছেন শুভেন্দু।
আরও পড়ুনঃ ১০ দফায় ভোটের দাবি রাজ্য বিজেপির
উল্লেখ্য, বিজেপি হয়ে প্রচারে নেমে এখন প্রতিটি জনসভায় তৃণমূল ও দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চড়া সুরে আক্রমণ করছেন শুভেন্দু। তবে ‘ভাইপো’ সম্বোধনে অভিষেকের বিরুদ্ধে আক্রমণের ঝাঁঝটাই বেশি। জনসভায় তাঁর বিরুদ্ধে ‘তোলাবাজ’, ‘কয়লা পাচারকারী’-র মতো ‘আপত্তিকর’ অভিযোগ তোলার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারির আর্জি জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন তৃণমূল সাংসদ। সেই মামলাটি এদিন খারিজ করে দিয়েছে আদালত।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584