শরীয়তুল্লাহ সোহন, ওয়েব ডেস্কঃ
বেশ কিছু দিন ধরে বর্ণবাদ নিয়ে তোলপাড় ব্রিটিশ ক্রিকেট। এই নিয়ে ঝড় উঠেছে বিশ্ব ক্রিকেটে। এর পিছনে নেপথ্যে নায়ক আজিম রফিক। কিন্তু প্রশ্ন হল এই আজিম রফিক কে? কেনই বা একে নিয়ে এত চর্চা??
আজিম রফিক পাক বংশোদ্ভূত একজন ক্রিকেটার। যিনি ১৯৯১ সালে পাকিস্তানের করাচিতে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র দশ বছর বয়সে পরিবারের সাথে ইংল্যান্ডে বসবাস শুরু করেন। ক্রিকেটে হাতে খড়ি হয় ব্রিটিশ ভূমিতে। ইংল্যান্ডের জাতীয় দল বাদে খেলেন সমস্ত বয়সভিত্তিক দলে। ইংল্যান্ডের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী ক্রিকেট ক্লাব ইয়র্কশায়ারে খেলেন দীর্ঘদিন। এই ক্লাবের হয়ে সব ফরম্যাট মিলিয়ে খেলেন ১৫০ এর অধিক ম্যাচ। খেলোয়াড়ী প্রদর্শনীতে খুব উচ্চমানের ছিলেন না। খেলোয়াড়ী পরিসংখ্যান সাদামাটা ছিল এই অলরাউন্ডারের।
তবে খেলোয়াড়ী পারফরম্যান্স সাদামাটা হলেও প্রতিবাদী কন্ঠ আছে তীব্র। সেই তীব্র কন্ঠকে হাতিয়ার করে বর্ণবাদী বিতর্কে তোলপাড় করে তুলছে বিট্রিশ ক্রিকেট মহলে। অন্যদের প্রতি ইংল্যান্ডের কেমন বর্ণবাদী মনোভাব সেটা প্রকাশ্যে এনেছেন তিনি। ২০১৮ সালে তিনি সর্বপ্রথম ইয়র্কশায়ারের বিপক্ষে বর্ণবাদের অভিযোগ তুলে আনেন। কিন্তু প্রথম পর্যায়ে ইয়র্কশায়ার তাঁর দাবিকে অনর্থক বলে দাবি করেন এবং ক্লাবের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়, তাঁর সাথে এমন কিছু হওয়ার জন্য সে নিজেই দায়ী।
তবে তিনি দমে যাননি, লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত শেষ হাসি হেসেছেন তিনি। কারণ ব্রিটিশ সাংসদে এই বিষয়টি উপস্থাপনা করেন তিনি। তিনি সেখানে জানান, ইয়র্কশায়ার দলের অধিকাংশ ক্রিকেটার আমাকে পাকি বলে ডাকতো। আমাকে তারা ১৫ বছর বয়সে জোর করে মদ্যপান করায় এবং তাঁরা তাঁদের হাবভাবে বুঝিয়ে দিয়েছিল, তাদের সাথে উঠাবসা করতে হলে মদ্যপান করতে হবে। এছাড়াও তিনি জানান, এশিয়ান ক্রিকেটারদের বা গায়ের রং কালো ক্রিকেটারদের কেলভিন বলে ডাকতো।
এমনকি ভারতীয় ক্রিকেটার চেতশ্বর পূজারাকেও এই নামে ডাকা হত। তারপরে তিনি বলেন, দলের ক্রিকেটাররা অনেক অমানবিক ছিলেন। তিনি জানান, একবার অনুশীলনের সময় জানতে পারি, আমার মেয়ের হার্ট বিট থেমে গেছে। এমন ঘটনা শুনে তারা কোন প্রকার সহমর্মিতা প্রকাশ করেনি। তবে তিনি সবথেকে গুরুতর অভিযোগ আনেন যেটি, সেটা হল, “একবার তিনি নাকি তাঁর সতীর্থদের সাথে গল্প করছিলেন। সেই সময় গ্যারি ব্যালেন্স এসে বলেন ওর সাথে বন্ধু ভেবে এত গল্প করার কিছু নেই। কারণ সে কোন শেখ নয়, একজন পাকি। তাঁর কোন তেলের ভান্ডারও নেই।” এছাড়াও ইংল্যান্ডের অন্যতম ক্রিকেটার জো রুটের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “রুট আমাদের সাথে তেমন আচরণ করত না। তবে রুট সামনে সমস্ত কিছু ঘটত। এ ব্যাপারে তিনি কোন রকম প্রতিবাদ করত না বরং নীরব থাকতেন।”
আরও পড়ুনঃ অধিনায়কের আর্ম ব্যান্ড পরেই কোহলিকে ছুঁয়ে ফেললেন হিটম্যান রোহিত শর্মা
এই সমস্ত ঘটনা সামনে আসা মাত্রই নড়েচড়ে বসে ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড ইসিবি। ইসিবি এই কঠিন পরিস্থিতি দমনে কঠিন পদক্ষেপ নেন। গ্যারি ব্যালেন্স তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ স্বীকার করলে তাঁকে ইসিবি অনিদিষ্ট কালের জন্য ক্রিকেট থেকে নির্বাসিত করেছেন। ইয়র্কশায়ার ক্লাবের ঐতিহ্যবাহী মাঠ লিডসে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে যাবতীয় আন্তর্জাতিক ম্যাচ। অনেক স্পনসর সম্পর্ক ছিন্ন করেছে এই ক্লাবের সাথে। ইসিবি স্পষ্টভাবে তাঁদের অবস্থান ব্যক্ত করে বলেন, তাঁরা সবসময় বর্ণবাদের বিরুদ্ধে। তাই এমন আচরণ কোনভাবেই মেনে নিতে পারবে না।
তবে শেষ পর্যন্ত বর্ণবাদের এই বিতর্কে নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে হাশিম আমলার প্রসঙ্গ। ক্রিকেট যদি জেন্টল গেম হয়, তাহলে সেই খেলার সবথেকে জেন্টলম্যান হিসেবে ধরা হয় হাশিম আমলাকে। সেই হাশিম আমলাকে নাকি মদ্যপান করার জন্য ২-৩ ঘন্টা ধরে জোড়াজোড়ি করেন এক ব্যক্তি। স্কাই স্পোর্টসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনটায় জানান ক্যারিবিয়ান পেস বোলার টিনো বেস্ট।
আরও পড়ুনঃ আবারও দল কিনেছেন কিং খান, এবার আরব আমিরাতের টি২০ লীগে দল কিনেছেন তিনি
তিনি বলেন, “একদিন আমি দেখি এক ব্যক্তি প্রায় ২-৩ ঘন্টা ধরে হাশিম আমলাকে মদ্যপান করার জন্য জুড়াজুড়ি করছে। আর তিনি বারবারই বিনয়ী হয়ে বলছে আমি এটা পান করি না। তবে লোকটি এতটাই নাছোড় হয়ে পড়েছিল, সে আমলাকে ছাড়তেই চাইছিল না। শেষপর্যন্ত আমি থাকতে না পেরে বলি, ও একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান। তাই এসব ও পান করে না।”
এইখানে শেষ করেনি টিনো বেস্ট তিনি আরও বলেছেন, “মদ্যপান ইংরেজ ক্রিকেট সংস্কৃতির অন্যতম দিক।” যদিও হাশিম আমলা অ্যালকোহল বা পানীয়কে কতটা এড়িয়ে চলে তা বিশ্ব ক্রিকেট এর সমর্থক গণ ভালোভাবেই জানেন। তিনি এতটাই ধর্মপ্রাণ, যে অ্যালকোহলের লোগো ওয়ালা জার্সি পর্যন্ত পরিধান করে না।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584