হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরলেন আনন্দপুরের সাহসিনী নীলাঞ্জনা

0
51

শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ

আক্রান্ত এক তরুণীকে দেখে তিনি মহিলা হিসেবে তার কর্তব্য করেছিলেন। আক্রান্ত তরুণীর গাড়িটিকে আড়াআড়ি ভাবে আটকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিলেন সাহসিনী নীলাঞ্জনা চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু গাড়িটি ব্যাক গিয়ারে করে তাকেই ধাক্কা মেরে পালিয়ে যায়।

people | newsfront.co
নিজস্ব চিত্র

ওই দুর্ঘটনায় ডান পায়ের হাড় ভেঙে যায় প্রতিবাদী মহিলার। সেই সাহসিনী নীলাঞ্জনাকেই ৮ দিন পর ছুটি দিল হাসপাতাল। যদিও ৪ মাস এখন তিনি হাঁটতে পারবেন না।প্রসঙ্গত, আনন্দপুরের ওই ঘটনায় আক্রান্ত তরুণীকে উদ্ধার করার পর পুলিশকে ওই তরুণী প্রাথমিক ভাবে জানান, সোশ্যাল মিডিয়ায় একজন অজানা অচেনা যুবকের সঙ্গে অ্যাডভেঞ্চারে বেরিয়ে তিনি বিপদে পড়েন।

doctor | newsfront.co
নিজস্ব চিত্র

এমনকি যুবকের নামও ভুল বলেন ওই তরুণী। কিন্তু ঘটনার তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, তারা দুজনেই একে অপরকে ৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে চিনতেন এবং তাদের বিয়ে হবার কথা ছিল। কিন্তু লকডাউনের কারণে তরুণীর মা জলপাইগুড়ি থেকে আসতে না পারায় সেই নিয়ে দুজনের মধ্যে টানাপোড়েন শুরু হয়। তা নিয়ে কথা বলতেই তরুণী ওই যুবকের সঙ্গে দেখা করেন। আর ঝামেলা মিটমাট হওয়ার বদলে দুজনের মধ্যে গাড়িতে মারপিট ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়।

আরও পড়ুনঃ মঙ্গলবারে আর বসবে না হাওড়ার শতাব্দী প্রাচীন মঙ্গলাহাট

ঠিক সেই সময়ে স্বামীর জন্মদিন সেলিব্রেশন করে স্বামী এবং মেয়েকে নিয়ে ফিরছিলেন আনন্দপুরের সাহসিনী নীলাঞ্জনা চট্টোপাধ্যায়। তিনি একজন তরুণীকে আক্রান্ত হতে দেখে তার স্বাভাবিক কর্তব্যে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু পরিস্থিতি বিগড়ে যাওয়ায় তরুণীর হবু স্বামী অভিষেক ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে এবং তার ফলেই দুর্ঘটনায় রীতিমতো আহত হন নীলাঞ্জনা। এমনকি সঠিক সময় মাথা না সরিয়ে নিলে নীলাঞ্জনার মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারতো বলে দাবি করেছেন তার স্বামী দীপ শতপথী।

ঘটনার পর নীলাঞ্জনাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং আক্রান্ত তরুণী তার হবু স্বামীর বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। আহত নীলাঞ্জনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান মুখ্যমন্ত্রী নিজে এবং তার চিকিৎসার খরচ নেয় রাজ্য সরকার। কিন্তু পরে পুলিশি তদন্তে যখন গোটা বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়, তখন সমস্ত কিছু জানতে পেরে হাসপাতালের শয্যায় শুয়েই নীলাঞ্জনা বলেন, ‘আক্রান্ত এবং অভিযুক্তের মধ্যে কি সম্পর্ক ছিল সেটা আমি জানি না তবে ওর জায়গায় অন্য যে কোন মেয়ে থাকলে আমি সেটাই করতাম যেটা আমি করেছি।’ স্ত্রীর বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়েছেন তার স্বামীও।

আরও পড়ুনঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মীয় পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের নতুন পর্যবেক্ষক

আর সেই দিন থেকেই হাসপাতালে চিকিৎসা মোটামুটি সুস্থ হয়ে রবিবার দুপুরে বাড়ি ফিরে গেলেন সেই প্রতিবাদী মহিলা নীলাঞ্জনা চট্টোপাধ্যায়। হাসপাতাল থেকে বেরোবার সময় তার কাজকে সম্মান জানিয়ে সমবেত সমস্ত চিকিৎসক এবং নার্সরা তার সঙ্গে গলা মেলালেন, ‘হও করমেতে বীর, হও ধরমেতে বীর, হও উন্নত শির, নাহি ভয়।’ স্ট্রেচারে শুয়ে শুয়ে সেই গান গাইলেন নীলাঞ্জনাও। কারণ তার মতো প্রতিবাদীরা আছেন বলেই এখনও যে কলকাতা শহর অনেক বেশি সুরক্ষিত।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here