নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতাঃ
ভোট পরবর্তী হিংসার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের যে কমিটি রাজ্যে এসেছিল তা পক্ষপাতদুষ্ট, এই মর্মে অভিযোগ তুললো রাজ্য সরকার।
এনএইচআরসি-র কমিটি কলকাতা হাইকোর্টে রাজ্যের ব্যবস্থাপনা নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছিল। এবার যাবতীয় তথ্যসহ রাজ্য উত্তরে জানাল, ৭৯৯৩৮২ টাকা খরচ হয়েছে কমিটির সদস্যদের জন্য। শুধুমাত্র কমিটির সদস্যদের নয়, তাঁদের সঙ্গে থাকা ব্যক্তিবর্গেরও থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা সংক্রান্ত যাবতীয় খরচ মিটিয়েছে রাজ্য। এই বাবদ হোটেল, গেস্ট হাইজের বিল সবকিছু হাইকোর্টে জমা দেওয়া হয় সোমবার।
একই সঙ্গে ৭ সদস্যের এই কমিটির ভোট পরবর্তী ‘হিংসা’ রিপোর্ট একতরফা, অতিরঞ্জিত ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত- হলফনামার আকারে সে তথ্যও আদালতে জানিয়েছে রাজ্য। রাজ্যের দেওয়া উত্তরে যা যা বলা হয়েছে :
১) কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে রাজ্যে আইনের শাসন নেই। পাশাপাশি সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করেছে কমিটি। এর বিরুদ্ধে রাজ্যের যুক্তি, মানবাধিকার সুরক্ষা আইন(১৯৯৩)-এর ১৪(৫) নং ধারা লঙ্ঘন করেছে কমিটি। আইন অনুযায়ী, কমিটির উচিত যাবতীয় অনুসন্ধান তথ্য জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে দেওয়া। সে তথ্য যাচাইয়ের কমিশন সিবিআই কে দিয়ে বা অন্য কাউকে দিয়ে তদন্তের সুপারিশ করতে পারে। এক্ষেত্রে কমিটি তার এক্তিয়ার বহির্ভুত কাজ করেছে সরাসরি সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করে।
২) রাজ্যের অসংখ্য পুলিশ কর্মী এবং প্রশাসনিক সদস্যদের সম্মানহানি করতেই সম্ভবত এমন মনগড়া ও অতিরঞ্জিত রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে।
৩) রিপোর্টটি আপাতভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলেই মনে করছে রাজ্য।
এই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত শব্দ বন্ধের ব্যাখ্যায় কমিটির ৩ সদস্যের বিজেপি যোগ সম্পর্কিত কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য তুলে ধরা হয়েছে রাজ্যের তরফে। তাঁদের নাম ও বিজেপি যোগের প্রমাণ সহ রাজ্যের তরফে বলা হয়েছে এঁদের থেকে নিরপেক্ষ তদন্ত আশা করা যায়না।
প্রথম অভিযোগ রাজীব জৈনের বিরুদ্ধে : কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের আমলে ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেছেন। এমনকি নরেন্দ্র মোদি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন রাজীব জৈন ছিলেন আমেদাবাদের তৎকালীন ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো প্রধান। ৬ মাস তাঁর মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। ২০১৮ মেয়াদ শেষ হলেও অদ্ভুত ভাবে ২০১৯ লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত ওই পদে তিনিই থেকে যান।
দ্বিতীয় অভিযোগ করা হয়েছে আতিফ রশিদ- এর বিরুদ্ধে : রাজ্য জানিয়েছে রশিদের টুইটার অ্যাকাউন্টে নামেই যুক্ত রয়েছে বিজেপি। হলফনামায় রাজ্যের দাবি, এই আতিফ রশিদ বিজেপির টুইটার হ্যান্ডেলের দায়িত্ব সামলেছেন । এমনকি দিল্লির পুরভোটে বিজেপির প্রার্থীও হয়েছেন।
তৃতীয় জন হলেন, শ্রীমতী রাজুবেন এল দেশাই : ২০১৭ সালে গুজরাটে বিজেপির প্রকল্প ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ এর দায়িত্বে ছিলেন।
আরও পড়ুনঃ হোটেলেই থাকতে হচ্ছে আইপ্যাক টিমকে, গতিবিধি নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ ত্রিপুরা পুলিশের
এছাড়াও আরো ৫০ টি অভিযোগ নির্দিষ্ট করে কমিটির যুক্তি খারিজ করা হয়েছে রাজ্যের তরফে। রিপোর্ট কোন তথ্যের ভিত্তিতে দেওয়া হয়েছে তার উল্লেখ নেই রিপোর্টে। এছাড়াও রাজ্যের কাছে যেসব অভিযোগ বাংলায় লিখে করা হয়েছে সেই অভিযোগগুলি কমিটি দেখাচ্ছে ইংরেজিতে লেখা।
রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট ভাবে বলা হয়েছে যে, শুধুমাত্র বিজেপি কর্মীদের বাড়িতেই পরিদর্শনে গিয়েছেন কমিটির সদস্যরা। তাছাড়া আর অন্য কোনও রাজনৈতিক দলের কর্মীর বাড়ি পরিদর্শনে যায়নি কমিটি। এমনটাই জানিয়েছেন জনস্বার্থ মামলাকারী আইনজীবী অনিন্দ্য সুন্দর দাস। এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে বুধবার, ২৮ জুলাই।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584