নিজস্ব সংবাদদাতা,গঙ্গারামপুর :-
কথা দিয়েও কথা রাখেনি কেউ। বংশীহারী থানার শ্রীরামপুর গ্রামের সিদ্দিকা পারভিন ও তাঁর পরিবারের এখন নিদারুণ অর্থকষ্টে দিন কাটছে। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর সংসারের মেয়ের চিকিৎসার খরচ আর সম্ভব হয়ে উঠছে না সিদ্দিকার বাবা আফাজ়উদ্দিন আহমেদের পক্ষে।
এমনিতেই নিজের দৈহিক সমস্যায় জর্জরিত সিদ্দিকা। তারসঙ্গে যোগ হয়েছে পারিবারিক আর্থিক দুরবস্থা। দিনমজুর বাবার পক্ষে তার দু’বেলা খাওয়ার জোটানো দুষ্কর হয়ে উঠছে দিন দিন। এর পর রয়েছে চিকিৎসার খরচ। যতবার সংবাদ মাধ্যমে সিদ্দিকার দুরবস্থার কথা তুলে ধরা হয়েছে, ততবার রাজনৈতিক দলগুলি নিজেদের মত করে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। দেওয়ার কথা বলেছে। কিন্তু, তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। কিন্তু, দিন যত গেছে ততই বেড়েছে সমস্যা। পাশ থেকে সরে গেছে সাহায্যের হাত। একা হয়ে গেছে পরিবার। একা হয়েছেন তিনি।
সিদ্দিকা পারভিন। উচ্চতা ৮ ফুট। ওজন ১২০ কিলো। বয়স ২৭। রোজ ২ কিলোগ্রাম খাবার লাগে তাঁর। স্কুলে পড়াকালীন ১২ বছর বয়সে অসুস্থ হয়ে পড়েন সিদ্দিকা। হঠাৎই অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে উচ্চতা ও শরীর। পরিবারের লোকজন স্থানীয় চিকিৎসকদের কাছে তাঁর চিকিৎসা করিয়েছেন। কিন্তু অর্থাভাবে তা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। শরীর বাড়ার সঙ্গে বেড়েছে নানা সমস্যা। তার সঙ্গে বেড়েছে খাবার পরিমাণ। ফলে দিনমজুর বাবার পক্ষে মেয়ের মুখে যেখানে দু’বেলা খাবার তুলে দেওয়াটাই সমস্যার, সেখানে মেয়ের চিকিৎসা করানোটা অনেকটা দিবাস্বপ্ন দেখার মত।
২০১৩ সালে সংবাদমাধ্যমে প্রথম প্রচারিত হয় সিদ্দিকার খবর। তারপর রাজ্য সরকার সিদ্দিকাকে কলকাতায় নিয়ে গিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে SSKM হাসপাতালে। সেখানে তাঁকে টানা ষোলোদিন রাখা হয়। কিন্তু, অভিযোগ সেখানে তাঁর সেভাবে কোনও চিকিৎসা হয়নি। বরং তাঁকে দেখতে আসার হিড়িক পরে যায় হাসপাতালে। এরপর একরকম হতাশা নিয়ে সিদ্দিকাকে বাড়ি ফিরিয়ে আনে তাঁর পরিবার। ঠিক সেই সময়ই লোকসভা নির্বাচন দোরগোড়ায় ছিল। ফলে তাঁকে নিয়ে ফের শুরু হয় নির্বাচনী প্রচার। বালুরঘাট লোকসভা আসনে দাঁড়ান কংগ্রেসের হেভিওয়েট নেতা ওমপ্রকাশ মিশ্র। নির্বাচনের আগে জেলায় আসেন । তিনি সিদ্দিকাকে দিল্লির AIIMS হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ করে দেন। চিকিৎসকরা সিদ্দিকার পিটুইটারি গ্রন্থিতে থাকা টিউমার অপারেশন করে বের করেন। তাঁর খাওয়া খরচ বাবদ মাসে দশ হাজার টাকা করে মোট তিরিশ হাজার টাকা দেন ওমপ্রকাশবাবু। সেটাও বন্ধ হয়েছে অনেক দিন আগেই।
২০১৫ সালে ফের অসুস্থ হলে সিদ্দিকাকে নিয়ে যাওয়া হয় পিজিতে। তখন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চান তিনি। দেখা না হলেও সাহায্যের আশ্বাস পাওয়া গিয়েছিল। এখনও চিকিৎসার জন্য প্রতি মাসে তাঁকে যেতে হয় কলকাতায়। সেখানে বিনামূল্যে চিকিৎসা হয় তাঁর। কিন্তু তাতেও সমস্যার সমাধান হয় না। যাতায়াত সমস্যা বিশেষ করে ট্রেনের টিকিট কাটারও ক্ষমতা নেই পরিবারের।
এখন দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে সিদ্দিকার শরীর। পেটে খিদে, কিন্তু ঘরে খাবার নেই। নেই সাহায্যও। তাই কার্যত ঘোর অনিশ্চয়তা গ্রাস করেছে তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে। এখন শুধু অপেক্ষা কোন সহৃদয় ব্যাক্তি যদি এগিয়ে এসে সমস্যার সমাধান করে৷
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584