শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
রাজনীতির অঙ্কের কাছে সাধারণ মানুষের জীবন যে কতটা তুচ্ছ, তা যেন ফের প্রমাণিত হয়ে গেল। যে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতা বিমল গুরুংয়ের বিরুদ্ধে ১২৮টিরও বেশি মামলা রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে মদন তামাং হত্যা মামলা থেকে পুলিশ কর্মী অমিতাভ মালিক খুনের মামলা।
কিন্তু বুধবার বিকেলে বিমল গুরুংয়ের আচমকা কলকাতা আগমন এবং তৃণমূলের প্রতি আস্থা প্রদর্শনে ২০২১ বিধানসভা ভোটের আগে সমস্ত হিসেবটাই যেন উল্টে গেল। আদৌ সেই মামলাগুলির বিচার হবে কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে ৷
আজ থেকে ঠিক ৩ বছর আগে ১৩ অক্টোবর ২০১৭ সালে পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবিতে বিমল গুরুংদের রক্তাক্ত–অগ্নিগর্ভ আন্দোলনে জ্বলন্ত পাহাড়কে শান্ত করতে ঝাঁপাতে হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের বাহিনীকে। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল গুরুংয়ের বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুনঃ বিধ্বংসী আগুনে জ্বলছে মুম্বইয়ের সিটি সেন্টার মল
দার্জিলিংয়ের রঙ্গিত নদীর তীরবর্তী সিংলার জঙ্গলে সিরুবাড়ি এলাকায় গুরুংয়ের খোঁজে গিয়েছিল পুলিশ বাহিনী। সেই দলে ছিলেন অমিতাভ মালিক। গুরুং বাহিনী আক্রমণ করে পুলিশকে। তাদের গুলিতেই মৃত্যু হয়েছিল রাজ্য পুলিশের সাব–ইন্সপেক্টর অমিতাভ মালিকের।
কফিনবন্দি অমিতাভ মালিকের দেহ আঁকড়ে ধরে স্ত্রী বিউটির কান্নার দৃশ্য চোখে জল এনে দিয়েছিল অনেকেরই। রাজ্য পুলিশের তৎকালীন ডিজি সুরজিৎ কর পুরকায়স্থকে বিউটি বলেছিলেন, ‘স্যার আমার সব শেষ। ওঁর (বিমল গুরুং) মাথায় গুলি করুন।’
আরও পড়ুনঃ বিজেপি আয়োজিত বিতর্কিত পুজোর অনুষ্ঠানে ডোনার নৃত্যানুষ্ঠান, সৌরভকে ঘিরে জল্পনা
স্ত্রী বিউটি মালিককে চাকরি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তবু তাদের আশা ছিল সুবিচার টা পাবেন। কিন্তু ভোটের স্বার্থে পাহাড় রাজনীতিতে গুরুং আর তৃণমূলের এই রাজনৈতিক মেলবন্ধন দেখে অমিতাভ মালিকের বাবা সৌমেনবাবু দৃশ্যতই হতাশ।
অমিতাভের বাবা মধ্যমগ্রামের পাটুলির শরৎকাননের বাসিন্দা সৌমেন মালিকের প্রশ্ন, ‘তা হলে প্রকৃত খুনি কে? কে মেরেছে আমার ছেলেকে? রাজনীতি মিলে গেল, সুবিচার আর পেলাম না!’ পুত্র হত্যায় মূল অভিযুক্ত গুরুংয়ের শাস্তি যে আর হবে না, সে কথা বুঝতে পেরেছে মধ্যবিত্ত পরিবারটি। প্রাপ্তি শুধু স্ত্রীর সরকারি চাকরি। এমনি তো প্রবাদ বলা হয় না, ‘বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে।’
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584