অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, স্পোর্টস ডেস্কঃ
শেষ রক্ষা হল না। গোটা বিশ্বকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন ফুটবলের ম্যাজিসিয়ান। মাত্র ৬০ বছর বয়সেই আমাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন ফুটবলের রাজপুত্র।
হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে এসেছিলেন, কিন্তু আচমকাই হৃদরোগে আক্রান্ত হন। চিকিৎসকদের কোনো সুযোগই আর দেননি আর্জেন্টিনার এই তারকা। খবর ছড়িয়ে পড়তেই গোটা আর্জেন্টিনা জুড়ে কান্নার রোল।
লাতিন আমেরিকার না খেতে পাওয়া বস্তি থেকে কিশোর মারাদোনার উত্থান এরপর নেপোলিতে গিয়ে নিজেকে ঘষে মেজে তৈরি করলেন ১৯৭৭ থেকে ১৯৯৪ এই সময়ে তিনি চারটি বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছেন। সবাইকে তাক লাগিয়ে ছিলেন ১৯৮৬ বিশ্বকাপে। আর্জেন্টিনার অধিনায়ক মারাদোনা ‘৮৬ -এর বিশ্বকাপে দর্শনীয় ফুটবল উপহার দিয়েছিলেন। ফুটবল ১১ জনের খেলা।
কিন্তু মারাদোনা একা আর্জেন্টিনাকে টেনে নিয়ে গিয়ে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন। হ্যান্ড অফ গড থেকে শতাব্দীর সেরা গোল তিনিই করেন এরপর কলকাতা-সহ বিভিন্ন শহর দেশে ব্রাজিলীয় সমর্থনে ভাগ বসিয়ে ফুটবল বিশ্বকে কার্যত দুই ভাগ করে দিলেন একজন ফুটবলার।
আরও পড়ুনঃ না ফেরার দেশে ফুটবলের রাজপুত্র দিয়েগো মারাদোনা
পরের ১৯৯0 বিশ্বকাপে রেফারি ভুলে পশ্চিম জার্মানির সঙ্গে ফাইনালে হারলো তার দল। ভেঙে গেলেন পরের যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপে নিলেন মাদক, কান্নায় মাঠ ছেড়ে হলেন নির্বাসিত। ‘ভগবানের হাত’ থেকে মাদক নিয়ে নির্বাসনে যাওয়া।
তবু সকল ফুটবলপ্রেমী মারাদোনাকে ভালবাসতেন। মারাদোনাই প্রথম, ফিফা প্রেসিডেন্ট হ্যা ভলাঞ্চকে চোর বলার সাহস দেখিয়েছিলেন। ফিদেল কাস্ত্রোকে ভীষন পছন্দ করতেন কমিউনিস্ট আদর্শ বিশ্বাসী ছিলেন।
আমাদের কলকাতা শুধু মারাদোনার জন্যই আর্জেন্টিনাকে ভালবাসত, সমর্থন করত। ১২ বছর আগে যখন মধ্যসরাতে মারাদোনা কলকাতায় পা রাখেন তখন কলকাতা বিমানবন্দরে উপস্থিত হাজার হাজার মানুষ। প্রিয় নায়ককে দেখবার জন্য।
এরপর যুবভারতীতে ফুটবল ঈশ্বর এলেন স্বাভাবিক ভাবে দর্শকদের স্রোত হামলে পড়ল এরপর গেলেন মাদার হাউস, গেলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর জ্যোতি বসুর নিবাস ইন্দিরা ভবনে সেখানে জ্যোতি বাবুকে বললেন, ফিদেল আমার বন্ধু আপনি উনার বন্ধু মানে আমারও বন্ধু। গেলেন মহেশতলা উদ্বোধন করলেন ফুটবল অ্যাকাডেমি। সেখানে এখন শ্যাওলা পড়েছে, বাংলার ফুটবল সম্মান দিতে পারলো না ফুটবল ঈশ্বরকে।
এরপর গেলেন মোহনবাগান মাঠ মারলেন শর্ট এরপর চলে গেলেন কলকাতা ছেড়ে, বলে গেলেন, ‘নেপোলির পর এত ভালোবাসা কোথাও পাইনি সুযোগ পেলে আবার কলকাতাতে আসবো।‘
আরও পড়ুনঃ আইপিএলে কোচিং করাতে চান বিনোদ কাম্বলি
আবার এলেন নয় বছর পর বারাসাতে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যাকে নিয়ে বল পায়ে নামলেনও। পেলের সাথে প্রথমে খারাপ সম্পর্ক থাকলেও পরে সম্পর্ক ভালো হয় তবুও বলতেন, আমার মা বলে আমি সেরা, হ্যাঁ পেলে না আমিই সেরা।
জীবনের শেষ যুদ্ধতেও পেলেকে টপকে তার আগেই পৃথিবী ছেড়ে গেলেন এখানেও পেলেকে হারালেন। আর একটা স্বপ্ন পূর্ণ হল না প্রতি বিশ্বকাপে মাঠে গিয়ে নিজের দেশকে সমর্থন করতেন এরপর কোচ হিসেবে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন আর্জেন্টিনাকে, তারপর আর কেউ বিশ্বকাপ দিতে পারলো না। যদি ভবিষ্যতে কেউ পারেও তবু পাথরের খোদাই ঈশ্বরের নাম কেউ মুছতে পারবে না।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584