মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তোপ, ভারতে কাজ বন্ধের ঘোষণা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের

0
78

নিজস্ব সংবাদদাতা, ওয়েব ডেস্কঃ

সারা পৃথিবীব্যাপী মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সংকটের মুখে ভারত। তাদের সব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ‘ফ্রিজ’ করে দেওয়ায় এদেশে কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হল এই আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। ভারতে তাদের কর্মরত সব কর্মীকেও ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

Amnesty International | newsfront.co
ফাইল চিত্র

কিন্তু কেন এই সংস্থাকে ভারতে তাদের কাজ বন্ধ করে দিতে হল এই নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা তুলে নেওয়া, দিল্লিতে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের মতো ঘটনায় মোদী সরকারের সোচ্চারে সমালোচনা করার মাসুল গুনল এই সংস্থা বলে অভিমত সংশ্লিষ্ট মহলের।

ভারতে কোনও সংস্থা যদি বিদেশি অনুদান নিতে চায় তবে বিদেশি অনুদান (নিয়ন্ত্রণ)আইনে নথিবদ্ধ করা বাধ্যতামূলক। কেন্দ্রের অভিযোগ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তা করেনি।

কোনও অলাভজনক সংস্থা ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট (এফডিআই) বা প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে বিদেশি অর্থ নিতে পারে না, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সেটাই করেছে বলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অভিযোগ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, সেই কারণেই অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।

আরও পড়ুনঃ ক্যাগ রিপোর্ট ঘিরে বিতর্ক, ‘অফসেট ক্লজ’ বাতিল করল কেন্দ্র

মঙ্গলবার একটি প্রেস বিবৃতি জারি করে সংস্থা জানিয়েছে, ‘‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ভারতের সব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দিয়েছে সরকার। সেটা আমরা জানতে পেরেছি গত ১০ সেপ্টেম্বর। বাধ্য হয়ে সংস্থার সবরকম কাজকর্ম বন্ধ রাখা হয়েছে।“ ভারতের সব কর্মীকেও বসিয়ে দিয়ে যাবতীয় প্রচার ও গবেষণার কাজ বন্ধ করে দিতে তারা বাধ্য হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থা।

কেন্দ্রীয় সরকারের আনা সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে অ্যামনেস্টির বক্তব্য, ‘‘ভারত সরকারের ক্রমাগত মানবাধিকার সংগঠনগুলিকে অপদস্থ করার অপচেষ্টার এটা শেষ নিদর্শন। প্রমাণ হয়নি এমন অভিযোগ এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগের ভিত্তিতেই সরকার এই ব্যবস্থা নিয়েছে।“ দেশের প্রতিটি আইন কানুন মেনে তাঁরা কাজকর্ম করেন বলেও দাবি করেছেন সংগঠনের কর্মকর্তারা।

আরও পড়ুনঃ পিএম কেয়ারে আরবিআই এলআইসি-সহ রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কের দান ২০৫ কোটি

গত বছরের অগস্টে ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপ করে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা তুলে নেওয়ার পর কড়া নিয়ন্ত্রণ জারি হয়েছিল উপত্যকায়। মোবাইল, ল্যান্ডলাইন, ইন্টারেন্ট, কেবল টিভি-সহ যাবতীয় পরিষেবা বন্ধ করে রেখেছিল কেন্দ্র। তাতে জম্মু কাশ্মীরের নাগরিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে মোদী সরকারের চূড়ান্ত সমালোচনা করেছিল অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে দিল্লিতে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের সময়েও একই অবস্থান ছিল সংস্থার। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একটা বড় অংশ মনে করছেন, এই সব কারণেই অ্যামনেস্টির বিরুদ্ধে কেন্দ্রের এই পদক্ষেপ।

আরও পড়ুনঃ মহিলা যাত্রীর সুরক্ষায় দক্ষিণ-পূর্ব রেলের বিশেষ পরিষেবা ‘সহেলি’

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিয়ার এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর অবিনাশ কুমার বলেন, ‘‘দু’বছর ধরে ভারতে অ্যামনেস্টির কাজকর্মে বাধাদানের চেষ্টা চলছে। অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা কোনও আকস্মিক ঘটনা নয়। দ্ব্যর্থহীন ভাষায় সরকারের নানা অনৈতিক ও অমানবিক কাজকর্মের সমালোচনা করার জন্যই ইডি-সহ সরকারের নানা সংস্থার মাধ্যমে হেনস্থা করা হচ্ছে।

সাম্প্রতিক কালে দিল্লি সংঘর্ষে তার আগে জম্মু-কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। অ্যামনেস্টি শুধু অবিচারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিল। তার জন্য অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ-এর মতো ব্যবস্থা নেওয়া অনুচিত এবং অনৈতিক।”

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের দাবি, তাদের হাতে নাকি যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ আছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অভিযোগ, অলাভজনক সংস্থা হওয়া স্বত্বেও এফডিআই এর মাধ্যমে বিদেশি অনুদান নেওয়ার অভিযোগে ২০১৭ সালে অ্যামনেস্টির ভারতে থাকা বেশ কিছু অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দিয়েছিল ইডি।

আদালতের দ্বারস্থ হয়ে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিল সংস্থা। কিন্তু অ্যাকাউন্ট খোলেনি। তার উপর সম্প্রতি মামলা দায়ের করেছে সিবিআই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অনুমোদন ছাড়াই ব্রিটেন থেকে আসা ১০ কোটি এবং ২৬ কোটি টাকার দু’টি অনুদান গ্রহণের অভিযোগে এই মামলা এবং তার জেরেই অ্যাকাউন্ট ফ্রিজের সিদ্ধান্ত ইডির।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার রক্ষার জন্য লড়াই করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ভারত থেকে চলে গেলে আন্তর্জাতিক মহলে তার খারাপ প্রভাব পড়বে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here