নিজস্ব সংবাদদাতা, ওয়েব ডেস্কঃ
মায়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে আটক নেত্রী অং সাং সুচি, প্রেসিডেন্ট ওয়েন্ট মিন্ট-সহ শাসকদলের দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। নভেম্বর মাসে নির্বাচনের ফল ঘিরে ক্রমশ উত্তেজনা বাড়ছিল মায়ানমারে, এরপর সোমবার সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করে এবং জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে।
মায়ানমার সেনাবাহিনীর মালিকানাধীন টেলিভিশনে প্রচারিত একটি ভিডিওতে বলা হয়েছে, ক্ষমতা সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের হাতে দেওয়া হয়েছে এবং এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
Secretary-General Urges All Actors to Respect Myanmar Election Outcomeshttps://t.co/N3UesAwJ0g pic.twitter.com/ZXp4ybmljw
— United Nations in Myanmar (@UNinMyanmar) January 29, 2021
সংবাদসংস্থা রয়টার্স সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে। নেতাদের আটক করার বিষয়টি নিশ্চিত করে বার্তা দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) মুখপাত্র মিও নয়েন্ট।গত বছর নভেম্বরের নির্বাচনে অং সান সুচির এনএলডি সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু সেনাবাহিনী নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ তোলে। সোমবার নব-নির্বাচিত সংসদের প্রথম বৈঠক হবার কথা, কিন্তু সেনাবাহিনী অধিবেশন স্থগিত করার আহ্বান জানায়।
রাজধানী নাইপিদো এবং প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনের রাস্তায় সেনাবাহিনী টহল দিচ্ছে। দেশের প্রধান শহরগুলিতে মোবাইল ইন্টারনেট এবং টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম এমআরটিভি জানিয়েছে যে, কারিগরি সমস্যার কারণে তাদের সম্প্রচার বন্ধ রয়েছে।
গত সপ্তাহে মায়ানমারের সেনাবাহিনী সংবিধান মেনে চলার অঙ্গীকারের কথা বললেও শেষ পর্যন্ত সামরিক অভ্যুত্থান করেছে তারা। সেদেশের সংবিধান অনুযায়ী সামরিক বাহিনী উল্লেখযোগ্য ক্ষমতা রয়েছে এবং সে ক্ষমতাবলে তারা জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারে।
সেনারা দেশের বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে গিয়ে তাঁদের আটক করে নিয়ে যায় বলে তাঁদের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন। এনএলডি মুখপাত্র মিও নয়েন্ট রয়টার্সকে জানান, প্রেসিডেন্ট মিন্ট এবং অন্যান্য নেতাদের ভোরে আটক করা হয়। মিও নয়েন্ট জনগণের কাছে আবেদন জানিয়েছেন যাতে তাঁরা বেপরোয়া কোনো পদক্ষেপ না নেন এবং আইন মেনে চলেন।
মায়ানমারে গত ৮ নভেম্বরের নির্বাচনে এনএলডি পার্টি ৮৩% আসন পায় যাকে সু চির অসামরিক সরকারের প্রতি জনসাধারণের অনুমোদন হিসেবেই দেখা হচ্ছে। ২০১১ সালে সামরিক শাসন শেষ হওয়ার পর এটি দ্বিতীয়বার নির্বাচন ছিল মায়ানমারে।
এই পরিস্থিতিতে সামরিক বাহিনী নির্বাচনের ফলকে অস্বীকার করে। সুপ্রিম কোর্টে দেশের প্রেসিডেন্ট এবং ইলেক্টোরাল কমিশনের প্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে সামরিক বাহিনী।
আরও পড়ুনঃ করোনা উৎস খুঁজতে ইউহানের মাছ বাজারে পৌঁছলেন হু’র প্রতিনিধিরা
মায়ানমারের স্বাধীনতার নায়ক জেনারেল অং সানের মেয়ে অং সান সু চি। তাঁর যখন দুই বছর বয়স তখন জেনারেল অং সানকে হত্যা করা হয়। ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে স্বাধীনতা অর্জনের মাত্র দুই বছর পর এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল। সু চিকে একসময় মানবাধিকারের বাতিঘর বলা হত- যিনি একজন নীতিবান অধিকারকর্মী হিসেবে দশকের পর দশক ধরে মায়ানমারের শাসন ক্ষমতায় থাকা নির্দয় সামরিক জেনারেলদের চ্যালেঞ্জ করতে নিজের স্বাধীনতাকে জলাঞ্জলি দিয়েছিলেন।
১৯৯১ সালে তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয় এবং তাকে ক্ষমতাহীনদের ক্ষমতার অনন্য উদাহরণ হিসেবে সম্বোধন করা হতো। তখনও তিনি গৃহবন্দীই ছিলেন। ১৯৮৯ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে অন্তত ১৫ বছর বন্দী জীবন কাটিয়েছেন সু চি।
আরও পড়ুনঃ ‘মেধাবী’ বিদেশিদের নাগরিকত্ব দেবে সংযুক্ত আরব আমিরশাহী
২০১৫ সালের নভেম্বরে ২৫ বছরের মধ্যে প্রথমবার অনুষ্ঠিত অবাধ নির্বাচনে অংশ নিয়ে ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি এনএলডি’র নেতৃত্ব দেন এবং যাতে বড় ধরনের জয় পান সু চি। কিন্তু মায়ানমারের সংবিধান অনুযায়ী তিনি প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি কারণ তার সন্তানেরা বিদেশি নাগরিক। ৭৫ বছর বয়সী সু চি একজন ডি ফ্যাক্টো নেতা হিসেবেই সুপরিচিত। তবে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর তার নেতৃত্বকে দেশটিতে মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতি হওয়া অন্যায় আচরণ দিয়েই বর্ণনা করা হয়।
২০১৭ সালে রাখাইন রাজ্যে পুলিশ স্টেশনে প্রাণঘাতী হামলার পর রোহিঙ্গাদের উপর সেনাবাহিনীর ভয়াবহ নির্যাতন শুরু হয় মায়ানমারে। কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গা সেসময় প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।
আন্তর্জাতিক স্তরে সু চির যাঁরা সমর্থক ছিলেন তাঁরাই সু চি র বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিলেন যে, তিনি ধর্ষণ, হত্যা এবং সম্ভাব্য গণহত্যা রুখতে কোন পদক্ষেপ নেননি। এমনকি ক্ষমতাধর সামরিক বাহিনীর নিন্দাও করেননি এবং তাদের নৃশংসতার কথাও স্বীকার করেননি।
২০১৯ সালে হেগ-এ আন্তর্জাতিক আদালতের শুনানিতে সামরিক বাহিনীর পদক্ষেপের বিষয়ে তার নিজের স্বপক্ষে উপস্থাপিত যুক্তি মোড় ঘুরিয়ে দেয়। এরপর তার আন্তর্জাতিক সুনাম বলতে তেমন কিছু অবশিষ্ট থাকে না। দেশের ভেতরে ‘দ্য লেডি’ নামে পরিচিত মিস সু চি বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠদের কাছে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় যারা রোহিঙ্গাদের প্রতি তেমন সহানুভূতিশীল নয়।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584