কৃষ্ণগহ্বরের ওপারে

0
280

ডঃ কুণাল সরকার

আমি তখন একাদশ শ্রেণির ছাত্র। কৃষ্ণনাথ কলেজ স্কুলের শিক্ষক জয়ন্ত ভট্টাচার্য আমাদের পদার্থ বিজ্ঞানের ক্লাস নেন। উনি একটা কথা বলেছিলেন মহাপুরুষদের মধ্যে ও First Division, Second Division হয় ।শুনে যারপরনাই অবাক হয়েছিলাম। উনি ওনার কথার সমর্থনে বলেছিলেন যেমন আইনস্টাইন, রবীন্দ্রনাথ এরা First Division প্রাপ্ত মহাপুরুষ।আজ স্টিফেন হকিং চলে যাওয়ার পরে তাঁর ঐ কথাটি মনে পড়ছে। পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়টি বেশ জটিল, যাইহোক অন্তত আম জনতার বিষয় নয়। আজীবন দেখে এসেছি নিজের পরিচিত সবথেকে বুদ্ধিমান ছেলেটিই পদার্থ বিজ্ঞান নিয়ে কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। এখন আমার বিদ্যালয়ের যে পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক সে উপস্থিত বুদ্ধিতে অন্তত আমাকে দশ গোলে হারাবে। তার উপর আবার তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান। আমার মতন সাধারণ লোকের মাথার উপর দিয়ে এরোপ্লেন যাবার সমান। কিন্তু সেইদিন জয়ন্ত বাবুর কাছেই প্রথম শুনেছিলাম পদার্থ বিজ্ঞানে একজন প্রথম ডিভিশন প্রাপ্ত মহাপুরুষ রয়েছেন তাঁর নাম স্টিফেন হকিং।আর আজ উনি চলে যাবার পর যথার্থই বুঝছি কেনো উনি প্রথম বিভাগ প্রাপ্ত মহাপুরুষ। একজন তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী হয়েও Social media-য় তিনিই troll, তিনিই trend. কৃষ্ণ গহ্বর অবিনশ্বর না অবিনশ্বর নয়, কৃষ্ণ গহ্বর কি সত্যিই কুচকুচে কালো সেখান থেকে কিছুই বিকীর্ণ হওয়া সম্ভব নয়, আর যাই হোক আমজনতার আলোচনার বিষয় নয়। বিষয় অন্য, একজন তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী, বিজ্ঞানকে চেয়েছিলেন সহজ সরল করে আম জনতার কাছে নিয়ে যেতে, তাই তিনি আমার আপনার। মোটর নিউরনের সাংঘাতিক কামড়ে তাঁর সমস্ত পেশিই অসাড়, এমনকি শ্বাস নেওয়ার জন্য যে পেশির দরকার তাও অচল। শুধুমাত্র মস্তিষ্কটাই সচল। আর তাতেই তিনি করে চলেছেন একের পর এক গবেষণা, স্বয়ংক্রিয় হুইল চেয়ারে বসে বাক শক্তি হীণ, চলৎ শক্তি হীণ একজন ব্যক্তি তাত্ত্বিক পদার্থ বিজ্ঞানের মৌলিক কাঠামো গুলিকে অবলীলাক্রমে ভাঙছেন আবার গড়ছেন। বলছেন ভিন গ্রহে মানুষের থেকে উন্নত প্রানীর কথা।হকিং যদি আরো কিছুদিন বেঁচে থাকতেন তাহলে হয়ত টাইম মেশিনে করে ছোট বেলায় পৌছে যেতে পারতাম।কেননা উনিও তো ভাবিয়েছিলেন ঐ সর্বগ্রাসী কৃষ্ণ গহ্বর টিকে ধ্বংস করা সম্ভব বা অতিক্রম করা সম্ভব।স্বর্গ বলে কিছু নেই, জীবন একটাই, মৃত্যুর পরে জীবন বলে কিছু হয় না তাই জীবন যতই দুঃসহ হোক তা উপভোগ করতে হবে হকিং তা নিজের জীবন দিয়ে বুঝিয়ে ছিলেন। পদার্থ বিজ্ঞান মানেই Equation আর Equation। ছাত্র অবস্থায় ভাবতাম Equation গুলো বাদ গেলে ভালোই হত। যাক হকিং ভেবেছিলেন। তার লেখা বই A brief history of time – এ একটাই equation E= mc2. বাকি সব বাদ। 40 টি ভাষায় অনুবাদিত এই বইটি টানা 237 সপ্তাহ ছিল বেস্ট সেলার। না এখনো শেষ নয়। এই লোকটাই বলেছিলেন মেশিনের দ্বারা যে জিনিস উৎপাদিত হচ্ছ তা সবার মধ্যে সমান ভাগ করে দিলে পৃথিবীতে কোনো সমস্যাই থাকবে না। সত্যিই, গ্যালিলিওর মৃত্যু দিনে জন্ম আর আইনস্টাইনের জন্ম দিনে মৃত্যু, এই না হলে হকিং টাইম।

মতামত লেখকের নিজস্ব

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here