নবনীতা দত্তগুপ্ত
নতুন, পুরনো মুখের ভিড়ে সমৃদ্ধ হয় টেলি এবং টলিজগত। সেই ভিড় থেকেই আজ একজন হাজির নিউজ ফ্রন্ট-এর ঘরে। তিনি অনন্যা সেনগুপ্ত। এই মুহূর্তে অবশ্য তিনি মণি আর তারাসুন্দরী নামেই অধিক পরিচিত দর্শকের কাছে। টেলিভিশন কোনও অভিনেতাকে করে তোলে দর্শকের আপনজন। যাকে বলা যায় ঘরের মানুষ।
ফলে সেই চরিত্রটিকেই মানুষ ভালোবেসে ফেলে। তাঁর আসল নাম জানার চেষ্টাও করে না। ওই চরিত্রের নামেই তাঁকে করে নেয় ঘরের সদস্য। ‘কী করে বলব তোমায়’ ধারাবাহিকের মণিও তেমনই একজন। যাকে দায়িত্বশীলা গৃহসদস্য ভাবতে এতটুকুও অসুবিধা হয় না। মানুষকে মণি ভাবতে বাধ্য করায়- হ্যাঁ, আমিই সেই মণি।
আমি কোনও মা কিংবা পিসিমণি কিংবা ভাল বৌদি কিংবা ভাল অন্য কোনও সদস্যের এক রূপ। আমি সব ঝক্কি নিজের কাঁধে তুলে নিতে প্রস্তুত, আমি বাড়ির সকলকে ভালোবাসা আর স্নেহ দিয়ে আগলে রাখতে প্রস্তুত, প্রয়োজনে কারোকে শাসন করতে আমার গলা কাঁপে না। হ্যাঁ, আমিই সেই মণি। আবার আমিই সেই তারা সুন্দরী, যে অল্প বয়সে স্বামীকে হারিয়েছে। যার ইচ্ছাগুলো প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার আগেই মারা গিয়েছে। যার উপর সংসারের দায়িত্ব দিয়ে চিরতরে বিদায় নিয়েছে বৌঠান।
আর যাওয়ার সময় বলে গিয়েছে- “আমার সংসারটাকে তুমি আগলে রেখো। আমার ছেলেমেয়েগুলোকে দেখো।”… সেই তারাসুন্দরীর কাছে তার বাপের বাড়ির সংসারটা বড় আদরের। দাদা এবং তার সন্তানদের ভাল রাখা, খুশি রাখা তার দায়িত্ব। সেখানে গোলযোগ বাঁধলেই সে গর্জে ওঠে।… এহেন মণি এবং তারাসুন্দরীর সঙ্গে দূরভাষে জমল আড্ডা। জেনে নিন কী বলছেন তিনি।
নিউজ ফ্রন্টঃ মণি কি কোথাও গিয়ে অনন্যার মতো?
অনন্যাঃ মণির চিন্তাভাবনার সঙ্গে অনন্যার চিন্তাভাবনার মিল আছে। মানুষকে সে বিশ্বাস করে, বিশ্বাস করে ঠকে, টানটান শিরদাঁড়ার একজন মহিলা। আবার অন্যায় দেখলে কারোকে সপাটে চড় মারতে ইচ্ছে হলেও নিজেকে সামাল দেয় সে। নিজের উপর খুব ভাল নিয়ন্ত্রণ আছে মণির, এমনকী অনন্যারও। আমি সিন-এ থাকার সময় বা স্ক্রিপ্ট পড়ার সময় ভাবি এই জায়গায় অনন্যা থাকলে কী করত। তাতে কাজটা করতে সুবিধা হয়। এক এক সময় আবার এও ভাবি, আজ থেকে ১৫ বছর পরেও অনন্যা এমনটা থাকবে তো? নাকি সে মেজাজ আর ধৈর্য হারাবে?
নিউজ ফ্রন্টঃ আমার মতে, তোমার নিজের বয়সের তুলনায় মণির বয়স বেশ অনেকটাই বেশি। কৌশিকের মতো এক যুবকের মায়ের চরিত্র নিয়ে তুমি কতটা খুশি?
অনন্যাঃ খুশি। তবে, সবসময়ই মায়ের চরিত্র চাই তেমনটা নয়। অন্য কোনও রোলও হতে পারে। আবার মণি একজন মা না হয়ে দিদিও হতে পারত, বা অন্য কেউ। তবে, মণি চরিত্রটা বেশ সাড়া ফেলেছে দর্শকের মনে সেটাই বড় পাওয়া।
নিউজ ফ্রন্টঃ এত বড় ছেলের মায়ের চরিত্রে তোমায় দেখে বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে কেমন প্রতিক্রিয়া পেয়েছো?
অনন্যাঃ কৌশিক মানে রাহুল দেব বসু, সে নিজেই তো আমার বন্ধু। প্রথমে দুজনেই খুব হেসেছিলাম। পরে ঠিক হয়ে গেছে। তবে, অন্যান্য বন্ধু বান্ধবেরা বলেছিল, এরকম বয়স্কা মহিলার চরিত্র নিলাম কেন? আমি বলেছি, ওটাই তো মজা। ওটাই তো চ্যালেঞ্জ।
নিউজ ফ্রন্টঃ সিরিয়ালের ফেসবুক গ্রুপে তোমার জনপ্রিয়তা তুঙ্গে।
অনন্যাঃ ওটাই বড় পাওয়া জানো তো? ফ্যানেরা অনেক কিছু লেখে চরিত্রটা নিয়ে। খুব ভাল লাগে তখন।
নিউজ ফ্রন্টঃ এই ধারাবাহিকে মণি-রাধিকা জুটিই বেশি কামাল দেখাচ্ছে বলে একজন সাংবাদিক হিসেবে শুধু নয়, দর্শকের চোখ দিয়েও আমার মনে হয়।
অনন্যাঃ ধন্যবাদ নবনীতা। একটা ধারাবাহিকে মা-মেয়ের জুটি হয়ে ওঠাটা বেশ অন্যরকম ব্যাপার।
নিউজ ফ্রন্টঃ ‘কাদম্বিনী’ ধারাবাহিকে তোমার তারাসুন্দরীর চরিত্রটাও বেশ দেখার মতো।
অনন্যাঃ একটা জিনিস লক্ষ্য করেছো নবনীতা, তারাসুন্দরী এবং মণি দুজনেই কিন্তু স্বামীহারা, সহজ বাংলায় বিধবা। কিন্তু দুজন দুই প্রজন্মের। তারাসুন্দরী ১৮৭৬ সালের মানুষ। এই চরিত্রে আমি দেড়শ বছর পিছিয়ে গেছি। আমার কাছে মেয়েদের লেখাপড়া শেখার কোনও যুক্তি নেই। ছিল যে সময়ে সেই সময়ে আমার পাশে এসে দাঁড়ানোর মতো কোনও দ্বারকানাথ গাঙ্গুলি ছিল না। তাই আমি পারিনি শিক্ষিত হতে। আমি বাপের বাড়ির সংসার সামলাতেই ব্যস্ত এবং সিদ্ধহস্ত।
সেখানে কেউ কেরামতি দেখাতে গেলেই চটে ওঠে তারাসুন্দরী। তাই সে কাদম্বিনীকে মেনে নিতে পারে না। সমাজ আমায় শিখিয়েছে সংসারই সর্বস্ব। হেঁশেল ছাড়া তার জীবনে আর কিচ্ছুটি নেই। সেকেলে মানসিকতা নিয়ে তারাসুন্দরীর জীবনযাপন। এমন এক চরিত্র যেকোনও অভিনেতাকে সমৃদ্ধ করে। তারাসুন্দরী চরিত্রের আমার সবথেকে ভাল লাগার দিকটি হল ডায়লগ। ডায়লগের কারণেই চরিত্রটা সকলের নজর কাড়ছে।
নিউজ ফ্রন্টঃ কোন ধরনের চরিত্রের জন্য তুমি অপেক্ষা করছ?
অনন্যাঃ পছন্দের চরিত্র অনেক আছে জানো তো? তার মধ্যে কয়েকটা বলি। ‘গানের ওপারে’র মতো কোনও কাজ পেলে খুশি হব। যেখানে রবি ঠাকুরের আনাগোনা। নীনা গুপ্তার ‘সাঁস’ চরিত্রটার প্রতি লোভ আছে। এ ছাড়াও ডাক্তারের জীবন নিয়ে তৈরি চরিত্র সিমরনের মতো একটা চরিত্র পেলেও খুশি হব। ‘আম্মাজি’র চরিত্রটা পেলেও আনন্দিত হব। আমি নেগেটিভ চরিত্র পেলেও করব। সেখানে নিজেকে অন্যভাবে ভাঙব আমি। একটু অন্য ধরনের নেগেটিভ চরিত্র করতে চাই। যেমন ধরো যে ভিলেনকে শুরু থেকে বোঝা যাবে না যে সে ভিলেন। একটু অন্যভাবে অ্যাপ্রোচ করতে চাই নিজেকে।
আরও পড়ুনঃ ছায়া তার নাম
নিউজ ফ্রন্টঃ অনন্যা তার দর্শকদের কী বলবে?
অনন্যাঃ সবাইকে সাবধানে আর ভাল থাকতে বলব। ছোটদের আর বর্ষীয়ানদের যত্নে রাখতে বলব। পজিটিভ থাকতে হবে। ভেঙে পড়লে চলবে না। যুদ্ধে জয়ী আমরা হবই। মানুষ ভীষণ ভীত হয়ে আছে। সেটা করলে চলবে না। অন্যকে সাহায্য করতে হবে। বাইরে থেকেও সাহায্য করা যায়। আর বলব পশু পাখিদের একটু খাবার দিন।
আমফানে বিপর্যস্ত চারটে সারমেয় শিশুকে আমি আমাদের কমপ্লেক্সে জায়গা দিয়েছি। এতে অনেকের অনেক সমস্যা হয়েছে। আমি ছানাগুলোকে যত্ন আত্তি করছি বলে অনেকে অনেক কথাও বলছে। ওদের ফেলে দেওয়ার কথাও ভেবেছেন অনেকে। কিন্তু আমি এই ব্যাপারে আইনি সব খবরাখবর নিয়েছি। এভাবে কেউ দুম করে ওদের ফেলে দিতে পারে না যদি অন্য কেউ ওদের আশ্রয় দিয়ে থাকে। তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমি বলে দিয়েছি, নিজেরা কিছু করতে না পারলে করবেন না ওদের জন্য। কিন্তু যারা করতে চাইছে তাদের বাধা দেবেন ন প্লিজ। একটা ছানাকে আমি আমার ঘরেই তুলে এনেছি সে একটু অসুস্থ হয়ে পড়ায়৷
নিউজ ফ্রন্টঃ তোমার হেয়ার স্টাইলটা দারুণ লাগে।
অনন্যাঃ তাই? থ্যাঙ্ক ইউ। আমার আগে বড় চুল ছিল। কেটে ফেললাম। একটু অন্য কিছু করতে মন চাইছিল। এবার মনে হচ্ছে আমি আসলে মনে প্রাণে যেরকম প্রতিবাদী, স্পষ্টবাদী, চোখা চোখা কথা বলি, তার সঙ্গে এই হেয়ার কাট টা মানায়।বোঝাতে পারলাম?
নিউজ ফ্রন্টঃ একদম। ভাল থেকো।
অনন্যাঃ তুমি এবং তোমরাও।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584