অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, স্পোর্টস ডেস্কঃ
সদ্য বিদায় নেওয়া ২০২০-র শেষে লিগ টেবলের শীর্ষে থাকা এটিকে মোহনবাগান নতুন বছরের শুরুতেই মুখোমুখি নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি-র। দেশের একই প্রান্তের ক্লাব। তাই তাদের পরস্পরকে প্রতিবেশী বলা যেতেই পারে। তবে রবিবার তিলক ময়দানে অবশ্য তাদের সম্পর্ক প্রতিবেশীদের মতো মধুর থাকার সম্ভাবনা কম।
চলতি হিরো আইএসএলে যে দু’টি জয় পেয়েছে উত্তর-পূর্ব ভারতের দলটি, তার মধ্যে একটি কলকাতার অপর ক্লাব এসসি ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে। তাই রবিবার ফতোরদা স্টেডিয়ামে কলকাতার অপর ক্লাব এটিকে মোহনবাগানকে হারিয়ে ফের অঘটন ঘটাতে মরিয়া তারা। যেমন ঘটিয়েছিল প্রথম ম্যাচে মুম্বই সিটি এফসি-কে হারিয়ে।
রক্ষণে অশনি সঙ্কেত
আটটি ম্যাচ খেলা হয়ে গেলেও ৫ ডিসেম্বরের পর থেকে আর জয় পায়নি স্প্যানিশ কোচ জেরার নুসের দল। তাই রবিবার জয়ে ফিরতে মরিয়া তারা। এমন নয় যে দলটা গোল পাচ্ছে না বা গোল করার লোকের অভাব আছে নুসের দলে। কিন্তু গোল করছেও যেমন, তেমনই গোল খাচ্ছেও। চলতি লিগে এ পর্যন্ত দশ বা তার বেশি গোল দিয়েছে মাত্র পাঁচটি দল। তার মধ্যে এটিকে মোহনবাগান না থাকলেও রয়েছে নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি।
আট ম্যাচে দশটি গোল দিয়েছে তারা। তিন স্ট্রাইকার গিনির ইদ্রিসা সিলা, পর্তুগীজ লুই মাচাডো ও ঘানাইয়ান কোয়েসি আপিয়া, তিনজনই গোলের মধ্যে রয়েছেন। আপিয়া যেখানে তিনটি গোল করেছেন, সেখানে বাকি দু’জন দু’টি করে গোল পেয়েছেন। বিপক্ষের এই অ্যাটাকারদের বিরুদ্ধে তাই যথেষ্ট সাবধানে থাকতে হবে সবুজ-মেরুন ডিফেন্ডারদের। যদিও শোনা যাচ্ছে রবিবার আপিয়াকে পাবে না নর্থইস্ট ইউনাইটেড। গত ম্যাচে গুরুতর চোট পাওয়ায় এই ম্যাচে সম্ভবত তিনি খেলতে পারবেন না।
আরও পড়ুনঃ ১৯ ফেব্রুয়ারি হতে পারে ফিরতি ডার্বি
শনিবার এই খবর জানিয়ে দলের কোচ জেরার নুস বলেন, “আমরা যথাসম্ভব দ্রুত আপিয়াকে প্রস্তুত করার চেষ্টা করছি। মেডিক্যাল টিমের সঙ্গে কথা বলছি। দলের খেলোয়াড়রাই আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই ওদের ব্যাপারে অযথা ঝুঁকি নেব না। সামনে অনেক ম্যাচ খেলতে হবে আমাদের। সব সময় একজন খেলোয়াড় একশো শতাংশ ফিট থাকতে পারে না। তবে তাকে ফিট রাখার জন্য যা যা করার সবই করি আমরা।“
গত ম্যাচে যদিও তাদের ডিফেন্সের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বহুবার বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করেছিল চেন্নাইন এফসি। কিন্তু গোলকিপার অরিন্দম ভট্টাচার্যের দুরন্ত পারফরম্যান্সই তাদের গোল খাওয়া আটকে দেয় বারবার। দুই উইং বরাবর আক্রমণে উঠে সাতবার গোলে শট নিয়েছিলেন চেন্নাইনের আক্রমণকারীরা। প্রতিবারই তাঁদের চেষ্টা ব্যর্থ করে দেন অরিন্দম। তবে নর্থইস্টের আক্রমণ বিভাগ এ রকম সুযোগ বারবার পেলে তারা তা কাজে না লাগিয়ে ছাড়বে বলে মনে হয় না।
সব মিলিয়ে দশটি গোল দিয়েছে তারা। তার মধ্যে ন’টিই বক্সের মধ্যে থেকে। আর পেনাল্টি আদায়ের ব্যাপারেও বিশেষজ্ঞ এই দলের ফরোয়ার্ডরা। গত ম্যাচেও পেনাল্টি থেকে গোল পেয়েছেন আপিয়া। তাই রবিবার তিরি, ঝিঙ্গন, প্রীতমরা বিপক্ষের ফরোয়ার্ডদের ঘন ঘন বক্সে ঢুকতে দিলে বিপদে পড়তে পারেন।
তবে নুস মনে করেন, ম্যাচটা তাদের পক্ষে বেশ কঠিন হবে। শনিবার সাংবাদিকদের ভার্চুয়াল বৈঠকে তিনি বলেন, “প্রতিপক্ষ হিসেবে ওরা (এটিকে মোহনবাগান) বেশ কঠিন। লিগ টেবলের দিকে তাকালেই বোঝা যায় কেন এ কথা বলছি। ওদের বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই একসঙ্গে অনেক দিন ধরে খেলছে। এটা ওদের একটা বড় সুবিধা। ওরা একটামাত্র ম্যাচ হেরেছে। মাত্র তিনটে গোল খেয়েছে। এই সংখ্যাটা আমরা বাড়াবার চেষ্টা করব ঠিকই। তবে সেটা বেশ কঠিন কাজ।“
আরও পড়ুনঃ মুস্তাক আলি টি-২০’র মুম্বই দলে অর্জুন
আক্রমণে অতিনির্ভরতা
এটিকে মোহনবাগান কার্যত চার ফরোয়ার্ডে খেললেও বেশি গোল পাচ্ছেন না কোনও ম্যাচেই। এ পর্যন্ত আটটি ম্যাচে আটটি গোল পেয়েছেন রয় কৃষ্ণা (৫), ডেভিড উইলিয়ামস (১) ও মনবীর সিংরা (২)। এই তিন ফরোয়ার্ডই গোল পেয়েছেন শুধু। গোলের জন্য ফরোয়ার্ডদের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা আন্তোনিও লোপেস হাবাসের দলকে ভোগাতে পারে। তিন ফরোয়ার্ডকে আটকে দিয়েই গোলের রাস্তা বন্ধ করে দিচ্ছে।
রয় সবচেয়ে বেশি গোল করলেও তিনি ইদানীং নিয়মিত গোল পাচ্ছেন না। এই বিষয়ে কোচ হাবাস শনিবার সাংবাদিকদের বলেন, “শুধু রয় কৃষ্ণার পারফরম্যান্স নিয়ে বসে থাকলে আমার চলবে না। আমাকে পুরো দলের পারফরম্যান্স নিয়ে চর্চা করতে হয়। দলের পারফরম্যান্স একশো শতাংশ ঠিক আছে। রয় কৃষ্ণা তো গোল পাবেই। তবে আসল কথা হল দলের মানসিকতা ও সার্বিক পারফরম্যান্স।“
স্প্যানিশ তারকা এডু গার্সিয়া প্রথম দিকের কয়েকটা ম্যাচে রয় কৃষ্ণার সঙ্গে আক্রমণ বিভাগে শুরু করলেও পরের দিকে তিনি পিছন থেকে খেলছেন রয়ের সঙ্গে মনবীর, উইলিয়ামসও যাতে প্রথম এগারোয় খেলতে পারেন। বিপক্ষের ডিফেন্ডাররা তিন ফরোয়ার্ডকে কড়া মার্কিংয়ে রাখলে তাঁকে উঠে গিয়ে গোল করতে হবে।
এই প্রসঙ্গে এদিন এডু গার্সিয়া সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, “এটা কোচ ঠিক করেন, কে কোন পজিশনে খেলবে। আমি মাঝমাঠে বা দ্বিতীয় স্ট্রাইকার হিসেবে খেলতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করি। গত ম্যাচে এ রকমই ঠিক হয়েছিল। তবে আমরা সেরাটা দিতে পারিনি। ডেভিড আর মনবীর, দুজনেই ভাল স্ট্রাইকার, যথেষ্ট গতিময়। তাই এই অপশনটাই বাছা হয়েছিল।“ তিনি নিজে যে এখন সেরা ফর্মে নেই তা স্বীকার করে নিয়ে এডু বলেন, “আমি আরও ভাল খেলতে পারি। সেরা জায়গায় নেই এখন। মরশুমের শুরুটা ভাল হয়নি। চোট হয়েছিল। এখন উন্নতি করার চেষ্টা করছি। তবে দল আমার ওপর নির্ভরশীল এ কথা ঠিক নয়। আমরা দল হিসেবে খেলি। কোনও একজন বা দু’ জন খেলোয়াড়ের ওপর নির্ভর করে থাকি না।“
দু’ দিক থেকে সমান ভাবে উইং প্লে না হওয়াটাও বিপক্ষের ডিফেন্সের জমাট থাকার একটা বড় কারণ। মাইকেল সুসাইরাজ চোট পেয়ে লিগ থেকে কার্যত ছিটকে যাওয়ায় বাঁ দিকের উইং দিয়ে আক্রমণে ওঠার লোকের অভাবে ভুগছেন হাবাস। সেই কারণেই দুই উইং ব্যাকে খেলার পরিকল্পনা পাল্টে ফেলতে হয়েছে তাঁকে এবং এই কারণেই প্রবীর দাসকেও নিয়মিত কাজে লাগাতে পারছেন না কোচ।
তবে দলের গোলের সংখ্যা কম হওয়ায় বিন্দুমাত্র চিন্তিত নন হাবাস। বলেন, “আমি চিন্তিত হতাম, যদি ওরা বেশি সুযোগ তৈরি করতে না পারত। ফুটবলে সব পরিস্থিতির প্রত্যেকবার একই পরিণতি হয় না। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকমের হয়। এটাই ফুটবল।“ অর্থাৎ তিনি আশাবাদী, এমন সুযোগ তৈরি চলতে থাকলে গোল আসবেই।
মাঝমাঠে হাভির অভাব
মাঝমাঠে হাভিয়ে হার্নান্ডেজকে না পাওয়াটাও সমস্যায় ফেলছে সবুজ-মেরুন বাহিনীকে। তিনি না খেলায় মাঝমাঠে চাপ পড়ে যাচ্ছে এবং কার্ল ম্যাকহিউ ডিফেন্সের সঙ্গে মাঝমাঠের সামঞ্জস্য রাখার যে ভূমিকা পালন করছিলেন, তা করতে পারছেন না এখন। ফলে ডিফেন্ডাররাও হয়তো সামাল দিতে পারছেন না।
হাভির প্রসঙ্গে হাবাস বলেন, “ওকে নিয়ে আমরা বেশি তাড়াহুড়ো করতে চাই না। গত ম্যাচের আগে ও সুস্থ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ম্যাচ শুরুর আগেই ওর কিছু সমস্যা দেখা দেয়। তাই ওকে জোর করে মাঠে নামাতে চাইনি।“
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584