অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, স্পোর্টস ডেস্কঃ
আইএসএল ৭-এর লিগে চারটি ম্যাচ বাকি থাকতেই সেমিফাইনালে জায়গা নিশ্চিত করে ফেলেছে তারা। এবার এটিকে মোহনবাগানের লক্ষ্য শুধুই লিগ টেবলের এক নম্বর জায়গাটা দখল করা। সে জন্য অবশ্য তাদের বাকি সব ম্যাচেই জিতে শীর্ষে থাকা মুম্বই সিটি এফসি-র একটি হার বা ড্রয়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
অর্থাৎ, সবুজ-মেরুন শিবিরের কাছে এখন লিগের বাকি চারটি ম্যাচই ফাইনালের মতো। রবিবার তার প্রথমটিই খেলতে নামছে আন্তোনিও লোপেজ হাবাসের দল। যা তাদের কাছে কার্যত ১৯ ফেব্রুয়ারির কলকাতা ডার্বির ওয়ার্ম আপও।রবিবার ফতোরদা স্টেডিয়ামে সবুজ-মেরুন বাহিনীর মুখোমুখি যারা, সেই জামশেদপুর এফসি গত ম্যাচে চেন্নাইন এফসি-র বিরুদ্ধে জিতলেও তার আগের ম্যাচে এসসি ইস্টবেঙ্গলের কাছে হেরে গিয়ে সেরা চারে ওঠার দৌড়ে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে।
লিগে আর তিনটি ম্যাচ বাকি তাদের। এই তিন ম্যাচ থেকে সর্বোচ্চ ন’পয়েন্ট পেতে পারে তারা। কিন্তু এই কঠিন কাজে সফল হতে গেলে তাদের দুই শীর্ষস্থানীয় দল এটিকে মোহনবাগান, মুম্বই সিটি এফসি ও বেঙ্গালুরু এফসি-কে হারাতে হবে। তাই নেরিয়াস ভাল্সকিস, আইতর মনরয়দের সামনের পথটা বেশ কঠিন। তবে রবিবারের ম্যাচে যে দুই দলেরই লক্ষ্য জয়, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
আরও পড়ুনঃ রোহিত ও রাহানে জুটিতে চেন্নাইয়ে ম্যাচে ফিরলো ভারত
গত পাঁচ ম্যাচের চারটিতেই জয়ী এটিকে মোহনবাগান গত ম্যাচেই যে ভাবে বেঙ্গালুরু এফসি-কে হারায়, তা মনে ছাপ ফেলার মতো। সুনীল ছেত্রী ও তাঁর দলের ওপর রীতিমতো আধিপত্য বিস্তার করে ২-০-য় জেতে গঙ্গাপাড়ের দল। ৩৭ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি থেকে এ বারের হিরো আইএসএলে তাঁর ১২ নম্বর গোলটি করে দলকে এগিয়ে দেন ফিজিয়ান তারকা স্ট্রাইকার রয় কৃষ্ণা। তার সাত মিনিট পরেই বিপক্ষের বক্সের বাঁ দিকের মাথা থেকে নেওয়া ফ্রি কিক থেকে সোজা গোলে শট নেন সদ্য ওডিশা এফসি থেকে সবুজ মেরুন শিবিরে আসা ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড মার্সেলো পেরেইরা বা মার্সেলিনহো।
বেঙ্গালুরুর মতো দলের বিরুদ্ধে এই অসাধারণ জয়ের পরে প্রবীর দাসদের কোচকে বলতে শোনা যায়, “দলের ছেলেদের জন্য আমার গর্ব হচ্ছে। আজ দল অসাধারণ ফুটবল খেলেছে। পুরো ম্যাচটা আমরাই নিয়ন্ত্রণ করেছি।” রবিবারও ম্যাচে তারা সে রকম নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারলে জামশেদপুর সমস্যায় পড়বে। সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের বিচারে বলা যায় এটিকে মোহনবাগানের দুর্ভেদ্য ডিফেন্সের দেওয়াল ভেঙে ইস্পাতনগরীর দলের সফল হওয়া মোটেই সোজা হবে না।
আরও পড়ুনঃ শেষ চার থেকে দল বেশি দূরে নয়ঃ গ্রান্টএক দিকে সবুজ-মেরুন রক্ষণের শক্তিশালী ডিফেন্স যখন স্বস্তিতে রেখেছে দলকে, তখন, জামশেদপুরের সাম্প্রতিক গোলখরা তাদের কিছুটা হলেও পিছিয়ে রাখবে। গত সাতটি ম্যাচে মাত্র চারটি গোল করেছেন জামশেদপুরের ফরোয়ার্ডরা।এটিকে মোহনবাগানের কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাসের চোখেমুখেও সেই আত্মবিশ্বাসের ছাপ স্পষ্ট। যেমন স্পষ্ট তাঁর ভবিষ্যৎ-পরিকল্পনাও। শনিবার ভার্চুয়াল সাংবাদিক বৈঠকে বললেন, “দল যথেষ্ট ভাল জায়গায় রয়েছে। সবাই আত্মবিশ্বাসী।সেরা জায়গায় আছি এখন আমরা। এখন লিগে সেরা হতে গেলে আমাদের শেষ চারটি ম্যাচে ফোকাস করতে হবে। প্রতি ম্যাচ ও প্রতিপক্ষ ধরে ধরে এগোতে হবে।”
তবে প্রথম লেগের ম্যাচে যখন এই দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল, তখন কিন্তু তাদের মাঠে এতটা আত্মবিশ্বাসী মনে হয়নি। গত মরশুমের ‘গোল্ডেন বুট’জয়ী লিথুয়ানিয়ান ফরোয়ার্ড নেরিজাস ভাল্সকিসের জোড়া গোলে সে বার ২-১ ব্যবধানে মরশুমের প্রথম জয় পায় জামশেদপুর এফসি। ৩০ মিনিট ও ৬৬ মিনিটের মাথায় দেওয়া গোলে দলকে জয়ের দিকে এগিয়ে দিয়েছিলেন ভাল্সকিস। ৮০ মিনিটের মাথায় রয় কৃষ্ণা গোল শোধ করার পরে শেষ দিকে আক্রমণে ঝড় তুললেও জামশেদপুর ডিফেন্সের দুর্ভেদ্য দেওয়ালে আর ভাঙন ধরাতে পারেনি তারা।
আরও পড়ুনঃ অনড় সৃঞ্জয়, বিক্ষোভের মাঝেই হল মোহনবাগান সাধারণ সভা
সে দিন হারলেও এই ম্যাচে তার কোনও প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন না হাবাস। তাঁর সোজাসাপ্টা বক্তব্য, “অতীতে কী হয়েছিল, তা নিয়ে কথা বলতে চাই না আমি। প্রত্যেক ম্যাচই আলাদা। সব ম্যাচই কঠিন। এই ম্যাচটাই আমাদের ফাইনাল ম্যাচ ভেবে খেলতে হবে রবিবার।” গোলের জন্য অবশ্য সেই রয় কৃষ্ণা ও নবাগত ব্রাজিলীয় স্ট্রাইকার মার্সেলো পেরেইরার ওপর নির্ভর করতেই হবে। দু’জনেই বর্তমানে দুরন্ত ফর্মে রয়েছেন।
বিপক্ষের সেরা তারকাদের নিয়েও যে ভাল হোমওয়ার্ক রয়েছে এটিকে মোহনবাগান কোচের, তা তাঁর কথাতেই বোঝা গেল। বলেন, “ওদের সব জায়গাতেই ভাল খেলোয়াড় রয়েছে। ওদের সেন্টার ব্যাকরা ভাল। ভাল সেন্ট্রাল মিডফিল্ডারও রয়েছে ওদের দলে। সম্ভবত (আক্রমণে) ডেভিড গ্রান্দ ও ভাল্সকিসকেই রাখবে ওরা। ওরা প্লে-অফে উঠতেও পারে।”
রবিবার সুযোগ ও পরিস্থিতি বুঝে যে তারা আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলবে, তা জানিয়ে দিয়ে হাবাস বলেন, “আমরা সব সময়ই আক্রমণাত্মক ফুটববল খেলতে চাই। কিন্তু আমাদের সামনে তো আর একটাই রাস্তা। ফুটবল অ্যাটাক ও ডিফেন্স নিয়েই হয়। দল উন্নতি করবে। সব রকম লক্ষ্যপূরণের উদ্দেশ্য নিয়েই কাজ করছি আমরা।”
এর মধ্যে একটা দুঃসংবাদের ইঙ্গিতও দিয়ে রাখলেন কোচ। এডু গার্সিয়ার মাঠে ফিরতে আরও অন্তত দশ দিন লাগবে। অর্থাৎ, ডার্বিতে তাঁকে পাওয়ার সম্ভাবনা কম। রয় কৃষ্ণাকেও যে বাকি সব ম্যাচে না খেলানোর কথা ভাবছেন, তাও জানিয়ে দিলেন হাবাস। বললেন, “রয় আমাদের সেরা স্ট্রাইকার। ওকে সব ম্যাচে ৯০ মিনিট খেলানো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে। ওকে বিশ্রাম দেওয়ার কথা ভাবতে হবে।” ডেভিড উইলিয়ামসকে নিয়েও যথেষ্ট খুশি ও আত্মবিশ্বাসী হিরো আইএসএলের সফলতম কোচ।
আরও পড়ুনঃ শেষ চার থেকে দল বেশি দূরে নয়ঃ গ্রান্ট
জামশেদপুরের কোচ ওয়েন কোইল অবশ্য প্রথম লেগের জয় থেকেই প্রেরণা নিয়ে রবিবার নিজের দলকে মাঠে নামাতে চান। তিনি শনিবার সাংবাদিকদের বলেন, “মরশুমের শেষ দিকে এসে এই ম্যাচগুলোর মতোই পারফরম্যান্স দেখানো দরকার। এটিকে মোহনবাগানকে আমরা মরশুমের শুরুতে হারিয়েছি। আমাদের ওপরে থাকা দলগুলোকে চাপে রাখতে ফের হারাতে চাই ওদের।”
শেষ তিনটি ম্যাচ নিয়ে একটু বেশিই সিরিয়াস কোইলের বক্তব্য, “এটিকে মোহনবাগান থেকে শুরু করে শেষ তিন ম্যাচে আমাদের রক্ষণ ও আক্রমণের শক্তি, দুটোই সমান ভাবে বজায় রাখতে হবে। ফারুখ (চৌধুরি) ও লেন (দুঙ্গেল) দলে এসে যাওয়ায় একটা নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। ছেলেরা যে ভাবে উন্নতি করছে, তাতে আমি মুগ্ধ। আশা করি এই শক্তি নিয়ে কাল আমরা ফের এটিকে মোহনবাগানকে হারাতে পারব।”
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584