নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতাঃ
দলীয় বিস্তারক পদে থাকা প্রায় ৫০০ জন যুবকের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে। রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের পাঁচ মাস আগে থেকে শুরু হয় বিধানসভা ভিত্তিক বিজেপির বিস্তারক নিয়োগের প্রক্রিয়া। রাজ্যজুড়ে বিজেপির সংগঠন মজবুত করার উদ্দেশ্যে বহু কমবয়সি অবিবাহিত যুবকদের কাজে লাগানোর পরিকল্পনা নেয় গেরুয়া শিবির। সেই পদেরই নাম বিস্তারক।
এই বিস্তারকদের কাজ ছিল, এলাকায় কেন্দ্রীয় সরকারের সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরা, বিজেপির বুথ স্তরে কমিটি তৈরি করা এবং সংগঠন মজবুত বানানো। ২৯৪টি বিধানসভা আসনের জন্য বিস্তারক বাছাই করে তাদের উপর একটি করে বিধানসভার ভার দেওয়া হয়েছিল দলের পক্ষ থেকে। এদের প্রত্যেকেরই দায়িত্ব ছিল নিজেদের জেলার বাইরে কোনও কেন্দ্রের জন্য দলের হয়ে এই কাজগুলি করা। প্রতি মাসে তাদের থাকা-খাওয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ‘সাম্মানিক বেতন’ হিসাবে বরাদ্দ করেছিল বিজেপি। টাকার অংক নেহাত কম নয়, ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বেতন তাঁদের দেওয়া হতো।
আরও পড়ুনঃ স্বার্থপূরণ না হওয়ায় তৃণমূলে ফিরতে চান সোনালী, কটাক্ষ দিলীপ ঘোষের
বুথ স্তর থেকে জেলা স্তর পর্যন্ত এঁরাই দলের চোখ ও কান হিসেবে কাজ করেছেন। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনেও বিজেপির ভালো ফলে বড় ভূমিকা রয়েছে এই বিস্তারকদের। সেই বিস্তারকদের থেকেই এখন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে দল। জানা গিয়েছে বিধানসভা ভোটে বিজেপির শোচনীয় পরাজয়ের পরে বিস্তারকদের উপর বিক্ষিপ্তভাবে হামলা-অত্যাচার হয়েছে কিন্তু পাশে দাঁড়াতে দেখা যায়নি দলীয় নেতাদের। শুধু তাই নয়, ‘বেতন’ বাবদ প্রাপ্য টাকা পর্যন্ত পাচ্ছেন না তাঁরা।
দলীয় সূত্রে খবর, এই মুহূর্তে বিধানসভার বিস্তারক এবং জোন ভিত্তিক বিস্তারক মিলিয়ে বকেয়া বাবদ প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা আটকে রেখেছে পার্টি। প্রায় ৫০০ জন যুবকের ভবিষ্যৎ এখন গভীর অন্ধকারে।এই বিস্তারকদের অভিযোগ, প্রতিটি বিধানসভার দায়িত্ব নিয়ে বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসেন তিন থেকে চারজন কেন্দ্রীয় নেতা। তাঁরা এই বিস্তারকদের কার্যত ‘চাকর’ মনে করতেন। দলীয় বৈঠকে বিস্তারকদের প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছিল নেতাদের জন্য চা আনা , খাবার আনা ইত্যাদি।
আরও পড়ুনঃ দলবদলু তৃণমূল নেতাদের জন্য “বেসুরো” স্বীকারোক্তি ফর্ম বানালো দেবাংশু ভট্টাচার্য
বিস্তারকদের দাবি মূলত এই কারণেই তাঁরা ভোটে দলের হয়ে তেমন কাজই করতে পারেননি।ভোটের পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে উঠেছে। বজবজ বিধানসভার বিস্তারক সুব্রত সর্দার বলেছেন, ভোটের পর থেকেই নাকি তিনি ও তাঁর পরিবার আক্রান্ত হয়েছেন, অথচ পার্টির নেতারা পাশে থাকা তো দূরের কথা কোন খোঁজখবরই রাখেননা।
একই অভিযোগ কুলতলি বিধানসভার বিস্তারক শচীন ঘোষের। তাঁর বক্তব্য, তিনিও দরিদ্র পরিবার থেকেই এসেছিলেন বিজেপির হয়ে কাজ করতে। কিন্তু প্রাপ্য বেতন পর্যন্ত আটকে রেখেছে পার্টি। কোনও নেতাই ফোন ধরছেন না আর। একই অভিযোগ উত্তরবঙ্গ জোনের বিস্তারক অরিন্দম আদকের, দলের দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে অশান্তির জেরে তাঁকে খড়দহ বিধানসভার বিস্তারক পদে নামিয়ে আনা হয়েছিল। ভবিষ্যতে কী করবেন, তা নিয়ে এখন প্রবল দুশ্চিন্তায় তিনি।
আরও পড়ুনঃ প্রধানমন্ত্রীর চোখের জল আর কুম্ভিরাশ্রু এক! নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার নামে ভাইরাল ভুয়ো ছবি
রাজ্য বিজেপির বিস্তারক যোজনার দায়িত্বে ছিলেন দীপাঞ্জন গুহ । তিনি অবশ্য জানিয়েছেন, চন্দননগর বিধানসভার প্রার্থী হয়েছিলেন বলে বিস্তারক যোজনার কাজে সময় দিতে পারেননি। দল সেই ভার দিয়েছিল উত্তরপ্রদেশের নেতা দীনেশ সিংকে। ভোটে শোচনীয় ভরাডুবির পর থেকে তিনি বেপাত্তা। কাজ হারিয়ে এখন প্রবল অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন রাজ্যের ৫০০ যুবক।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584