নিজস্ব সংবাদদাতা, পশ্চিম মেদিনীপুরঃ

২৮শে সেপ্টেম্বর শনিবার মহালয়ার পূণ্য তিথিতে তমলুকের অন্যতম নাট্যগোষ্ঠী “রঙ্গন “এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত হল একটি নাট্যসন্ধ্যা ।অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে ছিল তমলুক তথা বাংলার বিশিষ্ট নাট্যকার রক্তকমল দাশগুপ্তের লেখা নাটক সংকলন ‘নির্বাচিত নাটক’ বইটির প্রকাশ অনুষ্ঠান।দ্বিতীয় পর্বে ছিল রঙ্গনের নতুন নাটক – ‘উজানিয়া’ প্রদর্শন।

‘নির্বাচিত নাটক’ বইটির প্রকাশক – দাশগুপ্ত পরিবার ও পরিবেশক – গ্রুপ থিয়েটার পত্রিকা । বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তাম্রলিপ্ত পৌরসভার পৌরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ সেন, উপ-পৌরপ্রধান দীপেন্দ্রনারায়ন রায়, লেখক ও লোক সংস্কৃতি গবেষক কমল কর, অধ্যাপক আশুতোষ দাস সহ তমলুকের বিশিষ্ট নাট্যকার । বইটিতে রয়েছে রক্তকমল দাশগুপ্তের লেখা ৫টি একাঙ্ক – ‘উলগুলান’, ‘জলবন্দি’, ‘মহড়া চলছে’, ‘চেতনায় ফেরা’, ‘ভূতেদেরও লজ্জা হলো’ । ৬টি শ্রুতি নাটক – ‘সূর্য্যস্নান’, ‘আমি অমল হতে চাই’, ‘এই তো সময়’, ‘হাওড়া ব্রিজের মাথায় মানুষ’, ‘আলো’, ‘লাফিং ক্লাবে ওরা চারজন’ এছাড়াও রয়েছে ২টি ছোটদের নাটক – ‘তাতানের দিনরাত্রি’, ‘সোনার হরিণ ‘।

রক্তকমলবাবু আজীবন নাটকের মানুষ ছিলেন ।মফঃস্বল শহরের নাট্যচর্চা করতে গিয়ে তিনি মৌলিক নাটকের বারবার অভাব বোধ করতেন ।এইসময় তিনি নিজেই কলম ধরেছেন , এগিয়ে আসেন নাটক করার পাশাপাশি নাটক লেখার কাজে। ৬০এর দশকের শেষ ভাগে লিখলেন প্রথম নাটক ‘সূর্য্যহারা অরন্য থেকে ‘।এরপর ৭৯সালে মহাশ্বেতা দেবীর ‘অরণ্যের অধিকার’ অবলম্বনে নাটক ‘উলগুলান’ তাকে নাট্যকার হিসেবে প্রায় সারা বাংলায় পরিচিতি দেয় ।এরপর একে একে রচনা করেন ‘জলবন্দী’, ‘মহড়া চলছে’ ,হারানো মানুষ ইত্যাদি। তার বিভিন্ন নাটকে উঠে আসে সাধারণ মানুষের কথা, অসহায় মানুষের উত্তরণ, আদিবাসী প্রান্তিক মানুষদের জীবন সংগ্রাম।অপসংস্কৃতি তাকে উদ্বেলিত করতো তাই তার নাটকের উপজীব্য হয়েছে মানব মনের জটিল মনস্তত্ত্ব ।শেষ জীবনে তিনি ছোটদের জন্য কিছু শিশু নাটক রচনা করেন।

তমলুকের নাট্যজগতের একটি উজ্জ্বল নাম রক্তকমল দাশগুপ্ত ।তমলুকের পদুমবসানে ছিল বাসভূমি ।বাবা ছিলেন শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্ত । অর্থনী goodতিতে স্নাতক হলেও ছোট বেলা থেকেই নাটকের প্রতি ছিল গভীর প্রেম । প্রথম জীবনে বেশ কয়েক বছর তমলুক হ্যামিল্টন হাইস্কুলের শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত থেকে ছাত্রদের প্রিয় শিক্ষক হিসেবে পরিচিত ছিলেন । এরপর শিক্ষকতার পেশা ছেড়ে তিনি স্টেট ব্যাঙ্কের চাকুরী নেন ।কৈশোর থেকে নাটক অভিনয়ের সাথে সাথে নাট্য পরিচালক হিসেবে যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়ে থাকেন । শুধু তাই নয় বিভিন্ন নাট্যদলে তার যোগদান ওই সংস্থার ও শিল্পীদের বিস্ময়কর বিকাশের পথ করে দেয় ।তাঁদের বহু একাঙ্ক নাটক ও পূর্নাঙ্গ নাটক জেলায় ও জেলার বাইরে অভিন্দিত ও সংবর্ধিত হয় ।অল্প দিনের মধ্যেই নাট্যকার হিসেবে জেলা ছাড়িয়ে রাজ্যে তাঁর খ্যাতি বিস্তার লাভ করে ।তাঁর লেখা পূর্ণাঙ্গ চারটি, একাঙ্ক ষোলটি ,ছাব্বিশটি শ্রুতি নাটক ও পাঁচটি শিশু নাটক।
আরও পড়ুনঃ নিত্যযাত্রীদের সুবিধার্থে খড়্গপুরের চার রুটে ডিল্যাক্স বাস উদ্বোধন
তমলুক শহরের আবাসবাড়ীতে ৬০এর দশকে গড়ে ওঠা ‘গুডলাক ড্রামাটিক ক্লাব’ এর মূল সংগঠক ছিলেন শ্রী রক্তকমলবাবু । ২০০৮সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শ্রেষ্ঠ নাট্যকারের সম্মান লাভ করেন । ২০১৫ সালে কুমার রায় স্মারক সম্মানে ভূষিত হন । সুগার হাই ও কিডনির সমস্যায় দীর্ঘদিন ভোগার পর ৭১ বছর বয়সে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584