পিয়ালী দাস, বীরভূমঃ
প্রচার নিতে গিয়ে কার্যত নিজের এবং দলেরই মুখেই কালি লেপে দিলেন যাদবপুর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অনুপম হাজরা।
সোমবার নির্বাচনের দিন বোলপুরে ভোট দিতে এসে আচমকাই পৌঁছে যান বোলপুরে তৃণমূল কার্যালয়ে বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মন্ডলের সাথে দেখা করতে।সেখানে অনুপম হাজরা অনুব্রত মণ্ডলের পা ছুঁয়ে প্রনাম করে আশীর্বাদ নেয়।এই ছবি প্রকাশ্যে আসার পরেই কার্যত শোরগোল পড়ে যায় বাংলার রাজনীতিতে।
বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন,ভোটের এইরকম পরিবেশে বিজেপি প্রার্থী হয়ে অনুপম হাজরা অনুব্রত মন্ডলের সাথে এই সাক্ষাৎ একেবারেই অর্থহীন।
এই সাক্ষাৎ বিজেপি দলীয় কর্মীদের মধ্যে ফাটল সৃষ্টি করবে।সোমবার অনুপম হাজরা যিনি কিনা এই মুহূর্তে নিজেকে যাদবপুরে বিজেপির হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে ভাবছেন,অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ বুমেরাং হয়ে তার কাছেই ফিরেছে। ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই দল ও নিজের ভাবমূর্তি রক্ষা করতে মঙ্গলবার মুকুল রায় কে পাশে নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে অনুপম হাজরা সোমবারের সাক্ষাৎ নিয়ে নিজের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন।
অনুপম হাজরা দাবি করেছেন,অনুব্রত মণ্ডলের মা মারা গিয়েছেন বেশ কিছুদিন আগে তাই খবর পেয়ে সৌজন্যমূলক ভাবে সমবেদনা জানাতে গিয়েছিলাম।কিন্তু অনুব্রত মণ্ডল মায়ের মৃত্যু নিয়ে আমার সাথে রাজনীতি করেছে,আমি যাব এই খবর সংবাদ মাধ্যমকে দিয়ে আমার ছবি তুলিয়ে ওনার সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক এটা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছেন।
অনুপম আরও দাবি করে বলেন অনুব্রত মণ্ডল থেকে রাজ্যসভার সাংসদ করার যে প্রস্তাব দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে সেটা খুবই হাস্যকর,অনুব্রত মণ্ডল একজন জেলা সভাপতি না তিনি এমপি না তিনি এমএলএ।তবে অনুপম হাজরা এইসব যুক্তি ধোপে টিকছে না,কারণ সোমবার দিন অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় অনুপম হাজরার মুখে বারবার কাকু কাকু বলে সম্বোধন তাকে কিন্তু হাসির খোরাক হিসেবে রাজনৈতিক মহলে নিজেকে তুলে ধরেছে।সাক্ষাতের সময় অনুপম হাজরা বারবার বলছিলেন,কাকুই রাজনীতিতে শেষ কথা, কাকুর সঙ্গে আমার সম্পর্ক বরাবরই ভালো,কেউ মাঝখান থেকে আমাদের দুজনের সম্পর্কের চিড় ধরাতে চেয়েছিল,তাই ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছিল। অনুপম হাজার এই কথাগুলি থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করা তার জীবনের একটি অন্যতম ভুল সিদ্ধান্ত ছিল।কারণ মাত্র দুদিন আগেই অনুপম হাজরা বিজেপির কর্মীদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিল একেবারে ফালতু দল এই বিজেপি,যেখানে জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ প্রার্থীকে নিজেই করতে হয়, তারপরেই বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে এক গুচ্ছ সংবাদমাধ্যমের সামনে এসে হাস্যমুখে অনুব্রত মণ্ডলের পা ছুঁয়ে গলা জড়িয়ে ধরে ছবির পোজ দেওয়া কি তাৎপর্য বহন করে সেটা আমজনতার বুঝতে আর বাকি নেই।
অনুপম হাজরা সাথে কথার মাঝে অনুব্রত মণ্ডল বারবারই বলে ওঠে,অনুপম ভুল করেছে,একটু বোকামো করে ফেলেছে,তাড়াহুড়ো করে ফেলেছে,ও বিজেপিতে না গেলে ওকেই বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ পদে আবার প্রার্থী করতাম, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আমার সে বিষয়ে কথা হয়ে গেছিল। এরপর অনুব্রত মণ্ডল বলে, ঠিক আছে কোনো অসুবিধে নেই ও ভুল বুঝতে পেরেছে, ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে এসেছে,দিদিকে বলে ওকে রাজ্যসভার সাংসদ করে দেব। এখন স্বভাবতই এই প্রশ্নই উঠছে,যখন অনুব্রত মণ্ডল এই কথাগুলো দাবি করছিলেন তখন তিনি সংবাদ মাধ্যমের সামনে প্রতিবাদ কেন করলেন না,কেন তিনি বলে উঠলেন না যে কাকু প্রস্তাব দিতে পারে কিন্তু সেই প্রস্তাব আমি কাকুকে( অনুব্রত মণ্ডল) ফিরিয়ে দিলাম।
তাহলে অনুপম হাজরা সত্যিই কি বিজেপিতে যোগদান তার ভুল হয়েছে এটা বুঝতে পেরে তৃণমূল কংগ্রেসের ফিরতে চাইছে।যে মানবিকতা সৌজন্যবোধের কথা অনুপম আছে বলে বারবার দাবি করছেন, সেই সৌজন্যবোধ তিনি ফোনেও সেরে নিতে পারতেন। অনুপম হাজরা কি জানতেন না যে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে অনুব্রত মণ্ডলকে নজর বন্দী রাখা হয়েছে,সেখানে একাধিক সংবাদ মাধ্যম উপস্থিত থাকবে,তাহলে কি ধরেই নেওয়া যেতে পারে যদি সবকিছু জেনে বুঝে সংবাদ মাধ্যমকে ব্যবহার করে প্রচারের আলো এসে নিজেকে মহান প্রমাণ করতে চাওয়া আর একটা চেষ্টা করেছেন। তবে অনুপম হাজরার উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন তার এই সৌজন্যবোধ খেলাতে রাজ্য বিজেপির যে মুখ পুড়েছে তা মঙ্গলবারে সাংবাদিক সম্মেলন দেখলেই বোঝা যাচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ ঘরে ফিরে কেষ্ট কাকার সাথে মধ্যাহ্ন ভোজন অনুপমের
সাংবাদিক সম্মেলন করে অনুপম হাজরা যেসব কথা বলেছেন তার কড়া প্রতিক্রিয়া কিন্তু অনুব্রত মণ্ডল ইতিমধ্যেই দিয়েছেন,তিনি বলেন আমি এমপিও নই, আবার এমএলএও নই, কিন্তু আমি কোন প্রার্থীর নাম দিদির কাছে প্রস্তাব করলে দিদি সেই নামের উপর কখনোই কলম চালান না।অনুপম তো যাদবপুরের হারবে তাই ওকে বলেছিলাম দিদিকে বলে রাজ্যসভায় একটা ব্যবস্থা করে দেব।অনুপম যে রাজনীতির অভিযোগ আনছে সে ধরনের নোংরা রাজনীতি আমি করিনা,আমাকে প্রচার পাওয়ার জন্য কোন দিন লালায়িত হয়নি।আর আমরা বাঙালি অতিথি আমাদের কাছে দেবতার সমান,তাই ভর দুপুরে ও যখন আমার কাছে এসেছে একজন বাঙালি হিসেবে এটা আমার কর্তব্য যে আমার বাড়িতে আসা মানুষটি খাওয়া দাওয়া করেছেন কিনা, তাই আমি অনুপম কে জিজ্ঞেস করেছি ভাত খেয়েছিস,ও বলল-না প্রসাদ খেয়েছি,তখন আমি বললাম যে ঠিক আছে যাবার আগে খেয়ে যাবি,ঝিঙে আলু পোস্ত খেতে ভালোবাসে এটা আমি জানি,সোমবার নির্বাচন ছিল অনেক মানুষের জন্য রান্না হয়েছিল ঝিঙে আলু পোস্ত হয়েছিল ওকে বলেছি ও ঝিঙে আলু পোস্ত আর মাছের ঝোল দিয়ে ভাত খেয়ে গেছে। বাড়িতে কেউ এলে তাকে খাইয়ে পাঠানো এটাই আমাদের বাঙালি শিষ্টাচার। অনুব্রত মণ্ডল দাবি করেন মিথ্যাচারের রাজনীতি বিজেপি করে সেটা আবার অনুপম প্রমাণ করে দিল।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584