অযোধ্যা মামলার রায় নিয়ে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রাক্তন বিচারপতি রঞ্জন গগৈ-এর আত্মজীবনীতে

0
268

শরীয়তুল্লাহ সোহন, ওয়েব ডেস্কঃ

১৯৯২ সালে ৬ ই ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাও-এর আমলে একদল উগ্রবাদী শক্তির তান্ডবে ধ্বংস হয় দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির পীঠস্থান বাবরি মসজিদ। তারপর দুই যুগ পেরিয়ে গেছে আইনি কাঠগড়ায়। রামের জন্মস্থান অযোধ্যায়, যেখানে বাবরি মসজিদ ছিল সেখানে রামের জন্ম হয়েছিল এবং সেখানে এক মন্দির ছিল, সেই মন্দির ধ্বংস করে ১৪৯৮ সালে মোঘল সম্রাট বাবর এই মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন, এই অজুহাতে মসজিদটি ধ্বংস করা হয়। অবশেষে দীর্ঘদিন ধরে আইনি জটিলতা চলার পর ২০১৯ সালে ৯ ই নভেম্বর বাবরি মসজিদ-রাম মন্দির কেসের ঐতিহাসিক রায় প্রদান করেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। রায় প্রদান করেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি এবং রাজ্যসভার সাংসদ রঞ্জন গগৈ

Ranjan Gogoi | newsfront.co
রঞ্জন গগৈ। ফাইল চিত্র

যদিও রায় প্রদানের আগে সর্বোচ্চ আদালত স্বীকার করে নিয়েছিলেন, অযোধ্যায় যেখানে বাবরি মসজিদ ছিল সেখানে রাম মন্দিরের কোন প্রকার অস্তিত্ব খুঁজে পাননি। তবে দেশের বিরাট সংখ্যক জনগোষ্ঠী বিশ্বাস করে ঐখানে রামের জন্ম, তাই সেই বিশ্বাসকে সম্মান জানিয়ে মিউচুয়ালভাবে রায় প্রদান করা হয় এবং পুনরায় বাবরি মসজিদ নির্মাণের জন্য বিকল্প হিসেবে কয়েক একর জায়গা দেওয়া হয়।

সেই রায়ের দুই বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর সম্প্রতি বিষয়টি আবারও চর্চার মধ্যে এসেছে। কারণ গত বুধবার নিউ দিল্লিতে প্রাক্তন বিচারপতি গগৈ তাঁর আত্মজীবনী ‘জাস্টিস ফর দ্য জাজ’ প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি এক কলামে অযোধ্যা মামলার প্রসঙ্গ তুলে ধরে লিখেছেন, “এই মামলার রায় ঘোষণার পরে আদালত থেকে বেরিয়ে তিনি তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে হোটেল তাজ মানসিংহে যান এবং সেখানে তিনি তাঁর সহকর্মীদের জন্য সবচেয়ে দামি ওয়াইন অর্ডার করেছিলেন।” এছাড়াও তিনি লিখেছেন, “রায় ঘোষণা দেওয়ার পরের সন্ধ্যায়, ১ নম্বর কোর্টের বাইরে অশোক চক্রের নীচে একটা ফটোসেশনের আয়োজন করেছিলেন জেনারেল সেক্রেটারি। তারপর এই মামলায় আমার সহকর্মীদের নিয়ে হোটেল তাজ মানসিংহ ডিনারের জন্য যাই। সেখানে আমরা সবচেয়ে দামি এক বোতল ওয়াইন অর্ডার করি। আর এই পুরো কাজে নেতৃত্ব দিয়েছিলাম আমি সিনিয়র হওয়ার কারণে।”

Justice For The Judge Ranjan Gogoi

বিশেষভাবে উল্লেখ্য, রঞ্জন গগৈ-এর নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির এক বেঞ্চ এই মামলার রায়ের ঘোষণার দায়িত্বে ছিলেন। রঞ্জন গগৈ ছাড়াও আরও চারজন বিচারপতি হলেন, এস এ বোদে , ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, অশোক ভূষণ এবং এস আব্দুল নাজির। এই বেঞ্চ সেদিন রাম মন্দির নির্মাণের পক্ষে রায় দিয়েছিলেন। এই রায় ঘোষণার পরেই রঞ্জন গগৈ বিচারপতির পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন এবং রাজ্যসভার সাংসদ মনোনীত হন। গগৈ-এর পর পরবর্তী প্রধান বিচারপতি হন এস এ বোদে।

তবে এই বইয়ের এক কলামে সেই রায়ের প্রসঙ্গ তুলে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেন, “২০১৯ সালে তাঁর বিরুদ্ধে যে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছিল, তা আসলে প্রধান বিচারপতির নিরপেক্ষভাবে কার্যকারিতাকে বিপন্ন করার উদ্দেশ্যে।” তিনি বলেন, এপ্রিল মাসের এক শনিবার তাঁর বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগগুলি নিয়ে এক বেঞ্চ তৈরি করা হয় এবং বেঞ্চের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। তাছাড়া অভিযোগের শুনানি গুলো ছিল সংক্ষিপ্ত। আসলে কোন শুনানি হয়নি। আমি আমার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ গুলো নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলাম। বলেছিলাম প্রধান বিচারপতির কার্যকারিতা কে বিপন্ন করতে এমন অভিযোগ আনা হয়েছে। যদিও তিনি অযোধ্যা মামলায় পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চের দেওয়া রায়ে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করেছিলেন। এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে, তিনি বুধবার বই প্রকাশের সময় সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বলেন, “বেঞ্চের বিচারপতি হওয়া আমার উচিত ছিল না। আমি বেঞ্চের অংশ না হলেই ভালো হত। আমরা সবাই ভুল করি। এটা মেনে নেওয়ায় কারো কোন ক্ষতি নেই।”

আরও পড়ুনঃ গতকালের কপ্টার দূর্ঘটনায় মৃত্যু সেনা প্রধানের দেহরক্ষী বাংলার ছেলে সৎপাল রাই-য়ের, শোকস্তব্ধ পরিবার

বিশেষভাবে উল্লেখ্য, দেশের অনেক মানবাধিকার সংগঠন সহ একাধিক মুসলিম সংগঠন এই রায়কে, সর্বোচ্চ আদালতের রায় হিসেবে সম্মান জানালেও তারা এই রায়ে সহমত পোষণ করতে পারেনি। বরং ঐ রায় ঘোষণার পর থেকে ৬ ডিসেম্বরকে তারা গণতন্ত্রের এক কাল দিন হিসেবে মান্যতা দিয়ে মৌন প্রতিবাদের মধ্যে দিয়ে পুনরায় ন্যায় বিচারের আশা ব্যক্ত করেন। সম্প্রতি রঞ্জন গগৈ-এর স্বীকারোক্তি তাদের দাবিকে আরও জোরালো করবে।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here