বাংলাদেশ পুলিশের ‘মানবিক’ তকমায় কালিমা

0
85

মুনিরুল তারেক, বাংলাদেশঃ

করোনা পরিস্থিতি সারাবিশ্বে মানুষের প্রকৃত রূপ দেখিয়েছে। বাংলাদেশে ফুটে ওঠে রক্তের সম্পর্কের প্রতিও নৃশংসতা। সন্তান বাবা-মাকে কিংবা বাবা-মা সন্তানকে রাস্তায়-জঙ্গলে-হাসপাতালের বারান্দায় ফেলে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

bangladesh police | newsfront.co
প্রতীকী চিত্র

চারপাশের এতো অমানবিকতার মাঝেও মানুষের জন্য কাজ করে গেছে পুলিশ। অর্জন করেছে ‘মানবিক পুলিশ’ খ্যাতি। দীর্ঘ দিন ধরে জনতার মনে ধারণ করা ‘দুর্নীতি-জুলুমবাজ’ পুলিশকে অসহায়ের পাশে দাঁড়ানোর দৃশ্য সবার মুখে হাসি ফুটিয়েছে। পাল্টে দিয়েছিলো পুলিশকে নিয়ে নেতিবাচক ধারণা। কিন্তু তা বেশি দিন স্থায়ী হলো না। পুলিশের ঘটানো দু’টি ঘটনা রীতিমত হতবাক করে দিয়েছে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে।

ঘটনা-১: জঙ্গি নাটক সাজানোর চেষ্টায় থানার ভেতরে বিস্ফোরণ

গত ২৯ জুলাই ভোরে রাজধানী ঢাকার পল্লবী থানার পরিদর্শকের কক্ষে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে থানার পরিদর্শক (অপারেশনস) এমরান, এসআই সজীব, পিএসআই অঙ্কুশ, পিএসআই রুমি ও সাধারণ নাগরিক রিয়াজ আহত হন।

তখন পুলিশ বলেছিলো, দুইটি আগ্নেয়াস্ত্র, চার রাউন্ড গুলি ও একটি ডিজিটাল ওয়েট মেশিনের মতো একটি ভারী বস্তুসহ তিনজন আসামিকে গ্রেফতার করেছে। ভোরে পরিদর্শকের কক্ষে ডিজিটাল ওয়েট মেশিনের মতো দেখতে ভারী বস্তুটি তল্লাশি করতে গেলে বিস্ফোরণ ঘটে।

আরও পড়ুনঃ রাজ্যের ৭৮টি কোভিড হাসপাতালের প্রত্যেকটিতে এবার তৈরি থাকবে ক্যুইক রেসপন্স টিম

তবে পরবর্তীতে গণমাধ্যমের সংবাদে এসেছে, তিন আসামিকে বোমাসহ গ্রেফতার দেখিয়ে জঙ্গি নাটক সাজাতে চেয়েছিলো সংশ্লিষ্ট পুলিশ। এর আড়ালে ছিলো চাঁদাবাজি করে উপার্জন করা কয়েক কোটি টাকা ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বের বিষয়। সবকিছুই জানতেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর জোনের কয়েকজন উর্ধতন কর্মকর্তা।

এদিকে, থানার ভেতরে বিস্ফোরণের ঘটনা পৃথকভাবে পুলিশ তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দেওয়ার পর পরই একযোগে মিরপুর জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) এবং একই বিভাগের পল্লবী জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি), সহকারী কমিশনার, পল্লবী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি), পরিদর্শক (তদন্ত) ও পরিদর্শককে (অপারেশনস) (এসি) গত ৭ আগস্ট বদলি করা হয়েছে।

ঘটনা-২: সাবেক মেজরকে গুলি করে হত্যা ও টেকনাফ থানার ওসির ক্রসফায়ার বাণিজ্য

গত ৩১ জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে মায়ানমার সীমান্ত এলাকা কক্সবাজারের টেকনাফে মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া চেকপোস্টে সেনা বাহিনীর প্রাক্তন মেজর সিনহা মোঃ রাশেদ খান পুলিশের গুলিতে নিহত হন। তখন পুলিশ দাবি করেছিলো- সাবেক মেজর রাশেদ তার ব্যক্তিগত গাড়িতে সঙ্গীসহ টেকনাফ থেকে কক্সবাজার যাচ্ছিলেন। চেকপোস্টে পুলিশ গাড়িটি থামিয়ে তল্লাশি করতে চাইলে তিনি বাধা দেন। তর্কে জড়িয়ে এক পর্যায়ে তার কাছে থাকা পিস্তল বের করলে পুলিশ আত্মরক্ষায় গুলি চালায়। তবে, পুলিশের দাবি ধীরে ধীরে মিথ্যা প্রমাণিত হতে থাকে বিভিন্ন অসামঞ্জস্যতার কারণে।

আরও পড়ুনঃ মূত্রনালীর সমস্যা, ৯ দিনের খুদে করোনা আক্রান্তের প্রাণ বাঁচাল কলকাতা মেডিক্যাল

৫ আগস্ট ভাইয়ের নিহত হওয়ার ঘটনায় কক্সবাজার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন রাশেদ খানের বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। মামলায় আসামি করা হয় সিনহাকে গুলি করা বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) লিয়াকত, টেকনাফ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশসহ নয় জনকে।

পরের দিন ৬ আগস্ট ওসিসহ ৭ জন আদালতে আত্মসমর্পন করলে ৭ দিন করে রিমান্ডে নেওয়া হয় তাদের। তারা গ্রেফতারের পর বেরিয়ে আসতে শুরু করে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। ওসি প্রদীপ কুমার আধিপত্য বিস্তার করে টেকনাফ এলাকায় জমিয়ে তোলেন ক্রসফায়ার বাণিজ্য।

মাদক ব্যবসায়ী আখ্যা দিয়ে সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে মেরে ফেলা তার নেশায় পরিণত হয় বলে প্রশাসন ও গণমাধ্যমের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।

স্থানীয় ভুক্তভোগী মানুষেরা সাংবাদিকদের প্রকাশ্যে বলেছেন, ওসি প্রদীপ ১০ লাখ থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন ক্রসফায়ারে মেরে না ফেলার চুক্তিতে। তবে টাকা নেয়ার পরও অসংখ্য মানুষকে মেরে ফেলেছেন তিনি। ২২ মাসে টেকনাফ থানায় ওসির নেতৃত্বে ১৪৫ জনকে ক্রসফায়ারের নামে মেরে ফেলা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে শোনা যাচ্ছে।

আরও পড়ুনঃ করোনা রোগীর চিকিৎসক, পরিবারকে ফের হেনস্থার অভিযোগ প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে

আর সাবেক মেজর রাশেদ খানকে গুলি করে মেরে ফেলার পেছনেও সরাসরি ওসির নির্দেশনা রয়েছে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মেজর রাশেদ ইউটিউব চ্যানেলের জন্য ভিডিও শুট করতে যান কক্সবাজার এলাকায়। সেখানে তিনি মায়ানমার সীমান্তে মাদক ও মানুষ পাচারসহ ঘটিত বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে ভিডিও করছিলেন। ওসি প্রদীপের বক্তব্য নিতে গেলে সকল অপকর্ম প্রকাশ পাওয়ার ভয় থেকেই ওসি মেজর সিনহাকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করেছিলেন।

বর্তমান পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে পুলিশে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। তবে পুলিশের দ্বারা এই বৃহৎ দুটি অপরাধ সংঘটিত হওয়ায় অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে এই বাহিনীটি।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here