নিজস্ব সংবাদদাতা,পূর্ব মেদিনীপুরঃ
সোশ্যাল মিডিয়া মানেই আর পাঁচটা মানুষের কোথাও যেন একটা কুপ্রভাবের কথা মনে হয়।কিন্তু কুপ্রভাবকে দূরে সরিয়ে এবার সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সাড়া দিয়ে রোগীর প্রাণ বাঁচালেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার এক তরুণ শিক্ষক।
অন্যান্য দিনের মতো গত শনিবার বিকেলেও মোবাইল ঘাঁটছিলেন কাঁথির কুলাইপদিমা নিম্ন বুনিয়াদী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শ্যামল জানা। মোবাইল ঘাটতে ঘাটতে হঠাৎ বিশ্বজিৎ আচার্য্য নামে এক ব্যাক্তির একটি ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে O+(ও পজিটিভ) রক্ত চেয়ে পোষ্ট দেখেন শিক্ষক শ্যামলবাবু।ওই পোষ্টে চাওয়া রক্তের গ্রুপ এবং শ্যামলবাবুর রক্তের গ্রুপ একই হওয়ায় শ্যামলবাবুর মন নিজেকে সামলে রাখতে পারেনি।
তিনি তৎক্ষণাৎ ওই পোষ্টে দেওয়া ফোন নাম্বারে ফোন করেন এবং স্ব-ইচ্ছায় রক্ত দানের কথা প্রকাশ করেন। বিশ্বজিৎবাবুর ফেসবুক পোষ্টের জেরে শ্যামলবাবুর স্বইচ্ছায় রক্তদানের ফোন পেয়ে বুকে একরাশ আশা জন্মায় বিশ্বজিৎবাবুর। এরপর তখনই শ্যামলবাবুর মহামূল্য রক্ত নেওয়ার জন্য কাঁথি ব্লাড ব্যাংকে শ্যামলবাবুকে ডাকেন বিশ্বজিৎবাবু।এরপর সেখান থেকেই শ্যামলবাবু রক্তদান করে প্রাণ বাঁচান এক রুগীর।
আরও পড়ুনঃ সোশ্যাল মিডিয়ার সূত্র ধরে মিলল রক্তদাতার খোঁজ
পেশায় শিক্ষক বিশ্বজিৎ আচার্যের এক নিকটাত্মীয় বেশকয়েকদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন।এরপর বৃহস্পতিবার হঠাৎ তার রক্তের সংকট দেখা দেয়। স্থানীয় কাঁথি ব্লাড ব্যাংকে গিয়েও তেমনভাবে রক্তের জোগান মেলেনি। এরপর চোখে মুখে একরাশ হতাশা গ্রাস করে ওই রোগীর পরিবার ও আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে। এরমধ্যে হঠাৎ রোগীর এক আত্মীয় বিশ্বজিৎ আচার্যের মাথায় আসে রক্ত চেয়ে ফেসবুকে পোস্টের কথা।
এরপর সেইমতো ফেসবুকে পোস্টও করেন বিশ্বজিৎবাবু। তবে পোস্ট করলেও এই পোষ্টের ডাকে আহ্বান দিয়ে যে সত্যিই রক্ত মিলবে তা ভাবতেও পারেননি বিশ্বজিৎবাবু।এরপর যখন ওই পোস্ট দেখে শ্যামলবাবুর স্বইচ্ছায় রক্ত দানের কথা কানে আসে তখন মনে একরাশ আশার আলো দেখেন বিশ্বজিৎবাবু। এরপরই শ্যামলবাবুর দান করা রক্ত পৌঁছে যায় বিশ্বজিৎবাবুর ওই আত্মীয়ের কাছে।রক্তদান করার পর শ্যামলবাবু জানান,”একজন রুগীর প্রাণ বাঁচানোর জন্য সবসময়ই প্রয়োজন স্বইচ্ছায় রক্তদানের আগ্রহ।
হিন্দু, মুসলমান, খ্রিষ্টান কিংবা জৈন সবসময়ই জাতী ধর্ম ভেদাভেদ ভুলে রক্তদান করা উচিত মানুষের।ভবিষ্যতে আরও যদি আমার রক্তদান করার সুযোগ মেলে তাহলে নিশ্চই আমি রক্তদান করতে এগিয়ে যাবো।”তবে এর দ্বারা প্রমাণিত হল যে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যে শুধুই মানুষের মধ্যে কুপ্রভাব পড়ে তা নয়, সোশ্যাল মিডিয়ার দ্বারা একদিকে যেমন কুপ্রভাব পড়ছে তেমনি অন্যদিকে সুপ্রভাবও পড়েছে।
ফেসবুকে পোষ্টের পর রক্ত পেয়ে আনন্দে আত্মহারা বিশ্বজিৎবাবু জানান,”সমাজের আর পাঁচটা মানুষের স্যোশাল মিডিয়া: নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা থাকলেও আমার স্যোশাল মিডিয়ার ওপর সবসময় ভরসা ছিল।যার এক প্রমাণ মিললো রক্তদানের এই সাড়া পেয়ে।”জেলার এক প্রবীণ শিক্ষক অশোক কুমার লাটুয়া জানান,”
সমস্ত স্যোশাল মিডিয়া যে সামাজিক দায়িত্ব ও যোগাযোগ এগিয়ে যায় সেকথা বলতে পারিনা।সমাজের একশ্রেণির মানুষ এই স্যোশাল মিডিয়াকে খারাপ কাজে ব্যাবহার করলেও অন্য আরেক শ্রেণির মানুষ স্যোশাল মিডিয়াকে ভালো কাজেই লাগাচ্ছে।” সবমিলিয়ে স্যোশাল মিডিয়া নিয়ে হাজার কুপ্রভাবের বার্তার মাঝেও এযেন এক অন্য সুবার্তা।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584