নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতাঃ
করোনাভাইরাসে আতঙ্ক নয় , গোমূত্র পান নয়, সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশের সকল মানুষকে স্বাভাবিক জীবনযাপন করার আবেদন করছে ব্রেকথ্রু সায়েন্স সোসাইটি। আজ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বিশ্বজুড়ে লক্ষাধিক। ভারতবর্ষে বিদেশিসহ এই সংখ্যা আজকের দিনে ১৩৭।
৩১ শে ডিসেম্বর ২০১৯ এ চীনের ওহান প্রদেশে বিশেষ ধরনের জ্বর লক্ষ্য করা যায়। জানা যায়, একটি নতুন রকম সংক্রামক ভাইরাস রোগটির কারণ, যার নাম রাখা হয় কোভিড-১৯।
এই ভাইরাসটি করোনাভাইরাস গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত, যার মধ্যে সাধারণ সর্দিকাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, সারস, ইত্যাদি রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাসগুলিও আছে। এখনো পর্যন্ত পাওয়া বৈজ্ঞানিক তথ্য অনুযায়ী এই ভাইরাসের গঠন পুরনো করোনাভাইরাসগুলির থেকে আলাদা। এই নতুন ভাইরাসের উদ্ভব প্রকৃতিতে ঘটা স্বাভাবিক মিউটেশনের ফলে হতে পারে, আবার অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে কৃত্রিমভাবে ঘটানো মিউটেশন থেকেও হতে পারে। প্রকৃত সত্য পরে জানা যাবে।
বর্তমানে বিশ্বজুড়ে গবেষণা চলছে এই ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের কিভাবে চিকিৎসা করা যায়। কিন্তু ভাইরাসটি নতুন হওয়ায় এখনো পর্যন্ত কোনো ঔষধ আবিষ্কার হয়নি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) সহ বিভিন্ন বিভিন্ন সংস্থা করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে কিছু বিশেষ বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। জানা গেছে আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির নির্গত তরল-কণা থেকেই সংক্রমণ হয়। এই তরলকণা আসবাবপত্রে পড়লে তার মধ্যে ভাইরাস দীর্ঘকাল বেঁচে থাকতে পারে। সেখানে কোনো সুস্থ ব্যক্তি স্পর্শ করলে তার হাতে, এবং তা থেকে চোখ-মুখ-নাক দিয়ে শরীরে প্রবেশ করতে পারে। তাই বারবার সাবানজলে হাত ধুয়ে পরিষ্কার রাখাই সংক্রমণ রোখার প্রধান মাধ্যম।
আরও পড়ুনঃ রবিবার জনতা কারফিউ ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর
আক্রান্ত রোগীকে চিহ্নিত করে অন্য মানুষের সংসর্গ থেকে আলাদা করে রেখে এই ভাইরাস সংক্রমণ বন্ধ করা যায়। আশার কথা, এই রোগে মৃত্যুর হার খুবই কম, মাত্র ৩.৪%। টিবি, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গি, ইত্যাদি পরিচিত রোগগুলির তুলনায় অনেক কম। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শরীরের স্বাভাবিক রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাতেই নিরাময় হচ্ছে। তাই আতঙ্কগ্রস্ত হবার কোনো কারণ নেই।
কিন্তু প্রচার-মাধ্যমে লাগাতার প্রচারের ফলে ( বিশেষ করে সোশ্যাল মাধ্যমে ) মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হচ্ছে। এরই সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বিপুল মুনাফা লুটছে।
সাধারণ মাস্ক, যা বাজারে আগে ন্যূনতম মূল্যে পাওয়া যেত, এখন তার দাম আকাশছোঁয়া। কিছু সংখ্যক ভন্ড ও প্রতারক গোষ্ঠী সাধারণ মানুষকে বোঝাচ্ছে গোমূত্র পান ও গোবর-জলে স্নান করলে করোনাভাইরাস কাছে ঘেঁসে না। কিছু হিন্দুত্ববাদী সংস্থা গোমুত্র পার্টির ব্যবস্থাও করছে।
অথচ চিকিৎসক বা মেডিকেল সাইন্সের গবেষকরা একবাক্যে বলছেন, গবাদিপশুর মলমূত্র মানুষের শরীরে উপকারে তো লাগেই না বরং বহু ক্ষেত্রে ক্ষতি করে। গতকাল এক ব্যক্তিকে গোমূত্র পানের করনে অসুস্থতার খবর প্রায় সব সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এমনকি সরকারি দপ্তর ‘আয়ুষ’ কোনো ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ছাড়াই নানা আয়ুর্বেদিক, ইউনানি, ও হোমিওপ্যাথিক ওষুধ প্রয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন। ওষুধের দোকানগুলিও এই অবিজ্ঞানের কারবারে মুনাফার গন্ধ পেয়ে এসব ওষুধ বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিক্রি করছে। আতঙ্কিত মানুষ কিনছেনও।
ব্রেকথ্রু সায়েন্স সোসাইটি চরম উদ্বেগের সাথে এই ধরনের অপপ্রচার এবং অবৈজ্ঞানিক পন্থার অবলম্বন ও অন্ধবিশ্বাস প্রচারের তীব্র নিন্দা করছে। ব্রেকথ্রু সায়েন্স সোসাইটি পশ্চিম বঙ্গ চ্যাপ্টারের সহ-সম্পাদক ও টেকনো ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. নির্মল দুয়ারী সাধারণ মানুষকে করোনা আতঙ্কে বিভ্রান্ত না হতে অনুরোধ করে বলেন, এ রাজ্যে এই রোগ নির্ধারণের জন্য রক্তপরীক্ষার ব্যবস্থা প্রয়োজনের তুলনায় অতি অপ্রতুল।
ফলে অজ্ঞানতাবশত ব্যাপকভাবে রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। আমরা দাবি করছি, আরও ব্যাপক সংখ্যক মানুষের রোগ-পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে বিদেশ এবং আক্রান্ত অঞ্চল থেকে আসা সমস্ত মানুষেরই পরীক্ষা করা ও প্রয়োজনে আলাদা রাখা সম্ভব হয়। আমরা ব্রেকথ্রু সায়েন্স সোসাইটির পক্ষ থেকে মানুষকে সচেতন করার জন্য ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী প্রচার করছি এবং মানুষকে অনুরোধ করছি করোনাভাইরাস নিয়ে অহেতুক আতঙ্কগ্রস্ত না হয়ে সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে সুস্থ স্বাভাবিক দৈনন্দিন জীবন নির্বাহ করুন।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584