হায়দ্রাবাদ ম্যাচ জিতলেই শীর্ষস্থান নিশ্চিত এটিকে-মোহনবাগানের

0
57

অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, স্পোর্টস ডেস্কঃ

শনিবার জামশেদপুর এফসি-র কাছে মুম্বই সিটি এফসি-র দুই গোলে হারের পরে এটিকে মোহনবাগানের রাস্তা এখন অনেকটা পরিষ্কার। লিগ টেবলের যা অবস্থা, তাতে সবুজ-মেরুন শিবিরের আর একটি জয়ই তাদের লিগ সেরার শিল্ড নিশ্চিত করে দিতে পারে এবং সোমবারই সেই দিন হয়ে উঠতে পারে।

ATK Mohunbagan | newsfront.co

শেষ পাঁচ ম্যাচে টানা জয় ও মরশুমের দ্বিতীয় ডার্বি জয়ের পরে এখন টগবগ করে ফুটছে এটিকে মোহনবাগান শিবির। তাই সোমবার তাদের রোখা কঠিন লিগ টেবলের তিন নম্বরে থাকা হায়দ্রাবাদ এফসি-র পক্ষে। আর এই ম্যাচে জিতলে মুম্বই সিটি এফসি-র নাগালের বাইরে চলে যাবে তারা।

আরও একটা রাস্তা অবশ্য তাদের সামনে রয়েছে। শেষ দুই ম্যাচে দুই পয়েন্ট পেলেও এক নম্বর জায়গাটা নিশ্চিত করতে পারবে তারা। তবে লিগপর্বের শেষ ম্যাচে মুম্বই সিটি এফসি-র মুখোমুখি হওয়ার আগেই সোমবার তিলক ময়দানে হায়দ্রাবাদ এফসি-র বিরুদ্ধে ম্যাচ জিততে মরিয়া এটিকে মোহনবাগান।

Jhingan | newsfront.co

অন্য দিকে, চলতি আইএসএলের তিন ও চার নম্বরে ওঠার দৌড়ে এখন এতটাই রেষারেষি চলছে যে, এই সময়ে একটা হার বা ড্র মানেই সেই দৌড় থেকে ছিটকে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনার সম্মুখীন হওয়া। তাই কোনও ভাবেই হায়দ্রাবাদ এই ম্যাচটা হারতে চাইবে না। জয়ের জন্য মরিয়া হয়ে উঠবেই তারা। রবিবার এফসি গোয়া ২-১ গোলে বেঙ্গালুরু এফসি-কে হারানোয় হায়দ্রাবাদের জয়ের প্রয়োজন আরও বেড়ে গেল।

রবিবার বেঙ্গালুরু এফসি-কে হারিয়ে তাদের সেরা চারের দৌড় থেকে ছিটকে দিল এফসি গোয়া। তারা এখন তিন নম্বরে (১৯ ম্যাচে ৩০)। আর চার নম্বরে থাকা হায়দ্রাবাদ এফসি-র ঘাড়ে এখন নিঃশ্বাস ফেলছে নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি। এই দুই দলেরই ঝুলিতে ১৮ ম্যাচে ২৭ পয়েন্ট। ২৪ পয়েন্ট পাওয়া জামশেদপুর এফসি-কেও হিসেবের বাইরে রাখা যাচ্ছে।

কিন্তু শুক্রবার যে রূপ দেখা গিয়েছে এটিকে মোহনবাগানের, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী এসসি ইস্টবেঙ্গলকে যে ভাবে তারা রীতিমতো আধিপত্য বিস্তার করে ৩-১ গোলে হারায়, তার পরে হায়দরাবাদ এফসি-র পক্ষে কাজটা যে অনেক কঠিন হয়ে গিয়েছে, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

সবচেয়ে বড় কথা, দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন সবুজ-মেরুন শিবিরের প্রাণভোমরা রয় কৃষ্ণা, যিনি টানা ছ’টি ম্যাচে আটটি গোল করে আপাতত সোনার বুটের দৌড়ে সবার ওপরে রয়েছেন। সব মিলিয়ে ১৮টি ম্যাচে ১৪টি গোল করেছেন রয়। শুধু রয় না, গোলের মধ্যে এবং ভাল ফর্মে রয়েছেন দলের আরও তিন স্ট্রাইকার ডেভিড উইলিয়ামস, মনবীর সিং ও মার্সেলো পেরেইরাও। তাই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে এটিকে মোহনবাগান।

আরও পড়ুনঃ অস্ট্রেলিয়ান ওপেন পেলেন জোকার, এই নিয়ে নয়বার

দলের স্প্যানিশ কোচ হাবাস সবসময়ই রক্ষণ ও আক্রমণের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার কথা বলেন। তাঁর দলের ফুটবলাররা তাঁর সেই নির্দেশই অক্ষরে অক্ষরে পালন করছেন এখন। আক্রমণ বিভাগ যেমন দক্ষতার শিখরে রয়েছে, তেমনই রক্ষণ বিভাগও ক্রমশ দুর্ভেদ্য দেওয়াল হয়ে উঠছে প্রতিপক্ষের কাছে। শুক্রবার কলকাতা ডার্বিতে ব্রাইট ইনোবাখারে, অ্যান্থনি পিলকিংটন, জাক মাঘোমা, ম্যাটি স্টাইনমানের মতো সুযোগসন্ধানী আক্রমণকারীরা সেই দুর্ভেদ্য দেওয়ালে চিড় ধরাতে পারেননি। সারা ম্যাচে একটির বেশি শট গোলে রাখতেই পারেননি এসসি ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলাররা।

  • আত্মতুষ্টির জায়গা নেই

এত ভাল পারফরম্যান্স যাদের, তাদের শিবিরে আত্মতুষ্টি আসার সম্ভাবনা থাকেই। তবে আত্মতুষ্টিকে কোনও জায়গাই দিতে চান না হাবাস। রবিবার সাংবাদিকদের ভার্চুয়াল বৈঠকে তিনি বলেন, “আমরা কখনও আত্মতুষ্ট হই না। আত্মতুষ্টি জিনিসটাই পেশাদার ফুটবলে দলের পক্ষে খুব খারাপ। হায়দ্রাবাকে শ্রদ্ধা করতেই হবে। ওদের রক্ষণ ও আক্রমণের মধ্যে ভারসাম্য রয়েছে। একদিক থেকে আরেকদিকে ওঠার ক্ষেত্রেও ওরা খুবই ভাল।“

গত ম্যাচে এসসি ইস্টবেঙ্গলকে হারানোটা এখনও মনে রেখেছেন হাবাস, যা সাধারণত করেন না তিনি। তবে এটা বিশেষ জয় বলেই মনে রেখেছেন। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এসসি ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে এই তিনটে পয়েন্ট আমাকে খুবই তৃপ্তি দিয়েছে। এই ডার্বিজয়টা বেশি ভাল, কারণ, এটা ফাইনালের কাছাকাছি বলে। সব ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই ম্যাচটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।“

তাঁর দলের সেরা ফুটবলার রয় কৃষ্ণাকে নিয়ে প্রশ্ন উঠলে হাবাস বলেন, “আমার কাছে ও এই লিগের সেরা খেলোয়াড়। প্রথম দিকে ভাল খেলতে পারেনি ছ’মাস প্রায় বসে থাকার পরে মাঠে নেমেছিল বলে। এখন ও-ই সেরা।“ মার্সেলিনহোর চোট তেমন গুরুতর নয় বলে জানিয়ে দেন হাবাস। এডু গার্সিয়াও যে প্রায় সেরে উঠেছেন, সেই সুখবরও সমর্থকদের জন্য দিতে ভোলেননি এ দিন।

আরও পড়ুনঃ ভাগ্য বদলাবে তাই নাম বদল বলছেন পাঞ্জাব মালিক

গত ম্যাচে কাফ মাসলে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়তে হয় মার্সেলিনহোকে। তিনি এই ম্যাচে খেলতে পারবেন কি না, সেটা যেমন একটা প্রশ্ন তেমনই বড় প্রশ্ন হল, রয় কৃষ্ণাকে এই ম্যাচে হাবাস বিশ্রাম দেবেন কি না। সেমিফাইনালে যাতে তরতাজা হয়ে নামতে পারেন রয়, সেই জন্যই এই ভাবনা রয়েছে তাঁর। সোমবার জিতে গেলে অবশ্য শেষ ম্যাচে মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে রয়কে বিশ্রাম দেওয়া যেতেই পারে। ভাল ফর্মে থাকা ডেভিড, মনবীরদের ওপর ভরসা করতে পারেন হাবাস।

  • কঠিন চ্যালেঞ্জ হায়দরাবাদের

এটিকে মোহনবাগানের মতো আত্মবিশ্বাসে ফুটতে থাকা একটা দলের বিরুদ্ধে জেতা হায়দ্রাবাদ এফসি-র পক্ষে মোটেই সোজা হবে না। যদিও শেষ দশটি ম্যাচে অপরাজিত রয়েছে তারা। কিন্তু তার মধ্যে ছ’টি ড্র ও চারটি জয়। ডার্বির এক সপ্তাহ আগেই এসসি ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ম্যাচের শেষ মুহূর্তে গোল করে হার বাঁচান স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড আরিদানে সান্তানা।

গত ম্যাচে অবশ্য কেরালা ব্লাস্টার্সকে ৪-০ গোলে হারিয়ে এ বারের লিগে তাদের সবচেয়ে বড় ব্যবধানের জয়টা পায়। সান্দাজার জোড়া গোলে ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি পায় তারা। সান্তানা ও জোয়াও ভিক্টর পরের দু’টি গোল করে দলকে স্মরণীয় জয় এনে দেন।

দলের কোচ মানুয়েল মার্কেজ এ দিন সাংবাদিকদের বলেন, “ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে জয়টা গুরুত্বপূর্ণ হলেও ওটা আমাদের সেরা পারফরম্যান্স ছিল না। প্রথমার্ধে আমরা ভাল খেলতে পারিনি। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে একটা গোল পেয়ে যাওয়ার পরে আমরা মানসিক ভাবে ওদের চেয়ে অনেকটা এগিয়ে যাই। একটা জয় পরের ম্যাচের জন্য দলকে মানসিক ভাবে অনেকটাই এগিয়ে দেয় ঠিকই। কিন্তু পরের ম্যাচে কাদের বিরুদ্ধে খেলছি, সেটা একটা ব্যাপার। আমরা কাল সবচেয়ে শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে নামছি।“

  • সমীহ রয় কৃষ্ণার বাগানকে

বিপক্ষের সেরা ফরোয়ার্ড রয় কৃষ্ণাকে নিয়ে যে আলাদা ভাবনা রয়েছে হায়দ্রাবাদের কোচের, তা তাঁর কথাতেই বোঝা গেল। বললেন, “রয় কৃষ্ণাকে মার্ক করা খুব কঠিন। ও লিগের সেরা ফরোয়ার্ড। ওর অভিজ্ঞতাও যথেষ্ট। কৃষ্ণা পা, মাথা দু’ভাবেই গোল করতে পারে। ও জানে কোন মুহূর্তে ওকে দৌড়তে হবে। ও খুব একটা লম্বা না হলেও বেশ চালাক। আমার কাছে ও খুবই ভাল মানের একজন সেন্টার ফরোয়ার্ড।“

নিজের দল নিয়ে তাঁর বক্তব্য, “আমরা টানা দশ ম্যাচে অপরাজিত। এটাই কিন্তু মোটেই সোজা ব্যাপার নয়। আমাদের মোটিভেশনের স্তর যথেষ্ট উঁচুতে রয়েছে। যে ম্যাচে আমরা ভাল ফুটবল খেলি না, সে রকম অনেক ম্যাচেও আমাদের হারানো কঠিন হয়ে ওঠে।“

সোমবারের ম্যাচের আগে ব্লাস্টার্স-ম্যাচই ছিল হায়দ্রাবাদের। অর্থাৎ তারা পাঁচ দিনের বিশ্রামের পর সোমবার মাঠে নামবে। সেখানে ডার্বির ধকল সামলে দু’দিন পরেই মাঠে নেমে পড়তে হবে সবুজ-মেরুন বাহিনীকে। এই ধকল সামলে কী ভাবে নিজেদের স্বাভাবিক ফর্মে ফিরে আসে হাবাসের দল, সেটাই দেখার।

গঙ্গাপাড়ের দলকে স্বাভাবিক ভাবেই যথেষ্ট সমীহ করছেন মার্কেজ। বলেন, “ওদের দল খুবই সঙ্ঘবদ্ধ ও সেরা ফর্মে রয়েছে ওরা। লেনি ও মার্সেলিনহো ওদের দলটার মধ্যে ভারসাম্য এনেছে। ওদের কোচ যে স্টাইলে ওদের খেলাতে চায়, ওরা সেই স্টাইলেই খেলে। মার্সেলিনহো কাল খেলতে পারবে কি না, জানি না। ওর তো চোট রয়েছে। তবে ওদের বেঞ্চে প্রণয়, জয়েশ, সুমিত রাঠির মতো ভাল ফুটবলার রয়েছে। চ্যালেঞ্জটা দারুন।“

প্রথম লেগে সান্তানাদের বিরুদ্ধে ম্যাচে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে প্রায় একক প্রচেষ্টায় বিপক্ষের একাধিক ডিফেন্ডারের বাধা কাটিয়ে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন জলন্ধরের তারকা স্ট্রাইকার মনবীর। কিন্তু দশ মিনিটের মধ্যেই তিনি নিজেদের পেনাল্টি বক্সে গোলমুখী নিখিল পূজারিকে পিছন থেকে ধাক্কা দেওয়ায় তার চরম মাশুল দিতে হয় দলকে। পেনাল্টি থেকে গোল করে সমতা আনেন হায়দ্রাবাদের ব্রাজিলীয় মিডফিল্ডার জোয়াও ভিক্টর। তবে এ বার আরও হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখা গেলে অবাক হবেন না।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here