দাঁ প্রফেসর অফ ফুটবল আর্সেন ওয়েঙ্গার – ডঃ মোহাঃ পলাশউদ্দিন সেখ

0
334

আর্সেন ওয়েঙ্গার(Arsene Wenger) নামটির সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত যে নামটি এলেই আবেগ প্রবন হয়ে পড়ি।যেমনটা ক্রিকেটের সাথে এক সময় সৌরভ গাঙ্গুলিকে নিয়ে ছিল।ফুটবল খেলাটির প্রতি প্রচন্ড ভালোবাসাটা শুধু সেই মহান কোচ/ম্যানেজার আর্সেন ওয়েঙ্গার এর জন্য।

আর সেই জন্যই আর্সেনাল (Arsenal) দলটির প্রতিটি খেলা আন্তরিকভাবে উপভোগ করি। সেই মহান কোচটাকে ফুটবলের প্রফেসর (Le Professor) বলা হয়, আর্সেনাল দল তাঁর অবসর যেন একটা ইউরোপের ফুটবলের স্বর্ণ অধ্যায় ইতিহাস হয়ে গেলো। এক কথায় বলতে গেলে তিনি আর্সেনাল দলটির রুপকার।

ওয়েঙ্গারের জন্ম ফ্রান্সের স্ট্রসবার্গে (Strasbourg)। খেলোয়ার হিসাবে খুব একটা খ্যাতি অর্জন করতে না পারলেও ম্যানেজার হিসাবে তার অবদান বিশ্ব ফুটবলে অপরিসীম। যেমন, অ্যাটাকিং ট্যাকটিক (Attacking Tactic), সব জায়গাতে পারফেক্ট প্লেয়ার, খেলোয়ারদের ডায়েট (Diet) নিয়ন্ত্রণ ও ট্রেনিং, তাছাড়া সবসময় নজর দিতেন যাতে টিম পিচের মধ্যে entertain করতে পারে।

তিনি “Total Football” এ অনুপ্রাণিত ছিলেন। ওনার তৎক্ষণাৎ বুদ্ধিমত্তা (অনুধাবন) যখন যেরকম দলকে খেলানোর জন্য দরকার সেটা অবলম্বন করতেন। ওনার প্রশিক্ষণ এবং মাঠের কৌশল একজন সাধারণ খেলোয়ারকে পারফর্মিং (Performing) খেলোয়ারে পরিণত করত। ওয়েঙ্গার প্রথম ইংলিশ ফুটবলের জন্য বিদেশের খেলোয়াড় খোঁজা (Scout) শুরু করেছিলেন। ওনার মধ্যেই ইয়ং ট্যালেন্টস (Young Talents) খোঁজার প্রতিভাটি যেন লুকিয়ে আছে। না হলে Henry, Pires, Fabregas, Anelka, Van-persie, Ramsey, Bellarin, Poabbski, Ozil, Sanchez, Ianwright, Patrick Vieria দের আর্সেনাল পেত?

ওয়েঙ্গার সংবাদ মাধ্যমে কথা খুব কম বলেন, কিন্তু যা বলেন তার প্রতিটি শব্দের নির্দিষ্ট মানে থাকে। ওয়েঙ্গার হলেন কর্তৃত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। ওনার অপরিসীম বুদ্ধিমত্তাও প্রসংশনীয়। ওনাকে বলা যেতে পারে ‘Master of man-management and mind-management’। উনি দলের প্রতিটি খেলোয়াড়ের উপর নজর দিতেন। যাতে তারা আরো ভালো ফুটবল খেলতে পারে। তাছাড়া তাদের সাথে খুব কাছের সম্পর্ক গড়ে তুলতেন। উনি দলে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে ভালোবাসতেন। অর্থাৎ Racial এবং Multicultural ঐক্যতা। ওয়েঙ্গার যেটা বিশ্বাস করতেন সেটার মধ্যে থাকতে ভালবাসতেন, কখনই তারকা প্লেয়ার কিনতে পছন্দ করতেন না।তারকা প্লেয়ার তৈরি করতে পচ্ছন্দ করতেন। রোনাল্ডো, মেসির মতন প্রতিভাবানদেরকেও তাদের ইয়ং বয়সে খুঁজে বের করেছিলেন। কিন্তু অর্থ যুদ্ধে অন্য ধনী ক্লাবের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন।

আর্সেনাল টিম টিকে তিনি নিজের হাতে গড়ে তুলেছিলেন। বোরিং আর্সেনাল টিমটার মধ্যে ছন্দ এনে দিয়েছিলেন। শুধু টিমটিকে নয়, নতুন Emirates Stadium, নতুন ট্রেনিং গ্রাউন্ডও ওনার হাতে তৈরি। আর্সেনাল টিমটাকে উনি ভালোবাসতেন ও ভালোবাসেন। আর সেই কারণেই ইউরোপের বড় বড় ক্লাবগুলো থেকে প্রলোভন পেলেও কখনই আর্সেনাল ছেড়ে চলে যাননি। আর্সেনালে বাইশটি বছর কাটিয়ে দিলেন। আর্সেনালের প্রতি আনুগত্য এতটাই যে উনি নতুন Emirates Stadium টির জন্য ব্যাঙ্কের গ্যারেন্টার হিসেবেও ছিলেন। উনি আর্সেনালকে সবমিলিয়ে ষোলোটা কাপ জিতিয়ে ছিলেন। তার মধ্যে EPL ও সাতটি FA কাপ।১৯৯৭ থেকে থেকে ২০০৬ ছিল আর্সেনালের স্বর্ণযুগ।আর ২০০৩-০৪ মরসুমে অপরাজিত থেকে EPL জেতার রেকর্ডটি গড়ে তোলেন। ২০০৬ এর চ্যাম্পিয়ন লিগের ফাইনাল খেলাটা মনে রাখার মতো, যদিও সেটাতে হেরে গিয়েছিল বার্সেলোনার কাছে কিছু বিতর্কমূলক ঘটনার জন্য।

অবশেষে ওনার বাইশ বছরের আর্সেনাল ক্যারিয়ারের যবনিকা পড়ে গেল। শেষের কয়েক বছর খুব ভালো না গেলেও উনি আর্সেনালের সর্ব্বোচ FA কাপ জেতার রেকর্ডটি গড়ে গেলেন, আর ইউরোপের ফুটবলে ইতিহাস রচে গেলেন। উনি আর্সেনাল থেকে অবসর নেওয়ার পরও অনেকগুলি ইউরোপীয় দল থেকে ম্যানেজমেন্টের জন্য অফার পেলেও এখনো পর্যন্ত গ্রহন করেননি। আর বিদায় বেলাতে আর্সেনালের দর্শকদের উদ্দেশ্যে বলে গেলেন

“…..সবার উপরে, আমি তোমাদেরই মতন, আমিও আর্সেনালের ভক্ত….”

(লেখক,অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর
আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়)

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here