মোহনা বিশ্বাস, ওয়েবডেস্কঃ
দক্ষিণবঙ্গের এক ঐতিহ্যবাহী পর্যটন কেন্দ্র হল সুন্দরবন। রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বাস এখানেই। বলা যায়, রয়েল বেঙ্গলের জন্যই বিখ্যাত সুন্দরবন। সুন্দরী, গরান, গেঁওয়া এই অঞ্চলের মাটিতেই ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে বছরে পর বছর। তবে গত বুধবার থেকে সুন্দরবনের চিত্রটা একেবারে বদলে গেছে। আমপান ধ্বংস করে দিয়েছে সব কিছু। এখন শুধু বন পড়ে আছে। সব খুইয়ে আজ নিঃস্ব সুন্দরবন।
শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আমপানের দাপটে ভেঙে গিয়েছে সুন্দরবনের বহু গাছ। মারা গেছে সুন্দরবনখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার সহ বহু পশু পাখি। জলের তোড়ে ভেসে গেছে ঘর বাড়ি। সেখানকার মানুষের সম্বল বলতে পরণের কাপড়টুকু ছাড়া আর কিছুই নেই। জমি জমা যা কিছু ছিল সব নষ্ট করে দিয়ে গেছে আমপান।
আরও পড়ুনঃ ২৬ মে পর্যন্ত শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন না পাঠানোর আর্জি জানিয়ে রেলমন্ত্রককে চিঠি রাজ্যের
সুন্দরবনের কাকদ্বীপ অঞ্চলের বাসিন্দা প্রণব বিশ্বাস। বয়স ৫০। মহারাষ্ট্র থেকে ছেলে ফিরে আসায় খুশিই হয়েছিলেন তিনি। সেখানে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন তাঁর ছেলে। ছেলে ফিরে এলে দু’জনে মিলে মাছের ব্যবসা শুরু করবেন। আগে থেকে এমনটাই পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন প্রণব বাবু। কিন্তু সব কিছু গোলমাল হয়ে গেল গত বুধবার। এতদিন প্রণববাবু যা কিছু সঞ্চয় করেছিলেন তা সবই ভেসে গেছে ঘূর্ণিঝড় আমফানের দাপটে। বাড়ি ও গবাদি পশুর সঙ্গে ভেসে গিয়েছে তাঁর স্বপ্নরাও। আপাতত ছেলের সঙ্গে তিনিও মুম্বইয়ে ফিরে গিয়ে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করতে চান।
আরও পড়ুনঃ করোনা – আমপানের পর দুই জেলায় এবার আতঙ্ক ট্যারেন্টুলার
তিনি জানান, ‘‘২০০৯ সালে আয়লার পর আমি নাসিকে গিয়ে সেখানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতাম। কিন্তু চার বছর আগে আমার বয়স হয়ে যাওয়ায় ছেলেকে ওই কাজে লাগিয়ে দিই। ১০,০০০ টাকা জমিয়েছিলাম মাছের ব্যবসা শুরু করব বলে। ছেলে ফিরে এলে দু’জনে মিলেই ব্যবসা করার পরিকল্পনা করি। কিন্তু সব শেষ। আমার বাড়ি, আমার সঞ্চয়, আমার গবাদি পশু। সব।” প্রণববাবুর দুই কন্যাও বিবাহযোগ্যা। তাঁদের বিয়ে দেওয়ার জন্যও প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। আপাতত তাই তিনি শ্রমিক সরবরাহকারী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। লকডাউন শেষে যাতে বাবা-ছেলে মিলে ফিরে যেতে পারেন মুম্বইয়ে। রোজগার করতে।
সুন্দরবন এলাকা থেকে এভাবেই পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। রাজ্যের সুন্দরবন বিষয়ক মন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা জানাচ্ছেন, সব কিছু আবার নতুন করে শুরু করতে হবে এই এলাকায়। আমপানের প্রকোপে কার্যত ধ্বংস হয়ে গেছে সুন্দরবন। আবার কবে নিজের রূপে ফিরবে সুন্দরবন, তা জানা নেই কারোর। তবে হাল ছাড়বেন না সেখানকার বাসিন্দারা। নতুন করে আবার সাজাবেন সুন্দরবনকে। আত্মবিশ্বাসে ভরপুর সুন্দরবনবাসীর এখন একটাই লক্ষ্য- ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করে নবরূপে সুন্দরবনকে আবার গড়ে তোলাই সেখানকার বাসিন্দাদের একমাত্র ব্রত।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584