শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
একেবারে শূন্য থেকে শুরু করে শাসকের আসনে তৃণমূলকে বসানোর পিছনে কারিগর তিনি। তৃণমূলের বীরভূমের শেষ কথা বরাবরই ‘কেষ্টদা’ ওরফে অনুব্রত মণ্ডল। বোলপুরে সামান্য মুদি দোকান দিয়ে জীবন শুরু করেও রাজনীতিতে উল্কাগতিতে উত্থান হয়েছিল অনুব্রতের। বৃহস্পতিবার তৃণমূলের সাংগঠনিক রদবদলে কমবেশি প্রতিটি জেলাতেই ব্যাপক অদলবদল ঘটিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তবে অনুব্রত মণ্ডলের ওপরে ভরসা রাখলেও অনুব্রত মণ্ডলের ডানা যে একেবারেই ছাটা হয়নি, তা বলা যাবে না। বীরভূম জেলার সভাপতি হিসেবে অনুব্রত মণ্ডলকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বহাল রাখলেও, পূর্ব বর্ধমান কেতুগ্রাম, আউসগ্রাম এবং মঙ্গলকোটের দায়িত্বে থাকা অনুব্রত মণ্ডলকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর তা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে শুরু হয়েছে জল্পনা। তবে কি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বীরভূমে আলগা হতে শুরু করল অনুব্রতের রাশ?
তিন ভাইয়ের মধ্যে মেজ অনুব্রত অষ্টম পাশ অনুব্রত বাড়িতেই বাবার মুদি দোকান দেখাশোনার পাশাপাশি পারিবারিক গ্রিলের কারখানাও দেখাশোনা শুরু করেন। যুব কংগ্রেসের হয়ে রাজনীতি শুরু করার পরে তৎকালীন যুব কংগ্রেসের সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলাপের সূত্রে পরবর্তীকালে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেন যুব তৃণমূলের সভাপতি হিসেবে।
আরও পড়ুনঃ লক্ষ্য ২১, ‘সোজা বাংলায় বলছি’ ভিডিও সিরিজের প্রচার শুরু তৃণমূলের
তবে দলের মধ্যে অনুব্রত মমতার বিশ্বাস অর্জন করে নেন নানুর কাণ্ডের সময়। ২০০১ সালে নানুরের সূঁচপুরে ১১ জন চাষিকে হত্যার ঘটনায় উত্তাল হয়ে ওঠে রাজ্য রাজনীতি। মুকুল রায়কে নিয়ে নানুরে যান মমতা। সেই সময়েই জেলায় সিপিএম বিরোধী জোরালো আন্দোলন গড়ে তুলে মমতার আরও আস্থা অর্জন করে নেন অনুব্রত। এরপরে অনুব্রতকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
দলের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে ২০০৩ সালে তৃণমূল ছেড়ে দেন বীরভূমের জেলা সভাপতি সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর জায়গায় অনুব্রতকে জেলার দায়িত্ব দেন মমতা। গত ষোল বছরে তৃণমূল জেলা সভাপতি হিসেবে গোটা বীরভূমে নিজের একছত্র দাপট তৈরি করেছেন অনুব্রত। বাম দুর্গ বীরভূমে প্রতিকূলতার মধ্যেও সংগঠন তৈরি করে ফেলেন অনুব্রত।
আরও পড়ুনঃ বিজেপিতে ছিলেন-আছেন-থাকবেন, জল্পনা উড়িয়ে জানালেন মুকুল
তবে নিজের এই দাপট ধরে রাখতে গিয়েই বার বার বিতর্কে জড়িয়েছেন তৃণমূলের তৎকালীন বীরভূম জেলা সভাপতি। কখনও ভরা জনসভায় পুলিশকে বোমা মারতে বলেছেন, কখনও চড়াম চড়াম করে ঢাক বাজানোর নিদান দিয়েছেন। আবার কখনও গুড় বাতাসা বা নকুলদানা খাওয়ানোর মতো নিদান দিয়েও বিতর্কের সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু তিনি যেমন দলের বরাবর আস্থাভাজন নিবেদিত সৈনিক, ঠিক তেমনই হাজার বিতর্ক সত্ত্বেও দলও পরের পর নির্বাচনে তাঁর প্রতি আস্থা রেখে গিয়েছে।
কিন্তু এবারে সেই আস্থার ব্যতিক্রম হল। পূর্ব বর্ধমান কেতুগ্রাম, আউসগ্রাম এবং মঙ্গলকোটে অনুব্রত মণ্ডলের জায়গায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ভাতারের তৃণমূল বিধায়ক সুভাষ মন্ডলকে। কিন্তু এই বিষয়টিকে ভালোভাবে নেননি অনুব্রত অনুগামীরা।
বস্তুত, বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি হওয়ার আগে বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের দায়িত্বে ছিলেন এই অনুব্রত মণ্ডল। ২০০৪ সালে বোলপুর লোকসভার অন্তর্গত ছিল আউসগ্রাম ও মঙ্গলকোট বিধানসভা। অন্যদিকে বহরমপুর লোকসভার মধ্যে ছিল কেতুগ্রাম বিধানসভা। ২০০৯ সালে এই কেতুগ্রাম, আউসগ্রাম এবং মঙ্গলকোট বিধানসভা বোলপুর লোকসভার মধ্যে এলে তার সম্পূর্ণ দায়িত্ব ছিল অনুব্রত মণ্ডলের।
আর দুর্দিনে পাশে থাকা অনুব্রত কে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ায় তৃণমূল কর্মীদের একাংশের মধ্যে দেখা গিয়েছে মতবিরোধ। তাকে ফের পুরনো দায়িত্বে পুনর্বহাল করা হোক, এমনই দাবি জানিয়ে জেলা নেতৃত্বের কাছে দরবার করেছেন ওই অনুগামীরা। যদিও মঙ্গলকোটের তৃণমূল বিধায়ক তথা মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী বলেন, “দলনেত্রী ভালো কিছু বুঝছেন। তাই পর্যবেক্ষক পদ থেকে ওনাকে সরিয়ে দিয়েছেন।”
অনেকে বলছেন, অনুব্রত মণ্ডলের নানা সময় নানা বেলাগাম মন্তব্য হয়ত দলকে কিছুটা অস্বস্থিতে ফেলেছে।
তাই বিধানসভা নির্বাচনের আগে শুধুমাত্র বীরভূম জেলায় ভালো করে মনোযোগ দেওয়ার জন্যই অনুব্রত মণ্ডলকে তিন বিধানসভার পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়ে তাকে বার্তা দিতে চাইল দল। তবে সেখানকার কর্মীরা যেভাবে আবার অনুব্রত মণ্ডলকে ফিরে পাওয়ার দাবি জানিয়েছে, তাতে সেই জায়গার নতুন পর্যবেক্ষক সুভাষ মন্ডল কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে কতটা ভালোভাবে কাজ করতে পারেন, তা অবশ্যই সংশয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সকলের কাছে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584