শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের একটি পৃথক রাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। তিনি মেয়র থাকাকালীন কলকাতার একাধিক উন্নয়নের পাশাপাশি রাজ্য প্রশাসনের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর সামলেছিলেন। কিন্তু তার জীবনে বৈশাখী পর্ব শুরু হওয়ার পরেই তার রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে তৃণমূল এবং বিজেপি দু’পক্ষই বরাবর ধন্দে।
এমতাবস্থায় শোভনকে গুরুত্ব দিতে রাজি হলেও বৈশাখীর যে সেভাবে কোনও গুরুত্ব নেই তা নিয়ে ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে আক্রমণ করেছিলেন বিজেপি মহিলা মোর্চার সভাপতি অগ্নিমিত্রা পল। এবার সেই ফেসবুক পোস্টেই পরপর দশটি পয়েন্ট লিখে নিজের রাজনৈতিক গুরুত্ব বোঝালেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজনৈতিক মহলের অনেকেরই মত, শোভন চট্টোপাধ্যায়কে সিঁড়ির ধাপ করেই রাজনৈতিক উত্থান হয়েছে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ‘শোভন চট্টোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক গুরুত্ব অনেক বেশি। বৈশাখীদি একই গুরুত্ব পাবেন না’, অগ্নিমিত্রার এহেন মন্তব্যে তোপ দেগেছেন শোভন বান্ধবী।
আরও পড়ুনঃ রোজভ্যালির ৬ কোটি টাকা মূল্যের গাড়ি বিক্রির অনুমতি চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ ইডি
অগ্নিমিত্রাকে উদ্দেশ্য করে ফেসবুকে পরপর ১০টি পয়েন্ট লিখে নিজের রাজনৈতিক বা সাংগঠনিক দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ব্যাপারে জানালেন তিনি। সেইসঙ্গে এই মন্তব্যে শোভন চট্টোপাধ্যায়ও যে ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত, সেকথাও জানিয়েছেন বৈশাখী।
অগ্নিমিত্রা পালকে বিঁধে প্রথমে ব্যক্তিগতভাবে বৈশাখী বলেছেন, ”অগ্নিমিত্রা পাল যখন বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন, তাঁর একটাই পরিচয় ছিল, তিনি একজন ফ্যাশান ডিজাইনার। যতদূর আমি জানি, আপনার কোনও রাজনৈতিক পরিচয় ছিল না। কখনও কোনও রাজনৈতিক ভূমিকাও পালন করেননি। তা সত্ত্বেও বিজেপি মহিলা মোর্চার প্রধানের মতো গুরুদায়িত্ব পেয়েছেন।”
আরও পড়ুনঃ গরু পাচার কাণ্ডে ধৃত এনামুলের কোভিড রিপোর্ট ফের পজিটিভ
এরপরে নিজের রাজনৈতিক গুরুত্ব বোঝাতে তিনি লিখেছেন, “আমি ওয়েবকুপার জেনারেল সেক্রেটারি পদে ছিলাম। অনৈতিক, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। পেজ ৩-তে আমার কখনও নাম আসেনি। পুরুলিয়া থেকে বর্ধমান, গোসাবা থেকে গড়িয়া, ধর্মতলা থেকে যাদবপুর পর্যন্ত ঘুরেছি, ভোটে টিকিট পাওয়ার জন্য নয়, আমার দলের সদস্যপদ বাড়ানোর জন্য। গার্হস্থ্য হিংসা, শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে লড়ার চেষ্টা করেছি। কিছু ছবি পোস্ট করে জনসমর্থন পাইনি। মিটিং-মিছিলে অংশ নিয়ে মানুষের ভালবাসা অর্জন করেছি।”
একইসঙ্গে অগ্নিমিত্রার পূর্বসূরী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের প্রশংসা করে বৈশাখী ফেসবুকে লিখেছেন, ”আপনার পূর্বসূরী লকেট চট্টোপাধ্যায় সুহৃদয়ে আমায় বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আমন্ত্রণ জানাতেন। যার জন্য ওঁকে শ্রদ্ধা করি। তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষও বিজেপি দলে আমার অবস্থান স্বীকৃতি দিয়েছেন।”
আরও পড়ুনঃ ইডি-র নথি জাল করে ‘তোলাবাজি’, গ্রেফতার ব্যবসায়ী সুদীপ্ত রায়চৌধুরী
আপনার মন্তব্যে আমি ব্যথিত। কোনও বিরোধী দল নয়, আমার দলের সহকর্মীই আমাকে সমালোচিত করলেন…চোখে আঙুল দাদার মতো যদি সারাক্ষণ কেউ এরকম করতে থাকেন, তাহলে বিরক্ত হই। আমার কোনও গডফাদার নেই। মুকুল রায়, শোভন চট্টোপাধ্যায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে রাজনৈতিক মূল্যবোধ শিখেছি।
বিজেপিতে রামলালজি, শিবপ্রকাশজি, মেননজি, অমিতাভদার থেকে অনেক উত্সাহ পেয়েছি…শোভন আমার মেন্টর, আমি ওঁকে শ্রদ্ধা করি…লকেট, রূপা, ভারতী ঘোষদের পছন্দ করি, যাঁরা আমার মতো একজন ক্ষুদ্র নেতাকে অনুপ্রাণিত করতে পারেন।”
তাঁর দীর্ঘ পোস্টের শেষে বৈশাখী এদিন অগ্নিমিত্রাকে মনে করিয়ে দিতে চেয়েছেন, ‘সমস্ত শব্দ খুবই মূল্যবান। সেগুলি অবশ্যই সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করা উচিত। আপনার এই দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্যে কিন্তু শোভন কোনওভাবেই খুশি হননি। তিনিও আপনার কথায় চরম বিরক্ত এবং অসন্তুষ্ট।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে এই শেষাংশে আসল তুরুপের তাস খেলেছেন বৈশাখী। তৃণমূলে থাকার সময় শোভন চট্টোপাধ্যায়ের প্রবল রাজনৈতিক গুরুত্ব থাকার কারণে তাকে নিয়ে উৎসাহী বিজেপি। কিন্তু তার বান্ধবী বৈশাখীকে যদি দলের মধ্যেই অপমান করা হয়, তাহলে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি সেভাবে শোভন চট্টোপাধ্যায়কেও পাবে না, এটা স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিয়েছেন শোভন বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584