করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় তাসের ঘরের মত ধ্বস্ত ‘ব্র্যান্ড মোদি’

0
92

ওয়েব ডেস্ক, নিউজ ফ্রন্টঃ

নোটবন্দী থেকে শুরু করে জিএসটি, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক থেকে শাহীনবাগ ভালোই চলছিল মোদি ‘ব্র্যান্ড’ , ছাপ্পান্ন ইঞ্চি একটুও টাল খায়নি এত কিছুতে। এমনকি করোনার প্রথম দফার লকডাউনের পরে অর্থনীতির ‘ডাউনফল’ও আত্মনির্ভর ভারতের ভাষণে সামলে দিতে পেরেছিলেন বিজেপির ব্র্যান্ড মোদি কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এর সামনে আর ঢাল হয়ে দাঁড়াতে পারলো না ছাপ্পান্ন ইঞ্চি দেশসেবকের ইমেজ-এমনটাই গেরুয়া শিবিরের ভেতরকার ফিসফাস।

pm modi | newsfront.co
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। চিত্র সৌজন্যেঃ এএনআই

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এর আগের প্রতিটি বিতর্কিত ক্ষেত্রেই কোনও না কোনও সুবিধাজনক রাজনৈতিক ‘ন্যারেটিভ’ সফলভাবে তৈরি করতে পেরেছেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব এবং তা সুন্দর ভাবে মানুষকে ‘খাইয়ে’ দিতে চূড়ান্ত সফল হয়েছে নরেন্দ্র মোদি ‘ব্র্যান্ড’ ইমেজ। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে চরম স্বাস্থ্য সংকট , গণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ভেঙে পড়া পরিকাঠামো একই সঙ্গে এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সরকারের চূড়ান্ত ঔদাসিন্য -এই ধাক্কা সামলাতে মোদি ব্র্যান্ড কোনো কাজেই এলো না।

চোখের সামনে মানুষ দেখছেন সামান্য অক্সিজেনটুকু দিতে অক্ষম এই ঢক্কানিনাদ সর্বস্ব সরকার। এই মৃত্যুমিছিল ঢাকা দেওয়ার মতো কোনো পাঁচিল, কোন পর্দা, কোনও যুক্তি এখন আর হাতে নেই বিজেপির।এত দিন হাজার সমস্যার মধ্যেও দেশের সাধারণ মধ্যবিত্ত নাগরিকদের একটা বড় অংশ বিশ্বাস করেছেন, ‘মোদিজি করছেন যখন ভালোর জন্যই করছেন’ বা ‘মোদি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়’।

আরও পড়ুনঃ ইদ উদযাপন নিয়ে সতর্কবার্তা মীরের, আবেদন প্রধানমন্ত্রীকে

এই ন্যারেটিভ ও যে গেরুয়া শিবিরের ‘থিংক ট্যাংক’দের নিরলস ‘ব্রেন স্টর্মিং’এর ফসল এটা না বুঝেই মানুষ ‘ব্র্যান্ড’ মোদীর পাশে থেকেছেন। কিন্তু অতিমারীর দ্বিতীয় ঢেউ মানুষের সেই বিশ্বাসে ভালো রকম ঘা দিয়ে গেল অর্থাৎ চিড় ধরলো ‘ব্র্যান্ড মোদি’ ইমেজে এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।বিরোধী দলগুলির মতে, অতিমারির এই ভয়াবহতার জন্য মূলত অ-বিজেপি রাজ্য সরকার গুলির ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে আর নিজেদের ইমেজ রক্ষা করতে পারছে না মোদি সরকার।

যদিও বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডা এখনো সে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তবে তা তেমন কাজে আসছে না। দেশ জুড়ে এই ভয়াবহ মৃত্যুমিছিল শুরু হওয়ার ঠিক আগেও মোদী বক্তৃতা দিয়ে কোভিড-জয়ের কথা শুনিয়েছেন, সাফল্যের কৃতিত্ব নিয়েছেন। এবার স্বাভাবিকভাবেই ব্যর্থতার দায় তো তাঁকে নিতেই হবে! কিন্তু দায় স্বীকার করলেও সরকার পড়বে বিপদে, সব মিলিয়ে বিজেপির এখন শিয়রে সংকট।

রাজনীতি নিয়ে যাঁরা তাত্বিক চর্চা করেন তাঁদের মতে, নোটবন্দী বা জিএসটি-র সময়েও দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণির সামনে মোদি সরকার এক আদর্শের গাজর ঝুলিয়ে রাখতে পেরেছিল, মানুষকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিল ‘ক্ষুদ্র ব্যক্তি স্বার্থের ওপরে উঠে আমাদের দেশপ্রেম দেখানোর এই হলো আদর্শ সময়’- স্বাভাবিক ভাবেই মানুষ তখন মোদীর পাশেই থেকেছেন আদর্শগত কারণে।

বিশেষত নোটবন্দীর সময় দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই এবং আপাত ভাবে ধনী সম্প্রদায়ের সঙ্গে মধ্যবিত্তের লড়াইয়ের একটা ‘ন্যারেটিভ’ তৈরি করে দিয়েছিল বিজেপি এবং সাথে দেশপ্রেমের দায়িত্ব অর্থাৎ ব্যাপারটা এরকম দাঁড়িয়েছিল যে, ব্যক্তি স্বার্থ আপাতত মুলতুবি রেখে আমাদের দেশের ভালো দেখতে হবে তাতেই আমাদের দীর্ঘমেয়াদি ‘ভালো’ হবে।

আরও পড়ুনঃ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে খুঁজে দিন, নিখোঁজ ডায়েরি কংগ্রেস ছাত্র সংগঠনের

‘ঘর ঘর মোদি’ হাওয়ায় তখন মানুষ সামান্য ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু এখন হলো বিপদ, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে তৈরি হওয়া পরিস্থিতিকে কোন আদর্শের ‘ন্যারেটিভ’ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাবে! কোন যুক্তি নেই হাতে! উল্টে, সাথে হাসপাতালে বেড নেই, অক্সিজেন নেই, জীবনদায়ী ওষুধ নেই রয়েছে শুধু হাহাকার আর স্তূপীকৃত মৃতদেহ, ২০২১ সালে দাঁড়িয়ে সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে গণ শবদাহের ছবি।

দেশজোড়া এই হাহাকারের মধ্যেও পশ্চিমবঙ্গের ভোট প্রচারে অঢেল সময় ব্যয় করাও মোদির তথা সরকারের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বলেই মনে করছেন রাজনীতির ওয়াকিবহাল মহল।এছাড়াও করোনা অতিমারীর প্রথম দফায় মোদি সরকার তবলীগ জামাতকে দায়ী করে হিন্দুত্বের ‘ন্যারেটিভ’এর আশ্রয় নিতে পেরেছিল, দ্বিতীয় ঢেউয়ে মেলেনি তেমন সুযোগ বরং সারা বিশ্ব দায়ী করছে কুম্ভ মেলার প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষের জমায়েত এবং নির্বাচনী প্রচারের জমায়েতকে।

কাজেই হিন্দুত্বের আশ্রয় নেওয়ারও অবকাশ নেই এখানে। কার্যত করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংকটে কাঠগড়ায় উঠেছে হিন্দুত্বের ভাষ্য। তাছাড়া গোদের ওপর বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে বিজেপির অসংখ্য নেতা মন্ত্রীর অসংবেদনশীল আচরণ এবং হাস্যকর অবৈজ্ঞানিক মন্তব্য।সামগ্রিকভাবে দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় আত্মনির্ভর ভারতের ভাষণের সাথে মুখ থুবড়ে পড়েছে ‘ব্র্যান্ড মোদি’ ইমেজ। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ মিডিয়া যে পরিমাণ মোদি সমালোচনায় সোচ্চার হয়েছে তা বন্ধ করার আপাত কোন উপায় সরকারের হাতে নেই।

আরও পড়ুনঃ করোনার জেরে ১৭মে পর্যন্ত বাতিল ৩১টি ট্রেন পরিষেবা

তারই সঙ্গে ঘোরতর সমালোচনার মুখে পড়েছে মোদির স্বপ্নের প্রকল্প ‘সেন্ট্রাল ভিস্তা’। এতগুলো ‘নেগেটিভিটির’ মোকাবিলায় পজিটিভ ‘ন্যারেটিভ’ তৈরি করা সত্যিই দুষ্কর হয়ে পড়েছে বিজেপির কাছে। তার ওপর ২০২২ সালে উত্তর প্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন এদিকে উত্তর প্রদেশের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ধরাশায়ী হয়েছে বিজেপি। সব মিলিয়ে অশনি সংকেত দেখছেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here