জৈদুল সেখ, মুর্শিদাবাদঃ
গঙ্গা ভাঙনের সমস্যা দীর্ঘদিনের, গত দুবছর ধরে এই সমস্যা এতো প্রবল হয়েছে যে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম, তলিয়ে যাচ্ছে ভিটেমাটি। তাই গঙ্গা ভাঙন রোধ নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখতেই শুরু হয়েছে কংগ্রেস এবং তৃণমূলের রাজনৈতিক তরজা।
উল্লেখ্য, প্রতিবছরের মতো এবছরও মুর্শিদাবাদের ফারাক্কার কুলদিয়ার চর সহ হোসেনপুর চর ভাঙ্গনের কবলে। গত পাঁচ দিন ধরে শুরু হয়েছে গঙ্গা ভাঙ্গন, যার ফলে আতঙ্কিত জেলাবাসী। গত পাঁচ দিনের ভাঙনে গঙ্গার জলে তলিয়ে গিয়েছে দেড়শোর বেশি বাড়ি। কিছুদিন আগে মালদার মার্জিনাল বাঁধ ভেঙে গঙ্গা নদীর জল ঢুকে পড়ে সরকারটোলা ও চিনাবাজার গ্রামে। এই ভাঙনের জেরে দুই গ্রামের অন্তত ১১০টি বাড়ি নদীগর্ভে চলে যায়। দুশোর বেশি পরিবার ভাঙনের আশঙ্কায় ঘরবাড়ি ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছে।
আরও পড়ুনঃ বজ্রাঘাতে মৃত ব্যক্তির পরিবারের হাতে আর্থিক সাহায্য তুলে দিলেন সাংসদ খলিলুর রহমান
এমতবস্থায় মালদা এবং মুর্শিদাবাদে গঙ্গানদীর ভাঙনকে জাতীয় বিপর্যয় হিসেবে ঘোষণা করে যাতে করে এই সমস্যার স্থায়ী প্রতিকার করতে পর্যাপ্ত তহবিল বরাদ্দ করা এবং দীর্ঘমেয়াদী গঙ্গা ভাঙন রোধের ব্যবস্থা করা যায়। তার জন্য গত শনিবারে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানিয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি এবং লোকসভার নেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী।
নরেন্দ্র মোদিকে এক চিঠিতে অধীর জানান,” গঙ্গা ভাঙনের ফলে প্রচুর পরিমাণ উর্বর জমি দিনের পর দিন গঙ্গার গ্রাসে চলে যাচ্ছে। দুই জেলার অসংখ্য মানুষ নব্য-উদ্বাস্তু হচ্ছেন। তাছাড়া বাস্তুহারা হচ্ছেন, জীবন নষ্ট হচ্ছে। কারও ক্ষেত্রে দারিদ্র অপরাধের পথে নিয়ে যাচ্ছে। তৈরি হচ্ছে নব্য-উদ্বাস্তুরা, সেই সঙ্গে জন্ম হচ্ছে নতুন সমস্যার।’
আরও পড়ুনঃ রেড ভলেন্টিয়ার্সদের উদ্যোগে সাদিখাঁর দিয়াড় গ্রামীণ হাসপাতাল স্যানিটাইজেশন
প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিতে অধীর আরও জানান, ‘ইউপিএ সরকারের আমলে এই সমস্যার জন্য বড়সড় অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছিল। আমার অনুরোধ, দয়া করে গঙ্গার ভাঙনের প্রতিকারে পর্যাপ্ত তহবিল দিন এবং বাস্তুহারাদের জীবন বাঁচান।’
অধীরের চিঠি দেওয়াকে কটাক্ষ করেছে তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা মুর্শিদাবাদের সাংসদ আবু তাহের খান, তিনি বলেন “এতোদিন কোথায় ছিল? আজ পর্যন্ত তিনি দিল্লি থেকে কোনও প্রকল্প আনতে পারেনি। লোক দেখানো চিঠি দিয়ে কী লাভ? বরং আমি নিজে লোকসভায় একাধিক বার এবং রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকেও গঙ্গা ভাঙন রোধের দাবী জানিয়েছি কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার বিমাতৃসুলভ আচরণ করেছে। যদিও রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ”
এ প্রসঙ্গে মুর্শিদাবাদ জেলার কংগ্রেস মুখপাত্র জয়ন্ত দাস বলেন ” গঙ্গা ভাঙন রোধ নিয়ে রাজনীতি করার কিছু নেই, গঙ্গা ভাঙনকে জাতীয় বিপর্যয় হিসাবে ঘোষণা করে, স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধ করতে অধীর রঞ্জন চৌধুরী কেন্দ্রীয় সরকারকে যেমন চিঠি দিয়েছে তেমনি যেহুতু রাজ্য সরকারের সেচ দপ্তরের আওতায় পড়ে তাই রাজ্য সরকারকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে। আমরা তো সকলেই চাই গঙ্গা ভাঙন সমস্যার স্থায়ী সমাধান হোক।”
আরও পড়ুনঃ কান্দিতে বোমা উদ্ধার ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য
এরপর জয়ন্ত দাস তৃণমূলকে কটাক্ষের সুরে বলেন ” গঙ্গা ভাঙন রোধ এবং কান্দিতে বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য দীর্ঘ আন্দোলন ফলে কান্দির মাষ্টার প্লান পেয়েছে। তারা পারলে দিল্লিতে গিয়ে দরবার করুক। ” এখন দেখায় বিষয় যে ভাঙন নিয়ে রাজনৈতিক ভাঙন ধরবে, নাকি আম্ফান কিংবা ইয়াসের তান্ডবে তলিয়ে যাবে জীবন এবং জীবনের অজস্র স্বপ্ন! সাধারণ মানুষ উত্তরের অপেক্ষায়।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584