ওয়েব ডেস্ক, নিউজ ফ্রন্টঃ
যত সময় যাচ্ছে পেগাসাস নজরদারির তালিকা তত দীর্ঘ হচ্ছে। নাম উঠে আসছে সিবিআই প্রধান অলোক ভার্মা থেকে শুরু করে অনিল আম্বানি, দলাই লামার ঘনিষ্ঠদের যাঁদের ফোনে চালানো হয়েছে স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে নজরদারি।
পেগাসাস-কাণ্ডের নতুন তদন্ত রিপোর্ট বলছে, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর ফোন যেমন হ্যাকিংয়ের নিশানায় ছিল, একই ভাবে নজরদারির চেষ্টা হয়েছিল রিলায়্যান্স এডিএ গোষ্ঠীর কর্ণধার অনিল অম্বানীর ফোনেও। শুধু তাই নয় রিলায়্যান্স গোষ্ঠীর অন্যতম কর্তা টোনি জেসুদাসন, রাফাল-নির্মাতা ফরাসি সংস্থা দাসোর ভারতীয় অধিকর্তা বেঙ্কট রাও পোসিনা ও বোয়িংয়ের মতো আরও কয়েকটি প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত সরঞ্জাম নির্মাতার সংস্থার কর্তাব্যক্তিদের ফোনও ছিল নজরদারির নিশানায়।
এই তালিকায় সবথেকে চাঞ্চল্যকর নাম প্রাক্তন সিবিআই ডিরেক্টর অলোক ভার্মা। তিন বছর আগে তৎকালীন সিবিআই ডিরেক্টর অলোক বর্মার ফোন পেগাসাস স্পাইওয়্যায়ের মাধ্যমে হ্যাক করার তালিকায় এসেছিল। সেসময় মোদী সরকারের অন্দরে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল যে অলোক ভার্মা রাফাল ডিল নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিতে পারেন।
এরপরে তাঁকে সরিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন বলে পরিচিত রাকেশ আস্থানাকে সিবিআই শীর্ষ পদে বসানোর চেষ্টাও হয়। কিন্তু পরবর্তীতে ভার্মা-আস্তানা সংঘাত চরমে ওঠে, তাই কিছুটা বাধ্য হয়েই দুজনকেই ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় মোদী সরকার। ঘটনাপ্রবাহ থেকে দেখা গিয়েছে এরপরেই অলোক ভার্মা, তাঁর স্ত্রী, মেয়ে ও জামাইয়ের ফোন-নম্বর হ্যাকিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট করা তালিকায় চলে আসে, সঙ্গে আস্থানার নম্বরও।
জানা গিয়েছে, তিব্বতি ধর্মগুরু দলাই লামার ঘনিষ্ঠদের একাধিক ব্যক্তির ফোনও ছিল নজরদারির নিশানায় । এর মধ্যে সপ্তদশ কর্মপা ওগিয়েন ট্রিনলে দোর্জি, দিল্লিতে দলাই লামার দীর্ঘদিনের দূত টেমপা সেরিং, পরবর্তী দলাই লামা খোঁজার দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্রাস্টের প্রধান সমধং রিনপোচে, তিব্বতি সরকারের প্রাক্তন প্রধান লোবসাং সাংগে-সহ দলাই লামার বেশ কয়েক জন ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির নাম রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ জম্মুতে বড়সড় নাশকতার ছক! গুলি করে ‘পাক’ ড্রোন নামাল পুলিশ
প্রাক্তন সিবিআই ডিরেক্টর অলোক ভার্মাকে নিয়ে মোদী সরকারের মধ্যে আশঙ্কা থাকতে পারে। রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তির অংশ হিসেবে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হ্যাল-এর পরিবর্তে মোদী সরকার অনিল অম্বানীর সংস্থাকে বরাত পাইয়ে দিয়েছে,এই অভিযোগ উঠতে শুরু করে সব মহলে।
এছাড়াও ভার্মার কাছে রাফাল চুক্তিতে দুর্নীতির অভিযোগ জানিয়ে বাজপেয়ী সরকারের মন্ত্রী অরুণ শৌরি সমস্ত নথি জমা দিয়েছিলেন। সর্বোপরি, মোদী সরকার রাফাল চুক্তিতে দুর্নীতি হয়নি বলে দাবি করলেও, ভার্মা তদন্তের দাবি খারিজ করে দেননি। কিন্তু দলাই লামার ঘনিষ্ঠদের উপরে নজরদারির কী কারণ? চিনকে চাপে রাখতে দলাই লামা কি তবে ভারতের কাছে ‘কূটনৈতিক সম্পদ’?
আরও পড়ুনঃ অধিবেশনের বাকি দিনগুলিতে রাজ্যসভা থেকে সাসপেন্ড হলেন তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন
এনএসও বহু দেশকে ফোন হ্যাক করার সরঞ্জাম বিক্রি করেছিল। সেই ডেটা থেকে সম্প্রতি ৫০ হাজার ফোন নম্বরের তালিকা ফাঁস হয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, ভারত-সহ বিভিন্ন দেশের সংবাদমাধ্যম তার তদন্তে নামায় দেখা গিয়েছে, ওই তালিকায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থেকে বিরোধী দলনেতা, সাংবাদিক থেকে নির্বাচন কমিশনার সব ক্ষেত্রের কারুর না কারুর নাম রয়েছে তালিকায়।
ইতিমধ্যে, পেগাসাস ইস্যু প্রশমিত করতে বিজেপি তাদের নতুন বিদেশ প্রতিমন্ত্রী মীনাক্ষী লেখিকে দিয়ে প্রচার করায়, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল নিজেই জানিয়েছে যে এই তদন্তে তাদের কোন যোগ নেই। কিন্তু এর পরেই লেখির দাবিকে ‘মিথ্যে প্রচার’ আখ্যা দিয়ে অ্যামনেস্টি জানিয়েছে, তারা পেগাসাস তদন্তের সঙ্গেই রয়েছে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584