শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
বিধানসভা নির্বাচনের এখনও দিনক্ষণ ঘোষণা করেনি রাজ্য নির্বাচন কমিশন। তার মধ্যেই রাজ্যে খুন হয়ে চলেছেন একের পর এক বিজেপি নেতা। এর প্রতিবাদেই বিজেপি যুব মোর্চার পূর্বঘোষিত ‘নবান্ন ঘেরাও অভিযান’ ছিল এদিন বৃহস্পতিবার কলকাতা ও হাওড়ায়।
দুপুর বারোটা নাগাদ রাজ্য বিজেপি সদর দফতরের সামনে থেকে দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বে একটি মিছিল হাওড়া ব্রিজের দিকে যায়। দুপুর আড়াইটে নাগাদ হাওড়া ব্রিজে ওঠার মুখেই মিছিলটিকে আটকায় কলকাতা পুলিশ। শুরু হয় বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের তর্কাতর্কি। সেই সময় বিনা প্ররোচনায় পুলিশ বিজেপি কর্মীদের উপর লাঠিচার্জ করেছে বলে অভিযোগ করেন দিলীপ ঘোষ। হাওড়া ব্রিজের সামনেই পুলিশের লাঠির আঘাতে গুরুতর আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন বিজেপি কর্মী।
বিজেপি কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায়। কিন্তুু অন্যান্য বিজেপি কর্মীরা তার পরেও পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে হাওড়া ব্রিজের উপর দিয়ে নবান্নের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে। সেই সময় বিজেপি কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ব্যবহার করে কলকাতা পুলিশ। তারপরেও দুপুর দুটো পর্যন্ত হাওড়া ব্রিজকে শান্ত করা যায়নি। বিক্ষিপ্তভাবে বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের খণ্ডযুদ্ধ লেগেই ছিল।
দুপুর দুটো নাগাদ ফের বড়বাজার থেকে একটি মিছিল শুরু হয়। প্রথমেই লাঠিচার্জ করে সেই মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করা হয়। অন্যদিকে, নবান্ন ঘেরাও অভিযানের কর্মসূচির শুরুতে খন্ড যুদ্ধ বেধে যায় হেস্টিংসেও। কলকাতা পুলিশ বিজেপির মিছিল আটকালে রাস্তায় বসে পড়েন লকেট চট্টোপাধ্যায়, ভারতী ঘোষ প্রমুখ । ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিং দাবি করেন প্রথমে পুলিশ বিজেপি কর্মীদের দিকে ইট,পাটকেল ছুড়েছে। তারপর বিজেপি কর্মীরা পাল্টা প্রতিরোধের রাস্তায় হেঁটেছেন।
তিনি আরও জানান দলের কেন্দ্রীয় নেতা অরবিন্দ মেননকে ফেলে মারা হয়েছে। আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্জুন সিং। দলের নেত্রী শর্বরী মুখার্জির গায়ে হাত তোলা হয়েছে। পুলিশ তার গায়ের কাপড় ছিঁড়েছে। পাশাপাশি জলকামানে রাসায়নিক ও রঙ মিশ্রিত জল ছোঁড়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। আর তাতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বিজেপি–র একাধিক নেতাকর্মী। তাঁদের মধ্যে অনেকেই ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে।এদিন মিছিল থেকে দ্রুত নিয়ে গিয়ে বাইপাসের ধারে এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বিজেপি নেতা রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়কে। অভিযোগ, জলে মেশানো রাসায়নিক মুখে গিয়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ঘটনাস্থলে রক্তবমিও শুরু হয় তাঁর। বেসরকারি ওই হাসপাতালে ইতিমধ্যে তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুনঃ লাদাখ তিক্ততা! এ বছর দুর্গাপুজোয় উদ্বোধনে বাদ চিনা দূতাবাসের আধিকারিকরা
গোটা কলকাতায় রণক্ষেত্রের জন্য সরাসরি কলকাতা পুলিশকে দায়ী করেছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়। তিনি জানান, বিজেপি শান্তিপূর্ণভাবেই আন্দোলন করার কথা জানিয়েছিল। শান্তিপূর্ণভাবেই সকাল থেকে তা হচ্ছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে পুলিশই প্রথম কলকাতা শহরে খণ্ডযুদ্ধ বাধায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকে হিংসায় পরিণত করার চেষ্টা করছেন। শুধু পুলিশ নয়, তাদের পাশাপাশি তৃণমূলের গুন্ডারা আমাদের লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়েছে। এভাবে ভবিষ্যৎকে দমিয়ে রাখা যাবে না।
আরও পড়ুনঃ ১০৫ দিন ধরে কোভিড পজিটিভ বৃদ্ধার বিল ৩১ লক্ষ!
ঝাড়গ্রাম থেকে ফিরেই রাজ্য পুলিশের ডিজি-র সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঝাড়গ্রাম সফর শেষে হাওড়ার ডুমুরজলায় একলব্য স্কুলমাঠের অস্থায়ী হেলিপ্যাডে নামার পরই সোজা নবান্নে চলে আসেন মুখ্যমন্ত্রী।
আরও পড়ুনঃ দুর্ঘটনা এড়াতে এবার গার্ডেনরিচ ফ্লাইওভারে ফেন্সিং কেএমডিএ-র
তবে স্যানিটাইজেশনের কাজ চলার জন্য এদিন নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরও ছিল ফাঁকা। পরে নবান্ন থেকে বেরিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভবানী ভবনে যান। সেখানে গিয়ে বৈঠক করেন রাজ্য পুলিশের ডিজির সঙ্গে। বিজেপির নবান্ন অভিযান সংক্রান্ত বিষয় কে কেন্দ্র করে শহরের আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক আলোচনা হয়েছে বলে নবান্ন সূত্রে জানা যায় ।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584