লকডাউনে সংকটে পানশালার গায়িকা থেকে জলসাশিল্পীরা

0
32

শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ

তারা কেউই নামীদামী সেলিব্রিটি গায়িকা বা সুরকার নন। তবু রাত বাড়লেই শহরের একাংশে তাদের সঙ্গীতে আর সুরে রঙিন হয়ে উঠত বহু মানুষের জীবন। সুরেলা ছন্দে গান আর নাচে কর্মক্লান্ত শহরবাসীকে ফের চাঙ্গা করে তুলতেন এরাই। কিন্তু লকডাউনের বাজারে শহরের সমস্ত পানশালা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কার্যত কর্মহীন হয়েছেন এই শহরের কয়েক হাজার পানশালা গায়িকা।

Bar | newsfront.co
প্রতীকী চিত্র

এই গায়িকাদের সঙ্গে যোগ্য সঙ্গতে মাতিয়ে রাখেন বহু জলসাশিল্পীরা। সব হারিয়ে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন এরাও। এক মাসের কাছাকাছি কোনও রোজগার নেই। প্রতিদিনই ব্যয় সংকোচন করতে করতে একেবারে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে ওদের।

আরও পড়ুনঃ লকডাউনের মধ্যে বেলেঘাটায় মদ বিক্রি নিয়ে ধুন্ধুমার

পানশালার গায়িকাদের অনেকেরই বিভিন্ন রকমের রোজগার। উত্তর বা দক্ষিণ কলকাতায় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকেন ভিন রাজ্যের অনেক গায়িকাই। মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার অথবা ভাল হলে ৫০-৬০ হাজারও রোজগার হয়। গানে খুশি হয়েও অনেক গ্রাহক তো বেহিসেবি টাকাও ওড়ান। অনেকে আবার তাঁদের কিছু ব্যক্তিগত মুহূর্তের সঙ্গী হতে পাগল হয়ে যান।

কিন্তু এত টাকা রোজগার হলেও এই এক মাসের মধ্যেই এতটা খারাপ অবস্থা কেন? অনেকেই বলছেন, পরিবারের অনেকের খরচ চালাতে হয়। সংসারে ৬-৮ জনকে টানতে হয়। অনেকেই ১৮-২২ হাজার ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকেন। যেখানে কাজ করেন, সেখানেও বেশ ভাল পরিমাণ টাকা আয়ের অংশ দিতে হয়।

এছাড়াও পোশাক-আশাক, মেক-আপের খরচ রয়েছে। তাই সামনে বিপুল আয় চোখে পড়লেও সব বিলিয়ে হাতে যা পড়ে থাকে, তাতে সংসারের আয় ব্যয় সমান অনেকেরই। জমা কিছুই থাকে না। আর পরিস্থিতি যে দিকে গড়াচ্ছে, পানশালা না খুললে আর্থিক বিপদে পড়বেন অনেকেই। খুললেও আতঙ্কে লোকজন না এলেও আরও বিপদ।

একই অবস্থা পানশালা থেকে জলসার যন্ত্রশিল্পীদের। শহরের পানশালাগুলির পাশাপাশি অনুষ্ঠানের মরশুমে বিভিন্ন এলাকায় সঙ্গীতানুষ্ঠান হলে রোজগার একটু বাড়ে । বছরের হিসাবে মাসিক গড় আয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। বাদ্যযন্ত্র রক্ষণাবেক্ষণের খরচ ছাড়াও ফ্ল্যাটভাড়া, সংসার খরচ তো আছেই। তাই গিটারবাদক, সিন্থেসাইজার বাদক, কন্ঠশিল্পী সকলেই বিপদে।

করোনাভাইরাস আক্রমণের ফলে, লকডাউন ঘোষণার পর থেকেই জমায়েত কিংবা বিভিন্ন অনুষ্ঠান সবই বন্ধ। স্বাস্থ্যকর্মীদের ইঙ্গিত অনুযায়ী, এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত লেগে যাবে। কপালে ভাঁজ পড়েছে এই অনুষ্ঠান শিল্পীদের।

ঘরের টাকা প্রায় শেষ। এরা কোন ভাবেই কোনওদিনই বিপিএল তালিকা ভুক্ত নন। চিন্তা তাই একটাই, সংসার চলবে কিভাবে? উপার্জন শূন্য হয়ে গেলে, কোন দরজায় দাঁড়াবেন? সরকার তো নিজের দরজা থেকেই বেরোতে বারণ করে দিয়েছে। ঝকমকে জামা, মঞ্চে ঝিলমিল আলো, চারদিকে মানুষের হাত তালি। এসব এদের জীবনটা যেন রোমান্টিক করে রাখে। আর সেই মূর্ছনায় ঘুম ,স্বপ্ন,হালকা আবেগের তরঙ্গে সারাদিন কাটে।

আর এই করোনা আতঙ্কে পানশালা তো বন্ধই, একই সঙ্গে জেলার বিভিন্ন জায়গাতেও বন্ধ বুকিং। তাই ফের কবে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরবে জীবন, সেটাই ভেবে পাচ্ছেন না এই শিল্পীরা। ভালবাসার পেশা ছেড়ে হয়তো চট করে চলে যেতে পারবেন না। কিন্তু লকডাউনের অভিশাপে পেটের তাগিদে অন্য কিছু না শুরু করতে হয়!

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here