মোহনা বিশ্বাস, ওয়েব ডেস্কঃ
একটাই অভিযোগ ছিল। আর তার জেরেই একঘরে করে দেওয়া হয়েছিল বোলপুরের এক আদিবাসী পরিবারকে। এক সময় স্কুল ঘরের চাবি চুরির অভিযোগ উঠেছিল ওই আদিবাসী পরিবারের বিরুদ্ধে। সেই কারণে সামাজিক বয়কটের শিকার হয়েছিল শান্তিনিকেতনের বালিপাড়ার ওই আদিবাসী পরিবারের সদস্যরা। তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় স্কুলঘরের চাবি চুরি করার অভিযোগ তুলে বসে সালিশি সভা। অভিযোগ, সভায় মোড়ল সুনীল হাঁসদা সাত জনের ওই পরিবারকে এক ঘরে করার নিদান দেন।
শুধু তাই নয়, সালিসি সভার মাধ্যমে ওই পরিবারকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ঘটনাটি ঘটেছিল বেশ কয়েকমাস আগে। তারপর থেকে ওই পরিবারের কারোর সঙ্গে গ্রামের কেউ কথা বলে না৷ যাঁরা কথা বলবে, তাঁদেরও সামাজিকভাবে বয়কট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল সালিসি সভায়৷ শুধু কথা বলা বন্ধ নয়, ওই পরিবার গ্রামের নলকূপ, পুকুর ব্যবহার করতে পারেন না৷ গ্রামের দোকান থেকে জিনিসপত্র কিনতেও পারেন না ওই আদিবাসী পরিবার।
দিনের পর দিন এভাবে থাকতে থাকতে একসময় সহ্যের সীমা বাঁধ ভাঙে। যার কারণে এবার জেলার পুলিশ সুপারের কাছে সুরাহা চেয়ে লিখিত আবেদন জানিয়েছিল ওই পরিবার। আর অভিযোগ পেয়েই বীরভূমের পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেন। রবিবার তাঁর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে নিউজফ্রন্ট। তখনই জানা যায়, আদিবাসী পরিবারের ওই অভিযোগ পাওয়ার আগেই বিষয়টা তাঁর নজরে এসেছিল। তবে কিছুদিন আগে তাঁর কাছে একটি চিঠি আসে ওই পরিবারের তরফ থেকে।
আরও পড়ুনঃ বাড়ির আট সদস্যকে নিয়ে অসহায় বহরমপুরের রিক্সা চালক, সাহায্যের আবেদন
এরপরই শান্তিকেতনের ওই গ্রামে যান বীরভূমের ‘দাবাং’ এসপি নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী। তারপর নিজেদের মধ্যে ঝামেলা মিটিয়ে নিতে বলেন তিনি। তারপর ওই একঘরে হয়ে যাওয়া আদিবাসী পরিবার এবং ওই গ্রামের মোড়ল নিজেদের মধ্যে ঝামেলা মিটিয়ে নেন বলে জানা গেছে। আপাতত স্বস্তি পেয়েছে ওই আদিবাসী পরিবার।
আরও পড়ুনঃ আবারও ভাঙ্গন বিজেপিতে! পদ ছাড়লেন বনগাঁর সংখ্যালঘু মোর্চার সভাপতি
দৈনন্দিন জীবনে একাধিক সমস্যার মুখে পড়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল পরিবারটি। প্রশাসনিক স্তরে অভিযোগ জানিয়েও বয়কটের ‘শাপমুক্তি’ হয়নি বলে অভিযোগ। জেলাশাসক, জেলা পুলিশ সুপারকে লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করছিলেন। কিন্তু কোনও সুরাহা মেলেনি। অবশেষে পরিবারের সদস্যা কালীদাসী চোড়ে নিজে চিঠি লিখে নতুন এসপি নগেন্দ্র নাথ ত্রিপাঠীর কাছে সুরাহা চেয়েছিলেন। আর তাতেই কাজ হল। বীরভূমের এসপি নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী গ্রামের মোড়লের সঙ্গে কথা বলে বোলপুরের ওই আদিবাসী পরিবারকে এই কঠিন শাস্তি থেকে মুক্ত করেন।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584