নিজস্ব সংবাদদাতা, পূর্ব মেদিনীপুরঃ
শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর ক্রমাগত বিজেপির সভায় তোলাবাজ ভাইপো এবং প্রাইভেট কোম্পানি বলে তৃণমূলকে কটাক্ষ করেছিলেন তিনি। এবার তাঁর গড়ে দাঁড়িয়ে শুভেন্দু–সহ গোটা পরিবারকে ‘মীরজাফর কোম্পানি’ বলে তুলোধনা করলেন তৃণমূল কংগ্রেসের যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘এই মাঠে যা লোক হয়েছে, তাঁরা ভোট দিলেই তো মীরজাফর কোম্পানির জামানত জব্দ হবে। মেদিনীপুরের মানুষ বিশ্বাসঘাতকতা সহ্য করবে না। জেলার মানুষের বিশ্বাসভঙ্গ করেছেন যাঁরা, তাঁদের মানুষ ক্ষমা করবেন না। বিশ্বাসঘাতকদের ঝেঁটিয়ে বিদায় করবেন কথা দিন।’
শুভেন্দু অধিকারীও যেমন নাম না নিয়ে তোপ দাগেন সেই একই ইঙ্গিতে অভিষেক বন্দোপাধ্যায় তোপ দাগলেন অধিকারী পরিবারের বিরুদ্ধে। এখান থেকে তিনি জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘জোরে আওয়াজ তুলুন, শান্তিকু্ঞ্জ যেন থরথর করে কাঁপে। যাঁর নেতৃত্বে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা হয়েছিল, তাঁর পদলেহন করছে। অবিভক্ত মেদিনীপুর বশ্যতা স্বীকার করতে পারে না। যাঁরা এই মাটিকে কালিমালিপ্ত করেছেন, তাঁদের মেদিনীপুর থেকে বিতাড়িত করতে হবে।’ এরপর অবশ্য ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ তথা তৃণমূলের যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সেই চিঠি সামনে আনেন। যেটা পড়তে গিয়ে শুভেন্দু অধিকারীর নাম নিতে হয়।
তিনি বলেন, ‘এই দেখুন সুদীপ্ত সেনের চিঠি। এখানে লেখা, শুভেন্দু টুক সিক্স ক্রোড় রুপি। ক্ষমতা থাকলে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াক। আমাকে ধমকে চমকে লাভ নেই। এটা নাকি অধিকারীদের গড়। কীসের গড়! এটা মানুষের জেলা। মানুষের গড় এটা। আমাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছে। পারেনি। বলছে, রাজ্য–কেন্দ্রে এক সরকার লাগবে। কেন? চুরি করতে সুবিধা হবে নাকি! ডাবল ইঞ্জিন সরকার চাই। বলছে, মোদীজির হাতে বাংলাকে তুলে দিতে হবে। বাংলা কি মোয়া নাকি! আমায় তুই-তোকারি করছে। আমি করি না। তবে বেইমানদের তুই বলি। ভিতর থেকে সম্মান আসে না।’
এইদিন তিনি আরও বলেন, ‘আমার বউ নাকি ২ বছর আগে এয়ারপোর্টে সোনা নিয়ে ধরা পড়েছিল। তোর সিআইএসএফ কি নাকে তেল দিয়ে ঘুমোচ্ছিল? সেখানে তো ৫০০ টি সিসিটিভি লাগানো ছিল, সেই ফুটেজগুলো এখন প্রকাশ করছে না কেন? আমিতো তারপরের দিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বসে ছিলাম। আমার নামে তোলাবাজির একটা প্রমাণ দিতে পারলে ফাঁসির মঞ্চে মৃত্যুবরণ করব। আমার বউয়ের কলকাতা ছাড়া কোথাও অ্যাকাউন্ট নেই।’ এদিন সভাপতিত্ব থেকে এমনটাই মন্তব্য করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ওরা বলে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি।
আরও পড়ুনঃ কলকাতায় রাজ্য বিজেপি দফতরে কংগ্রেসের বিক্ষোভ
এই কোম্পানি থেকেই স্বাস্থ্যসাথী, কন্যাশ্রী হয়েছে। একজন ৩৫টা পদ নিয়ে বসেছিল। একজন তিনটে দফতরের মন্ত্রী, এতগুলি পারিষদ, কেন অন্যদের সুযোগ দেয়নি! এখন মনে হচ্ছে, গ্রাম বনাম শহরের লড়াই,ঠিক আছে মানুষকে বোকা বানানো এত সহজ নয়। মানুষ সবকিছু বুঝে নিচ্ছে, ঠিক সময়ে তার যোগ্য জবাব দিয়ে দেবে, বলে জানান তৃণমূল যুব সভাপতি। পাশাপাশি পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে সভা করতে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন নন্দীগ্রাম হয়ে লড়াই করবেন, অর্থাৎ প্রার্থী হবেন,সেই প্রসঙ্গ নিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় শুভেন্দুকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন।
আরও পড়ুনঃ ডেবরায় বিরোধীদের ছবি করে দেওয়ার হুমকি সেলিমের গলায়
তিনি বলেন, যেখানে উনি দাঁড়াবেন ৫০ হাজার ভোটে হারানো হবে তাকে। পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘যে মায়ের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে, তাকে বিশ্বাস করা উচিত? যতবার প্রয়োজন হবে মেদিনীপুরে আসব। মেদিনীপুরের ঐতিহ্য রক্ষা করার লড়াই। আমি মা–বোনেদের বলে যাচ্ছি, ভয় পাবেন না। কারও ধমকে ভয় পাবেন না। এটা শুধু তৃণমূল সরকারের লড়াই নয়।
এটা মেদিনীপুরের অস্তিত্বের লড়াই। সম্মানের লড়াই। আমি ভোটের আগে আবার আসব।’ এক কথায় বলা যায় রাজ্য রাজনীতিতে যেভাবে পারদ ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে তাতে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে খুব টক্কর লড়াই হতে চলেছে বিজেপি বনাম তৃণমূলের তা বলাই বাহুল্য।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584